পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
তৃতীয় পরিচ্ছেদ।
লাহিড়ী মহাশয়ের কলিকাতা আগমন ও বিদ্যারম্ভ।
কলিকাতার তদানীন্তন অবস্থা ও ইহার প্রধান ব্যক্তিগণ।

 ১৮২৬ খ্ৰীষ্টাব্দে লাহিড়ী মহাশয় কলিকাতার দক্ষিণ উপনগরবর্ত্তী কালীঘাটের সন্নিকটস্থ চেতলা নামক স্থানে নিজ জ্যেষ্ঠের বাসাতে আসিলেন। জ্যেষ্ঠ কেশবচন্দ্র ভ্রাতার শিক্ষার কিরূপ বন্দোবস্ত করেন, এই চিন্তাতে উদ্বিগ্ন হইতে লাগিলেন। তখন চেতলার সন্নিকটে ইংরাজী স্কুল ছিল না। কেশবচন্দ্র ভ্রাতাকে উত্তমরূপ ইংরাজী শিক্ষা দিবার সংকল্প করিয়াছিলেন, তাহা করিতে হইলে তাহাকে কলিকাতাতে রাখা চাই, কিন্তু এই সুকুমার বয়সে সহোদরকে কোথায় রাখেন, কে বা তাহাকে ইংরাজী স্কুলে প্রবিষ্ট করিয়া দেয়, কিসেই বা তাহার থাকিবার ও শিক্ষার ব্যয়াদি নিৰ্ব্বাহ হয়, এই সকল ভাবিয়া দারুণ দুশ্চিন্তায় কালযাপন করিতে লাগিলেন।

 কিন্তু এই সময়ে তিনি একটী কাজ করিয়াছিলেন, যাহার ইষ্টফল লাহিড়ী মহাশয়ের পরজীবনে দেখা গিয়াছিল। এরূপ অনুমান করা যায় কলিকাতাতে আসিবার পূর্ব্বেই তৎকালপ্রচলিত রীতি অনুসারে রামতনু কিছুদিন পারস্য ভাষা শিক্ষা করিয়াছিলেন, এবং স্বল্পরূপ ইংরাজী পড়িতে ও লিখিতে শিখিয়া আসিয়াছিলেন। কেশবচন্দ্র প্রাতে ও সন্ধ্যাতে শিক্ষকের ভার গ্রহণ করিয়া কনিষ্ঠের এই দুই বিষয়ের উন্নতিসাধনে প্রবৃত্ত হইলেন। তিনি নিজে পারসী ও আরবীতে পারদর্শী ছিলেন; সুতরাং সে বিষয়ে যথেষ্ট সাহায্য করিতে লাগিলেন। দ্বিতীয়তঃ খাতা বাঁধিয়া দিয়া ভ্রাতাকে মনোযোগ সহকারে ইংরাজী লিখাইতে লাগিলেন। উত্তরকালে কেহ লাহিড়ী মহাশয়ের হাতের ইংরাজী লেখার প্রশংসা করিলে তিনি বলিতেন “দাদা এই লেখার ভিত্তিস্থাপন করিয়াছিলেন।”

 এইরূপে কেশচন্দ্রের অবিশ্রাস্ত যত্ন ও পরিশ্রমের গুণে নবাগত সহোদরের শিক্ষা এক প্রকার চলিল। কিন্তু তাহ কেশবের মনঃপূত হইত না। কারণ দিবসের অধিকাংশ ভাগ তাহাকে কৰ্ম্মস্থানে থাকিতে হইত, তখন বালক রামতনু বাসায় ভৃত্য বা দাসীর হস্তেই থাকিতেন। চেতলার দাস দাসীগণকে