পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শব্দকথা : বাঙ্গালা ব্যাকরণ } oW) প্রাদেশিকত্বরহিত হইল বটে, কিন্তু সাধারণের বোধ্য হইল না। প্রধানতঃ উহ বিদ্যালয়ের পণ্ডিতদের পাণ্ডিত্যাভিমান স্ফাত করিবার জন্য বর্তমান রহিল। তত:পর র্যাহারা বঙ্গভাষার সংস্কারে প্রবৃত্ত হইয়া বাঙ্গালায় গদ্যসাহিত্যের স্বষ্টি করিয়াছিলেন, র্তাহীদের মধ্যে সংস্কৃত কলেজের পণ্ডিতগণকে অগ্রণী দেখিতে পাই। মহাত্মা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মৃদনমোহন তর্কালঙ্কার, তারাশঙ্কর তর্করত্ন, দ্বারকনাথ বিদ্যাভূষণ, রামকমল ভট্টাচাৰ্য্য, রামগতি ন্যায়রত্ন প্রভৃতির নাম এই ব্যাপারে স্মরণীয় হইয়াছে। ইহাদের অনেকের ভাষায় যে সংস্কৃত শবের বহুল প্রয়োগ হইবে, তাহাতে বিস্ময়ের কারণ নাই । পরবর্তী কালে সংস্কৃত শব্দ প্রয়োগের জন্য এই সকল মনস্বী ব্যক্তি যথেষ্ট বিদ্রুপ ও তিরস্কারের ভাগী হইয়াছেন ; কিন্তু ইহা অস্বীকার করিবার উপায় নাই যে, বৰ্ত্তমান গদ্য-সাহিত্যের ভাষার ইহার জন্মদাতা না হইলেও ভাষার শৈশব কালে বিনয়াধান রক্ষণ ও ভরণের জন্য ইহারাই সৰ্ব্বতোভাধে৯ পিতৃস্থলয় ছিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নাম এতন্মধ্যে অগ্রগণ্য । সাহিত্যের ভাষায় সংস্কৃতশবাবাহুল্য' সম্বন্ধে দুই মত থাকিবারই কথা ; এবং এক পক্ষ অপর পক্ষ কর্তৃক তিরস্কৃত হইবেন, তাহাও অসঙ্গত নহে। কিন্তু একটা কথা আমরা ভুলিয়া যাই। গদ্যরচনায় বাক্যবিন্যাসের ও বাক্যমধ্যে পদবিন্যাসের রীতি, ইংরেজীতে যাহাকে syntax বলে, সেই পদবিন্যাসরীতর সংস্কার এই সকল পণ্ডিতের প্রতিভা হইতেই ঘটিয়াছিল ; এবং এই মাজ্জিত বাক্যবিন্যাস ও পদসন্নিবেশ-রীতি ব্যতীত উত্তর কালে বাঙ্গালায় গদ্যরচন। উৎকৰ্ষ লাভ করিত না। ইহার ক্রটিতেই রাজা রামমোহন রায়ের রচনা হৃদয়গ্রাহী হইতে পারে নাই ; এবং এই জন্যই কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজেন্দ্রলাল মিত্র প্রভৃতির সারগর্ভ সন্দর্ভসকলও সাধারণের নিকট স্থায়ী সমাদর পায় নাই । পক্ষান্তরে টেকচাদ ঠাকুরের ও হতোমের বাঙ্গাল লৌকিক বাঙ্গালা হইতে অভিন্ন ; কিন্তু উহা ও যে সর্বত্র সাহিত্যের বাপাল হইতে পারে না, তাহাও সৰ্ব্ববাধিসম্মতিক্রমে স্থির হইয়া গিয়াছে । উত্তর কালের লেখকগণ মধ্যপথ অবলম্বন করিয়া যে সাহিত্যের ভাষা প্রচলিত করিয়াছেন, তাহাই এখন সৰ্ব্বত্র গৃহত ও আদৃত হইয়াছে। এই মধ্যপথ আশ্রয় করিয়া বাঙ্গালা ভাষার ক্ষমত। যে কত দূর-প্রসারা হইতে পাবে, বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতিভা তাহা প্রতিপন্ন করিয়া গিয়াছে। ফলে সাহিত্যের ভাষা কোন, পথ আশ্রয় করিয়া চলিবে, তাহ কাৰ্য্যতঃ মীমাংসিত হইয়া গিয়াছে ; এ বিষয় লইয়া এখন বাদবিতণ্ডা কেবল পণ্ডশ্রম মাত্র। তবে প্রাণবানের প্রাণের স্মৃত্তি অন্য কাজ না পাইলে ক্রীড়াচ্ছলেও আপনাকে প্রকাশ করিতে চায় ; তাই আমাদের স্বধীগণের পণ্ডিত্য যখন অন্য কোন উদ্দেশ্যে প্রযুক্ত হইবার অবকাশ পায় না, তখন এই ক্রীড়াবিতণ্ডার আশ্রয় লইয়৷ আপনার ক্রীড়া-নৈপুণ্য প্রকাশ করে মাত্র। বর্তমান কালে সাহিত্যের ভাষায় সংস্কৃত শব্দ কিরূপে ও কি পরিমাণে ব্যবহার করিতে হইবে, এ বিষয়ে কাৰ্য্যতঃ যে বিশেষ মতভেদ আছে, তাহা বোধ হয় না ; ফেন না, উভয় পক্ষই