পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
৩০৫

ঘোষ প্রভৃতি বেথুন স্কুল কমিটীতে স্থান প্রাপ্ত হন; এবং নারীগণকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নত শিক্ষা দিবার জন্য বেথুন স্কুলে কালেজ বিভাগ খোলা হয়।

 এই সময়ে ব্রাহ্মসমাজের মধ্যে আর এক প্রকার আন্দোলন উপস্থিত হয়। অনেক যুবক সভ্য ব্রাহ্মসমাজের কার্য্যকলাপের মধ্যে নিয়মতন্ত্র প্রণালী স্থাপন করিবার জন্য প্রয়াসী হইলেন। কেশবচন্দ্র সেন মহাশয় নিয়মতন্ত্র-প্রণালীর বড় পক্ষ ছিলেন না। তিনি ইহাকে ভয়ের চক্ষে দেখিতেন; সুতরাং একটা মতবিরোধ ও আন্দোলন উপস্থিত হইল। সভাসমিতিতে ও প্রকাশ্য পত্রাদিতে আন্দোলন চলিল। অবশেষে নিয়মতন্ত্রপক্ষীয়গণ “সমদর্শী” নামে এক মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করিলেন। তদবধি র্তাহাদের নাম ‘সমদৰ্শী' দল হইল। স্ত্রীস্বাধীনতা পক্ষের অনেকে এ দলেও প্রবেশ করিলেন। এই আন্দোলনের চরম ফলে অবশেষে ব্রাহ্মসমাজে দ্বিতীয় গৃহবিচ্ছেদ ঘটে।

 কিন্তু যেজন্য এই কাল বিশেষভাবে স্মরণীয় তাহা অন্য প্রকার। কেশবচন্দ্র সেন মহাশয় বিলাত হইতে আসিয়া আর একটা কার্যে হস্তার্পণ করেন; যেজন্য ব্রাহ্মসমাজ মধ্যে এবং তৎসঙ্গে হিন্দুসমাজ মধ্যেও ঘোর আন্দোলন উপস্থিত হয়; এবং যে আন্দোলনের ফলে বাহিরের লোকের মনে ব্রাহ্মসমাজের শক্তি হ্রাস হইয়া হিন্দুধর্ম্মের পুনরুত্থানের তরঙ্গ উখিত হয়। তাহা এই –

 ইহা পূর্ব্বেই উক্ত হইয়াছে যে ১৮৬১ সাল হইতে ব্রাহ্মদিগের মধ্যে সংস্কৃত পদ্ধতি অনুসারে বিবাহাদি অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়। এতদর্থ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় এক নব বিবাহ-পদ্ধতি প্রণয়ন করেন। তাহাতে হিন্দু-বিবাহ-প্রণালীর সাকারোপাসনা, ও হোম প্রভৃতি অনুষ্ঠান পরিত্যক্ত হইয়াছিল; তদ্ভিন্ন আর সকল বিষয়েই উহা প্রাচীন পদ্ধতির অনুরূপ ছিল।

 যতদিন এক জাতীয় ব্যক্তিগণের মধ্যে বিবাহ-ক্রিয়া সম্পন্ন হইতেছিল, ততদিন ঐ সংস্কৃত পদ্ধতির বৈধতা সম্বন্ধে প্রশ্ন উঠে নাই। কিন্তু ১৮৬৪ সাল হইতে বিভিন্ন জাতীয় ব্যক্তিগণের মধ্যে বিবাহ-সম্বন্ধ স্থাপিত হইতে লাগিল; এবং ১৮৬৬ সাল হইতে উন্নতিশীল ব্রাহ্মদল মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের প্রণীত পদ্ধতি পরিবর্তিত করিয়া আপনাদের বিশ্বাস ও রুচির অনুরূপ এক নুতন পদ্ধতি প্রণয়ন করিলেন। তখন হইতে এই বিচার উপস্থিত হইল ব্রাহ্মসমাজের নবপ্রণীত পদ্ধতি আইন অনুসারে বৈধ কি না? কয়েক বৎসর এই বিচার