পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৪৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ।
৩৭১

 ১৮৫০ সালে ২০ বৎসর বয়সে অম্বিকাচরণের মৃত্যু হয়। ভ্রাতার মৃত্যুর পর কালীচরণ কৃষ্ণনগর কালেজেই পাঠ করিতে থাকেন। ১৮৫৭ সালে সেখান হইতে সিনিয়র বৃত্তি পাইয়া কলিকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে আসেন। ১৮৬০ সালে বি, এল, পরীক্ষায় প্রশংসার সহিত উত্তীর্ণ হইয়া কৃষ্ণনগরে ওকালতী কার্য্যে প্রবৃত্ত হন। কিন্তু ওকালতী-কাজ তাঁহার ভাল লাগিল না; তাই সে কাজ পরিত্যাগ করিয়া, ১৮৬১ সালে, ডেপুটী মাজিষ্ট্রেট কর্ম্ম গ্রহণ করেন। ক্রমে পদোন্নতি হইয়া নানাস্থানে বাস করিয়া অবশেষে তিনি কলিকাতার উপনগরে আলিপুরে আসিয়া প্রতিষ্ঠিত হন। সম্মানের সহিত এখানে কয়েক বৎসর থাকিয়া গবর্ণমেণ্ট কর্তৃক নড়াইলের জমিদারীর বিশৃঙ্খলা নিবারণার্থ প্রেরিত হন। সে কার্য্য দক্ষতার সহিত সম্পাদন করিয়া ১৮৮২ সালে আবার কলিকাতাতে প্রতিনিবৃত্ত হন। ১৮৮২ সালে কলিকাতার হারিসন রোড ও খিদিরপুরের ডকের জমি কিনিবার ভার তাঁহার উপরে পড়ে। এ কার্য্য তিনি দক্ষতা সহকারে নিম্পন্ন করিয়া কর্তৃপক্ষের প্রশংসা-ভাজন হন। বিষয় কার্য্যে সর্ব্বসাধারণের প্রীতি ও শ্রদ্ধাভাজন হইয়া ১৮৯২ সালের এপ্রেল মাসে তিনি পেনশন লইয়া কার্য্য হইতে অবসর গ্রহণ করেন; এবং কলিকাতাতে বাস করিতে থাকেন। পেনশন লওয়ার পর অধিক দিন জীবিত থাকেন নাই। ১৮৯৪ সালের ৩রা মে দিবসে কলিকাতার বাটীতে হৃদরোগে ইহার মৃত্যু হয়।

 জীবনের কঙ্কালময় কাঠামাখানা ত এই গেল। কিন্তু তিনি কি মানুষ ছিলেন তাহা সংক্ষেপে বলিবার নহে। তাহা দেখিয়া আমরা সর্ব্বদাই বলিতাম উপযুক্ত গুরুর উপযুক্ত শিষ্য। পঠদ্দশাতেই বারাসতের প্রসিদ্ধ ডাক্তার নবীনকৃষ্ণ মিত্রের কন্যা কুন্তীবালার সহিত ইঁহার বিবাহ হয়। বিদ্যাসাগর মহাশয় এই বিবাহের ঘটক ছিলেন; তিনিই কৃষ্ণনগরে গিয়া পাত্র দেখিয়া আশীর্ব্বাদ করিয়া আসিয়াছিলেন। কুন্তীবালার অল্পবয়সেই পিতৃবিয়োগ হয়। তখন নবীনকৃষ্ণের ভ্রাতা, বঙ্গসমাজে জ্ঞান ও সাধুতার জন্য সুপ্রসিদ্ধ, কালীকৃষ্ণ মিত্র মহাশয়ের প্রতি তাঁহার রক্ষণাবেক্ষণ ও শিক্ষার ভার পড়ে। কালীকৃষ্ণ বাবু নিজে যত্নপূর্বক কুন্তীবালাকে ইংরাজী ও বাঙ্গালা শিক্ষা দিয়াছিলেন। কিন্তু হায়! সুখের সমুদয় উপকরণ যখন বিদ্যমান, তখন এক দুর্ঘটনা ঘটিয়া ১৮৬৯ সাল হইতে চিরজীবনের জন্য কালীচরণ বাবুর পারিবারিক সুখ বিনষ্ট হয়। ঐ সালে অকালে এক পুত্র হারাইয়া কুন্তী উন্মাদ-রোগগ্রস্ত হন। তদবধি কালীচরণ বাবুর গৃহ শাস্তিহীন হইয়া যায়। উন্মাদরোগগ্রস্তা পত্নীকে