পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ।
৩১

হইত। তৎপরে যাত্রা, মহোৎসব, পার্ব্বণ, বা পারিবারিক অনুষ্ঠানাদিতে উপরি কিছু কিছু যুটিত। তাহাতেই গুরুমহাশয়দিগের সংসারযাত্রা নির্ব্বাহ হইত। শুনিতে পাওয়া যায় যে ছেলে লুকাইয়া গুরুমহাশয়কে যত দিতে পারিত, সে তত তাঁহার প্রিয় হইত। সে অনুপস্থিত থাকিলে বা পাঠে অমনোযোগী হইলেও সমুচিত সাজা পাইত না। যে সকল বালক কিছু দিতে পারিত না, তাহাদিগকে সর্ব্বদা সশঙ্ক থাকিতে হইত। উঠিতে বসিতে, নড়িতে চড়িতে, গুরুমহাশয়ের বেত্র তাহাদের পৃষ্ঠে পড়িত। হাত ছড়ি, লাড়ুগোপাল, ত্রিভঙ্গ প্রভৃতি সাজার বিবিধ প্রকার ও প্রণালী ছিল। পাঠশালে আসিতে বিলম্ব হইলে হাত ছড়ি খাইতে হইত; অর্থাৎ আসনে বসিবার পূর্ব্বে গুরুমহাশয়ের সমক্ষে দক্ষিণ হস্তের পাতা পাতিয়া দাঁড়াইতে হইত, অমনি সপাসপ্‌, পাঁচ বা দশ ঘা বেত তদুপরি পড়িত। এই গেল হাত ছড়ি। লাড়ুগোপাল আর এক প্রকার। অপরাধী বালককে গোপালের ন্যায়, অর্থাৎ চতুস্পদশালী শিশুর ন্যার দুই পদ ও এক হস্তের উপরে রাখিয়া তাহার দক্ষিণ হস্তে একখানি এগার ইঞ্চ ইট বা অপর কোন ভারি দ্রব্য চাপাইয়া দেওয়া হইত; হাত ভারিয়া গেলে, বা কোনও প্রকারে ভারি দ্রব্যটী স্বস্থানভ্রষ্ট হইলে তাহার পশ্চাদ্দেশের বস্ত্র উত্তোলন পূর্ব্বক গুরুতর বেত্র প্রহার করা হইত। ত্রিভঙ্গ আর এক প্রকার। শ্যামের বঙ্কিম মূর্ত্তির ন্যায় বালককে এক পায়ে দণ্ডায়মান করিয়া হস্তে একটী গুরু দ্রব্য দেওয়া হইত; একটু হেলিলে বা বারেক মাত্র পা খানি মাটীতে ফেলিলে অমনি পশ্চাদ্দেশের বস্ত্র তুলিয়া কঠিন বেত্রাঘাত করা হইত। কোন কোনও গুরু ইহার অপেক্ষাও গুরুতর শাস্তি দিতেন; তাহাকে চ্যাংদোলা বলিত। কোনও বালক প্রহারের ভয়ে পাঠশাল হইতে পলাইলে বা পাঠশালে না আসিলে এই চ্যাংদোলা সাজা পাইত। তাহা এই, তাহাকে বন্দী করিবার জন্য চারি পাঁচ জন অপেক্ষাকৃত অধিক-বয়স্ক ও বলবান ছাত্র প্রেরিত হইত। তাহারা তাহাকে ঘরে, বাহিরে, পথে, ঘাট, বা বৃক্ষশাখায়, যেখানে পাইত সেখান হইতে বন্দী করিয়া আনিত। আনিবার সময় তাহাকে হাঁটিয়া আসিতে দিত না, হাতে পায়ে ধরিয়া ঝুলাইয়া শানিত। তাহার নাম চ্যাংদোলা। এই চ্যাংদোলা অবস্থাতে বালক পাঠশাল উপস্থিত হইবামাত্র গুরুমহাশয় বেতহস্তে সেই অসহায় বালককে আক্রমণ করিতেন। এই প্রহার এক এক সময়ে