পিতৃব্যের ভবন হইতে তাড়িত হইতে হইল। তখন র্তাহার জ্যেষ্ঠ সহোদর হাইকোর্টের স্বপ্রসিদ্ধ উকীল কালীমোহন দাস মহাশয় বরিশালে ওকালতি করিতেন। তিনি র্তাহাকে আশ্রয়হীন জানিয়া বরিশালে নিজের নিকটে আহবান করিলেন; এবং তাহার হস্তে মার্কিন সাধু থিওডোর পার্কারের গ্রন্থগুলি অর্পণ করিয়া তাহা পাঠান্তে খ্ৰীষ্টান হওরা বিষয়ে স্থির করিতে অনুরোধ করিলেন। ঐ গ্রন্থগুলি মনোযোগের সাহিত পাঠ করিয়া দুর্গামোহনের মত পরিবর্তিত হইয়৷ গেল। তিনি প্রচলিত খ্ৰীষ্টীর ধৰ্ম্মের ভ্রম দর্শন করিলেন; এবং পার্কারের প্রদর্শিত উদার, আধ্যাত্মিক, ও সাৰ্ব্বভৌমিক একেশ্বর-বাদ অবলম্বন করিলেন।
ইহা হইতেই তাহার চিত্ত ব্রাহ্মসমাজের দিকে আকৃষ্ট হইল। তিনি বরিশালে গিয়া কিছুদিন পরে ব্রাহ্মসমাজ স্থাপন ও ব্রাহ্মধৰ্ম্ম প্রচারের জন্য উৎসাহী হইলেন। যে কথা সেই কাজ; যখন কাজ তখন পুরা পুরা কাজ; আধাআধি নহে; এই যাহার জীবনের মূলমন্ত্র ছিল, তিনি যখন ব্রাহ্মধৰ্ম্ম সাধনে ও ব্রাহ্মধৰ্ম্ম প্রচারে নিযুক্ত হইলেন তখন পুরা পূরি সেই কাজে মন দিলেন। নিজে বন্ধু বান্ধব গণের সহিত মিলিত হইয়া ব্রাহ্মসমাজ স্থাপন করিয়া সন্তুষ্ট না থাকিয়, কলিকাতা হইতে কয়েক জন ব্রাহ্মপ্রচারককে লইয়া গিয়া ব্রাহ্ম ধৰ্ম্ম, প্রচারে প্রবৃত্ত হইলেন; এবং তাহাদের সাহায্যে ব্রাহ্মগণের পত্নীদিগকে শিক্ষিত করিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। অচিরকালের মধ্যে বরিশাল ধৰ্ম্ম ও সমাজ সংস্কারের একটা কেন্দ্র স্বরূপ হইয়া দাড়াইল। নারীগণের শিক্ষা ও স্বাধীনতার জন্ত বরিশাল বঙ্গদেশে প্রসিদ্ধ হইয়া পড়িল। তাহার স্বৰ্গীয়া পত্নী ব্ৰহ্মময়ী সকল কাৰ্য্যে কাহার সহায় ও, উৎসাহদায়িনী হইয়া উঠিলেন। দেখিতে দেখিতে দিন দিন বরিশালে ব্রান্ধের “ও ব্রাহ্ম অনুষ্ঠানের সংখ্যা বাড়িতে লাগিল।
এই কালের মধ্যে দুর্গামোহন এমন এক কার্য্যে অগ্রসর হইলেন, যাহা তাহার আত্মীর বন্ধুরা ও জগ্রে সম্ভব বলিয়া মনে করেন নাই। এই কালের প্রথম ভাগে পুৰ্ব্ববঙ্গের কতিপয় শিক্ষিত ব্যক্তি স্বাক্ষর করিয়া এই প্রতিজ্ঞাতে বদ্ধ হইয়াছিলেন যে র্তাহারা স্বীয় স্ত্রীয় স্থানে ও স্বীয় স্বীর বন্ধুবর্গের মধ্যে হিন্দু বিধবাগণের পুনবিবাহ ক্রিয়া সম্পন্ন করিবার চেষ্টা করিবেন। ঐ স্বাক্ষরকারাদিগের মধ্যে দুর্গামোহন একজন ছিলেন। অপর স্বাক্ষরকারীরা এবিষয়ে কি করিয়াছেন তাহ জানি না; কিন্তু দুর্গামোহনের যে কথা সেই কাজ। তিনি সংকল্প করিলেন যে তাহার এক বন্ধুর সহিত তাহার বিধবা বিমাতার বিবাহ দিবেন।