পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩২৮
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ

 এই ক্ষেত্রে স্বরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় রাজকাৰ্য হইতে অবসর পাইয়া কলিকাতাতে আসিলেন; এবং আনন্দমোহনের২২৫ সহিত মিলিত হইয়। রাজনীতি চর্চাতে নিমগ্ন হইলেন। সেই চর্চার ফলস্বরূপ ১৮৭৬ সালে ভারত-সভা Indian Association) স্থাপিত হইল। আনন্দমোহন তাহার প্রথম সেক্রেটারি হইলেন; এবং বহুদিন সেক্রেটারি ছিলেন।

 ব্রাহ্মসমাজে স্ত্রীস্বাধীনতার আন্দোলন, ও নিয়মতন্ত্র-প্রণালী স্থাপনের আন্দোলন পাকিয়া উঠিতে না উঠিতে ১৮৭৮ সালের মার্চ মাসে সুপ্রসিদ্ধ কুচবিহার বিবাহের আন্দোলন উঠিয়া গেল, এবং উন্নতিশীল ব্রাহ্মদল ভাঙ্গিয়া দুইভাগ হইয়া গেল। স্ত্রীস্বাধীনতার দল, নিয়মতন্ত্রের দল, ও কুচবিহার বিবাহের প্রতিবাদকারী দল, তিন দল মিলিত হইয়া সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ নামে এক নুতন সমাজ স্থাপন করিলেন।

 যাহারা সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ স্থাপন করিলেন, তাহারা আনন্দমোহনকে সারথি করিয়া কার্য্যে প্রবৃত্ত হইলেন। তিনিই ইহার প্রথম সভাপতি হইলেন। তৎপরে ইহার কার্য্যে তাহার যে প্রকার অবিশ্রান্ত মনোযোগ ও অক্লান্ত পরিশ্রম দেখা গেল তাঁহা স্মরণ করিলে আশ্চর্যান্বিত হইতে হয়। মানুষে কি এত খাটিতে পারে? ইহার কার্য্যপ্রণালী বিষয়ে চিন্তা ও বিচার করিতে করিতে এক এক দিন রাত্রি দুইটা বাজিয়া যাইত, আমরা আর বসিতে পারিতাম না, কিন্তু আনন্দমোহনের শ্রান্তি ক্লান্তি ছিল না। আমরা দেখিতাম ইহার কার্য্যে আত্মসমর্পণ করিয়া তিনি আপনার বারিষ্টারি ও ধনাগমের কথা ভুলিয়৷ যাইতেছেন। তাহন হইলে তাহার বিদ্যাবুদ্ধি দিয়া বিচার করিলে, ইহা নিশ্চিত বলা যায় যে তিনি বারিষ্টারির দ্বারা দেশের ধনীদিগের মধ্যে একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তি হইতে পারিতেন। ইহার পরে শিক্ষা বিভাগে তাহার কার্য আরম্ভ হইল। ১৮৭৭ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাহাকে সেনেটের একজন ফেলোরূপে বরণ করিলেন। ১৮৭৮ সালে তিনি সেনেট হইতে সিণ্ডিকেটে গেলেন। সিণ্ডিকেটের মেম্বররুপে দেশের শিক্ষানীতি গঠন বিষয়ে সহায়তা করিরা তিনি সন্তুষ্ট থাকিলেন না। ১৮৭৯ সালে ঐযুক্ত স্বরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কতিপয় ব্রাহ্মবন্ধুর সহিত মিলিয়া তিনি সিটাস্কুল নামে একটী স্কুল স্থাপন করিলেন। ঐ স্কুল ক্রমে সহরের একটা প্রধান কালেজরূপে পরিগণিত হইয়াছে। বস্থজ মহাশয় মৃত্যুর পূর্বকাল পর্যন্ত ঐ কলেজের তত্ত্বাবধান করিয়াছেন।