পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
একাদশ পরিচ্ছেদ।
২৯৯

অবিশ্রাস্ত কার্য্যে ব্যস্ততার মধ্যে ডাক্তার সরকারের স্বাস্থ্য ভাল থাকিত না; মধ্যে মধ্যে ইপিকাশী প্রভৃতি রোগে ভগ্ন হইয়া পড়িতেন। তদুপরি চিকিৎসা-সুত্রে কোনও কোনও স্থানে যাওয়াতে ম্যালেরিয়া জরে ধরিজছিল t তাহাতে শেষ দশায় তিনি অতিশয় দুৰ্ব্বল হইয়া পড়িয়াছিলেন। অবশেষে ১৯০৩ সালের শেষভাগ হইতে এক কঠিন রোগে ধরিল। মূত্রাধারে একপ্রকার পীড়ার সঞ্চার হইয়া বড়ই ক্লেশ দিতে লাগিল। ঐ রোগে ১৯০৪ সালের ২৩এ ফেব্রুয়ারি দিবসের প্রাতঃকালে প্রাণবায়ু তাঙ্গর শ্রান্ত ক্লান্ত দেহকে পরিত্যাগকরিয়া গেল। বঙ্গের একটা উজ্জল তার চিরদিনের জঙ্গ অস্ত গেল।

আজারা তাহাতে যে কেবল সাহস ও সত্যপ্রিয়তাই দেখিয়াছিলাম তাহা নহে। এরূপ জ্ঞানাতুরাগী মাহুষ আমরা অল্পই দেখিয়াছি। চিকিৎসাবিদ্যা ও বিজ্ঞান তাহার নিজের স্বোপার্জিত বিশেষ বিদ্যা ছিল; কিন্তু তাহাতে তিনি তৃপ্ত হন নাই; তাহার জ্ঞানীন্তুরাগ সৰ্ব্বতোমুখীন ছিল। সর্বপ্রকার জ্ঞাতব্য বিষয়ে তাহার চিত্তের অভিনিবেশ দৃষ্ট হইত। সদ্‌গ্ৰন্থ সকল ক্রয় করা ও রক্ষা করা, তার একটা বাতিকের মত হইয়া দাড়াইয়াছিল। আমরা তাহার লাইব্রেরি দেখিবার জন্ত মধ্যে মধ্যে র্তাহীর ভবনে যাইতাম। তিনি তাহার জ্ঞানসম্পত্তি দেখাইতে আনন্দলাভ করিতেন। তাইার ভবনে জ্ঞানানুরাগী বন্ধুগণের একটা আড় ছিল। সেখানে বসিলেই অনেক জ্ঞানের কথা শোনা ষাইত। অনুমান করি তিনি যে লাইবেরি রাখিয়া গিয়াছেন তাহার মূলা লক্ষ টাকার অধিক হইবে। ধনী ব্যক্তিরা বিষয় সম্পত্তি রাখিয়া যায়, এই স্বাবলম্বনশীল, স্কুষ্মোন্নতিপরায়ণ দরিদ্রের সন্তান স্কোপার্জিত ধনের চিহ্ন স্বরূপ লক্ষ টাকারও অধিক মূল্যের জ্ঞানসম্পত্তি রাখিরা গিয়াছেন।

বহুদিন সাধুমুখে শুনিয়া আসিতেছি, যাহাদের হৃদয় পবিত্র তাহদের হৃদয়ে ঈশ্বর আবির্ভূত থাকেন। মহেন্দ্রলাল জীবনের সকল পথে, সকল সঙ্কটে, সকল সংগ্রামের মধ্যে, ঈশ্বরের সান্নিধ্য অনুভব করিতেন। যিনি মৃত্যুয় কিছুদিন পূৰ্ব্বে রোগযন্ত্রণার মধ্যে নিম্নলিখিত সংগীত রচনা করিতে পারিয়াছিলেন, তাহার স্বাভাবিক ধৰ্ম্মভাবের বিষয় আর কি বলিব।


পাহাড়ী-কাওয়ালি।

সয় না রোগের ষাতনা আর সয়ন,
কোথায়, নাথ, তোমার অসীম করুণা ৯