পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এষ্টাদশ পরিচ্ছেদ।
২৮৯

পাপের প্রতি র্তাহার এমনি ঘৃণা ছিল যে গ্রামের পাপাচারী লোকেরা র্তাহাকে দেখিয়া কাঁপিত। একবার একজন দুশ্চরিত্র পুরুষ একটা গোপ জাতীয়া বিধবাকে বিপথে লইয়া গেল; এবং কিছুদিন পরে তাহাকে অন্তসত্ত্বা অবস্থাতে তাড়াইয়া দিল। বিদ্যাভূষণ মহাশয় ইহা জানিবামাত্র নিজের ব্যয়ে সেই রমণীর দ্বারা আদালতে নালিস উপস্থিত করাইয়া সেই দুশ্চরিত্র পুরুষের নিকট হইতে ঐ নারীয় মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থা করিয়া দিলেন।

 আর একবার একজন শিক্ষিতনামধারা ভদ্রলোক নিজ ধনগমে দৃপ্ত হইয়াপ্রতিবেশবাসিনী কোনও বিধবার কিছু জমি আত্মসাৎ করিবার জন্য তাহার প্রতি বিবিধ প্রকারে অত্যাচার আরম্ভ করেন। একদিন বিদ্যাভূষণ মহাশয় সোমপ্রকাশ লিখিতেছেন এমন সময়ে সংবাদ আসিল যে ঐ ধনী লোকটী সদলে সেই বিধবার বাটীতে প্রবেশ করিয়া তাহাকে প্রস্থার করিতে যাইতেছে। তিনি তৎক্ষণাৎ কলম রাথিয় স্বীয় সহোদর ভ্রাতাকে লইয়া বিধবার গৃহাভিমুখে ধাবিত হইলেন। তিনি তাহার ভবনে প্রবেশ করিয়া স্বহস্তে সেই ধনীর গ্রীবা ধরিয়া বাড়ী হইতে বাহির করিয়া দিলেন। তাহার প্রতি সংক্রম বশতঃ তাহাকে কেহ কিছু বলিতে পারিল না। এইরূপে গ্রামে তিনি দুর্ব্বলের রক্ষক ও সর্ব্বপ্রকার সদনুষ্ঠানের উৎসাহ দাতা রূপে বাস করিতে লাগিলেন।

 বাৰ্দ্ধক্যে একটা বিষয়ের জন্য তাহাকে বড় উদ্বিগ্ন দেখা যাইত। ইংরাজী শিক্ষার প্রভাবে হিন্দুসমাজে ধর্ম্মের শাসন ও ধর্ম্মের উপদেশ রহিত হইতেছে বলিয়া দুঃখ করিতেন। তাহার একটা পুত্র এই সময়ে জপ, তপ, পূজা প্রভৃতিতে কিছু অধিক মাত্রায় মাতিয়া গেল। এমন কি সেজন্য তার জ্ঞান চর্চা, সংসারের কাজ কর্ম্ম প্রভৃতিতে মনোযোগ রহিল না। কেহ সে বিষয়ের উল্লেখ করিয়া দুঃখপ্রকাশ করিলে বিদ্যাভূষণ মহাশয় বলিতেন—'ও শিশু নহে বয়ঃপ্রাপ্ত, ও যাহা আত্মার কল্যাণকর ভাবিয়াছে তাহ করুক, দেশকাল ফুেরূপ দেখিতেছি তাহাতে ও যে অন্যদিকে মতি না দিয়া ধর্ম্মসাধনে মাতিয়া আছে তাহ তাল।' সাধারণ মানুষের ধর্ম্মোপদেশের সুবিধার জন্ত তিনি নিজভবনে হরিসভা করিতে দিয়া কৃথকতা, পাঠ, শাস্ত্রব্যাখ্যা প্রভৃতির ব্যবস্থা করিয়াছিলেন।

 শেষ দশায় শারীরিক অশ্বাস্থ্যনিবন্ধন তিনি সোমপ্রকাশ সম্পাদনে ততটা সময় দিতে পারিতেন না। এই সময়ে কিছুদিন স্বাস্থ্যলাভের উদ্দেখে,কাশীতে গিয়া বাস করেন। তীর্থস্থানের দুরবস্থা পূর্ব্বে কখনও দেখেন নাই।

৩৭