পরিবারস্থ বালকগণ তাঁহার ভয়ে অসৎপথে পদার্পণ করিতে সাহসী হইত না। রামতনু লাহিড়ীর জ্যেষ্ঠ সহোদর কেশব চন্দ্র লাহিড়ী বালককালে পাঠে অনাবিষ্ট ছিলেন, সেজন্য পিতামহ কাশীকান্ত লাহিড়ী একদিন তাঁহাকে পদাঘাত করেন। কেশবচন্দ্র লাহিড়ী উত্তরকালে সর্ব্বদা বলিতেন যে সেই পদাঘাতে তাঁহার চেতনা করিয়া দিয়াছিল; তিনি তৎপরে পাঠে নিবিষ্ট হন। কাশীকান্তের দুই সংসার ও দুই পুৎত্র। প্রথম পুৎত্র ঠাকুরদাস লাহিড়ী কিছুকাল রাজা গিরীশচন্দ্রের অধীনে তাঁহার কার্য্যকারকের পদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন; এই সময়ে তিনি লাহিড়ী দেওয়ান নামে পরিচিত হন। তখন তিনি অধিকাংশ সময় কলিকাতাতে বাস করিয়া নদীয়ারাজের প্রতিনিধি স্বরূপ গবর্ণর-জেনেরালের লেভীতে যাওয়া প্রভৃতি সমুদয় রাজকার্য্য সমাধা করিতেন।
কনিষ্ঠ রামকৃষ্ণ অতি ধর্ম্মপরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি শেষ দশায় ধর্ম্মানুষ্ঠান লইয়াই ব্যস্ত থাকিতেন। যে পর্য্যন্ত দেহে বল ছিল স্বপাকে আহার করিতেন। মৃত্যুর কিছু কাল পূর্ব্ব হইতে এই নিয়ম করিয়াছিলেন যে প্রাতে উঠিয়া যে ব্রাহ্মণের মুখ দেখিতেন তাহাকে একটী সিকি দান করিতেন। সূর্য্যোদয়ের অগ্রে স্নানাদি সমাপন করিয়া জপ পূজা প্রভৃতিতে বহু সময় যাপন করিতেন। তৎপরে অত্যাবশ্যক গৃহকর্ম্ম ও অতিথি সৎকারাদিতে অনেক সময় ব্যয়িত হইত। অবশেষে প্রায় অপরাহ্ণ ৪টার সময়ে আহার করিতেন। শেষ দশায় একমাত্র বিধবা কন্যা ভবসুন্দরী পিতার সেবা শুশ্রূষা ও ধর্ম্মানুষ্ঠানের সহায়তা করিতেন।
রামকৃষ্ণের আট পুত্র ও দুই কন্যা জন্মে। পুৎত্রদিগের মধ্যে জ্যেষ্ঠ কেশবচন্দ্র কৃতী হইয়া বিষয় কার্য্যে লিপ্ত হন। ইনি পারস্য় ও ইংরাজী ভাষায় শিক্ষিত হইয়া প্রথমে কলিকাতার সন্নিকটবর্ত্তী আলিপুরে কেরাণীর পদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তৎপরে যশোহরের জজের হেডক্লার্ক বা সেরেস্তাদারের পদে উন্নীত হন। ইঁহাকে ধার্ম্মিক হিন্দু গৃহস্থের আদর্শ বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। ইনি ধর্ম্ম পথে থাকিয়া যে কিছু উপার্জ্জন করিতেন তাহা বৃদ্ধ পিতা মাতার সেবায় ও ভ্রাতা ও ভগিনীগণের পালনে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। রামতনু বাবুর মুখে শুনিয়াছি তাঁহার জ্যেষ্ঠের পিতৃমাতৃ-ভক্তি অপরিসীম ছিল। কৃষ্ণনগর হইতে পিতার পত্র আসিলে, তিনি, তাহা অগ্রে ভক্তিভরে মস্তকে ধারণ করিতেন, তৎপরে খুলিয়া পাঠ করিতেন। কেবল তাহা নহে, কৃষ্ণনগরে লাহিড়ী পরিবারে একথা প্রচলিত আছে যে তিনি মধ্যে মধ্যে বাড়ীতে গিয়া স্বীয় জননীকে দেব-