পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ।
৩০৭

নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসারে বিবাহ করিতে অনিচ্ছুক। বাহিরের লোকের মনে এই কথা দাড়াইল যে ব্রাহ্মেরা বলিতেছে—“আমরা হিন্দু নই।” আদিসমাজ এই কথার ঘোর প্রতিবাদ করিতে লাগিলেন। উন্নতিশীল ব্রাহ্মদলও আপনাদের পক্ষসমর্থন করিয়া দেখাইতে লাগিলেন যে, তাহারা সামাজিক ভাবে হিন্দু হইলেও তাঁহাদের ধর্ম্ম উদার, আধ্যাত্মিক ও সার্ব্বজনীন একেশ্বর-বাদ; সুতরাং তাহাকে ঠিক হিন্দুধর্ম্ম বলা যায় না।

 এই আন্দোলন চারিদিকে ব্যাপ্ত হইয়া পড়িতে লাগিল। নবগোপাল মিত্র মহাশয়ের জাতীয় সভা এবং শোভাবাজারের রাজা কমলকৃষ্ণ বাহাদুর ও কালীকৃষ্ণ বাহাদুরের প্রতিষ্ঠিত সনাতন ধর্ম্মরক্ষিণী সভা প্রধানরূপে বিবাদ ক্ষেত্রে অবতরণ করিলেন। জাতীয় সভার উদ্যোগে “হিন্দুধর্ম্মের শ্রেষ্ঠতা” বিষয়ে এক বক্তৃতা দেওয়া হইল। আদিসমাজের সভাপতি ভক্তিভাজন রাজনারারণ বসু মহাশর সেই বক্তৃতা দিলেন এবং মহৰ্ষি দেবেন্দ্রনাথ বক্তৃতাতে সভাপতির কার্য্য করিলেন। অচির কালের মধ্যে ঐ বক্তৃতার ভূয়সী প্রশংসা এদেশের সর্বত্র ও অপরদেশেও ব্যাপ্ত হইয়া গেল। সনাতন ধর্ম্মরক্ষিণী সভার সভ্যগণ এবং তাহদের সভাপতি রাজা কালীকৃষ্ণ দেব বাহাদুর এই বক্তৃতার দ্বারা উৎসাহিত হইয়া, হিন্দুধর্ম্মের ও হিন্দু আচারাদির শ্রেষ্ঠতা প্রতিপাদন পূর্ব্বক সুপ্রসিদ্ধ মনোমোহন বসু প্রভৃতির দ্বারা বক্তৃতা দেওয়াইতে লাগিলেন।

 কলিকাতার প্রসিদ্ধ ধনী খেলৎচন্দ্র ঘোষ মহাশয়ের ভবনে সনাতন ধর্ম্মরক্ষিণী সভার অধিবেশন হইত। এই সভা কয়েক বৎসর পূর্ব্বে প্রতিষ্ঠিত হইয়া প্রাচীনশাস্ত্রের ব্যাখ্যা, শাস্ত্রীয় সাত্ত্বিক আচারের প্রতিষ্ঠা, হিন্দু ভাবের পুনরুত্থান, ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের অভ্যর্থনা, প্রভৃতি কার্য্য লইয়া ব্যস্ত রহিয়াছিল। কিন্তু এই সময়েই ইহা একটি প্রবল শক্তিরূপে দাঁড়াইল। ছি! ছি! ব্রাহ্মগণ আপনাদিগকে হিন্দু বলিতে চায় না, এই রব যেমন দেশে উঠিয়া গেল, তেমনি এই সভার উদ্যোগে হিন্দু ধর্মের পুনরুত্থানের প্রয়াস বাড়িতে লাগিল।

 চিন্তা করিয়া যতদূর অনুভব করিতে পারি এই সময় হইতেই দেশের লোকের মনের উপরে ব্রাহ্মসমাজের শক্তি অল্পে অল্পে হ্রাস পাইতে লাগিল। আমরা অনুভব করিতে লাগিলাম কেশবচন্দ্র সেন আর পুর্ব্বের ন্যায় নব্যবঙ্গের অবিসম্বাদিত নেতা রছিলেন না; এবং যুবক দলের তাঁহার দিকে আয় সে প্রবল আকর্ষণ থাকিল না। ওদিকে ব্রাহ্মসমাজের মধ্যেই তাঁহার বিরোধী