পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৮৬
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ

আরম্ভ করেন। ১৮৩২ সালের প্রারম্ভে তাহার পিতা তাহাকে টোল চতুষ্পাঠী হইতে লইয়া কলিকাতা সংস্কৃত কলেজে ভৰ্ত্তি করিয়া দেন। ১৮৩২ সাল হইতে ১৮৪৫ সাল পর্য্যন্ত তিনি প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হইয়া সংস্কৃত কলেজে যাপন করেন। কালেজ হইতে উত্তীর্ণ হইয়া ঐ কালেজের লাইব্রেরিয়ানের পদ প্রাপ্ত হন। তৎপরে ১৮৪৫ সালে ব্যাকরণের অধ্যাপকের পদে নিযুক্ত হন। ক্রমে ক্রমে পদোন্নতি ও বেতনের vউন্নতি হইয়। ১৮৭৩ সালের জুলাই মাসে কৰ্ম্ম হইতে অবস্থত হন। ইহার পর তিনি ১৮৮৭ সাল পর্য্যন্ত জীবিত ছিলেন। কিন্তু ১৮৭৩ সাল হইতেই র্তাহার স্বাস্থ্য ভগ্ন হয়। দারুণ বহুমূত্র রোগে ধরে। শ্রম কর। তাছার অভ্যাস ছিল; নিষ্কৰ্ম্ম বসিয়া থাকিতে পারিতেন না; বসিয়া থাকাকে ঘৃণা করিতেন; সুতরাং থাটিতে থাটিতে শরীর একবারে ভাঙ্গিয় পড়িল। তদবস্থাতে ১৮৮৬ সালে স্বাস্থ্যলাভের আশায় মধ্য প্রদেশের রেওয়া রাজ্যের অন্তর্গত সাতনা নামক স্থানে গিয়া বাস করিলেন। সেই খানেই ঐ সালের ২২ আগষ্ট র্তাহার দেহান্ত হইল।

 সোমপ্রকাশই ই হার প্রধান কীৰ্ত্তি; সোমপ্রকাশই ইহাকে বঙ্গ সাহিত্যে চিরস্মরণীয় করিয়া য়াখিবে; সুতরাং সোমপ্রকাশের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত দিতেছি।

 ১৮৫৬ সালে হরচন্দ্র দ্যায়রত্ন মহাশয় স্বীয় পুত্র দ্বারকানাথকে সহায় করিয়া একটা মুদ্রা যন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন। করিয়াই তিনি পীড়িত হইয়া পড়েন; এবং অল্প কালের মধ্যেই গতাস্থ হন। ঐ যন্ত্র হইতে দ্বারকানাথের লিখিত রোম ও গ্রীসের ইতিহাস নামক দুই বাঙ্গালা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। উৎকৃষ্ট বাঙ্গালা ভাষাতে লিখিত বৃহৎ ইতিহাস গ্রন্থ উহাই বোধ নহয় প্রথম। যাহা হউক এই দুই ইতিহাস প্রকাশিত হইলে তাহা তদানীন্তন বঙ্গীয় পাঠকগণের দৃষ্টিকে আকর্ষণ করে; এবং দ্বারকানাথের নাম বাঙ্গালা লেখকদিগের মধ্যে পরিচিত হয়। তৎপরে তাহার রচিত বালক-পাঠ্য “নীতিসার,” প্রভৃতি প্রকাশিত হইয়াছে, কিন্তু সোমপ্রকাশের প্রভা সে সমুদয়কে ঢাকিয়া ফেলিয়াছে। শুনিয়াছি সোমপ্রকাশ প্রকাশের প্রস্তাব প্রথমে ঈশ্বরচন্দ্র বিস্তাসাগর মহাশয় বিদ্যাভূষণের নিকট উপস্থিত করেন। সারদা প্রসাদ নামে র্তাহাদের প্রিয় একজন বধির পণ্ডিতকে কাজ যোগান, র্তাহার সুততর উদ্দেশু ছিল। ১৮৫৮ সালে সোমপ্রকাশ প্রথম প্রকাশিত হইল। দ্বারকানাথ সম্পাদকতা ভার ও তাহার যন্ত্র মুদ্রাঙ্কণের ব্যয়ভার গ্রহণ করিলেন।