পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩২
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

ঐত গুরুতর হইত যে হতভাগ্য বালক ভয়ে বা প্ৰহারের যাতনায় মলমূত্ৰ ক্লিয় হইয়া যাইত।

১৮৩৪ সালে লৰ্ড উইলিয়াম বেটিঙ্ক, মিষ্টর উইলিয়াম এডামকে দেশীয় শিক্ষার অবস্থা পরিদৰ্শনাৰ্থ নিয়োগ করিয়াছিলেন। তিনি পাঠশালা সকলের অবস্থা পরিদৰ্শন করিয়া গবৰ্ণমেণ্টের নিকট একটী রিপোৰ্ট প্রেরণ করেন। তাহাতে প্ৰায় চতুৰ্দশ প্রকার সাজা দিবার প্রণালীর উল্লেখ দেখা বার। তাহার অনেকগুলির বিবরণ শুনিলে হৃৎকম্প উপস্থিত হয়। বালক মাটীতে বসিয়া নিজের এক থানা পা নিজের স্কন্ধে চাপাইয়া থাকিবে; বািনজের উরুর তল দিয়া নিজের হাত চালাইয়া নিজের কাণ ধরিয়া থাকিবে; বা তাহার হাত পা বাধিয়া পশ্চাদ্দেশের বস্ত্ৰ তুলিয়া জলবিছুটী দেওয়া হইবে, সে চুলকাইতে পারিবে না; বা একটা থলের মধ্যে একটা বিড়ালের সঙ্গে বালককে পুরিয়া মাটীতে গড়ান হইবে এবং বালক বিড়ালের নখর ও দংষ্ট্ৰাঘাতে ক্ষত বিক্ষত হইবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। লাহিড়ী মহাশয়ের বাল্যকালেও যে এই সকল সাজা প্ৰকার ও প্ৰণালী ছিল তাহাতে সন্দেহ নাই।

ইহা কিছুই আশচৰ্য্যের বিষয় নয় ধে শাস্তির ভয়ে বালকেরা অনেক সময়ে পাঠশালা হইতে পলাইয়া অত্যন্ত ক্লেশ সহ কারিত। দেওয়ান কাৰ্ত্তিকেয় চন্দ্ৰ স্নায় ইহার কয়েক বৎসরের পরের কথা এইরুপ বৰ্ণন করিয়াছেন: “আমার সমবয়স্ক স্বসম্বন্ধীয় কয়েকজন বালক কৃষ্ণনগরে চৌধুরীদিগের বাটীর পাঠশালায় শিক্ষা করিতেন। এই পাঠশালায় আমার এক পিসতুতো ভ্ৰাতা ভালরাপ শিক্ষা না করাতে সৰ্ব্বদাই দণ্ডিত হইতেন। প্ৰথমে মধ্যে মধ্যে পলাইয়া আমার বাটীতে আসিতেন; কিন্তু গুরু মহাশয়ের দূতেরা গুপ্তভাবে আসিয়া তাহাকে ধৃত করিয়া লইয়া যাইত। কাহারও বাটীতে রক্ষা পাইবার অনুপায় দেখিয়া একদা এক বার ওয়ারি ঘরের মাচার উপরে অনাহারে এক দিবা ও এক রাত্ৰি থাকেন। একদা শীতকালে মাঠে অড়হরের ক্ষেত্ৰ মধ্যে যাপন করেন। ঐ গুরু-মহাশয় চৌধুরীবাটীর এক বালকের গণ্ডদেশে এরুপ বেত্ৰাঘাত করেন যে তাহার চিহ তাহার যেীবনাবস্থা পৰ্য্যন্ত ছিল।

লাহিড়ী মহাশয় তাহার দৈনিক লিপিতে এক স্থানে লিথিয়াছেন যে তিনিও এক এক সময়ে প্ৰহারের ভয়ে পাঠশালা হইতে পলাইতেন; সেজন্য তাহার' পিতা গভীর মনোবেদনা পাইতেন। কেবল তাহা নহে, তাহার সহাধ্যায়ীদিগের মধ্যে একটি বালক ছিল, সে অল্প বয়সেই চুরি বিদ্যাতে