తిఱ রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র তাহা সংস্কৃতের নিকট পাইয়াছে। কতক উত্তরাধিকারস্থত্রে অতি পুরাকাল হইতেই দখল করিয়া আসিতেছে ; কতক আধুনিক কালে ঋণস্বরূপ গ্রহণ করিয়াছে। ঋণ গ্রহণ অদ্যাপি চলিতেছে ও চিরকালই অব্যাহত ভাবে চলিবে ; অব্যাহত ভাবে— কেন না, ইহাতে স্বদও লাগে না, এবং পরিশোধেরও প্রয়োজন নাই ; উত্তমর্ণের দ্বার উন্মুক্ত ; অধমর্ণেরও আকাঙ্ক্ষার সীমা নাই। কিন্তু এই সকল বিশুদ্ধ সংস্কৃত শব্দ ব্যতীত আরও অনেক শব্দ বাঙ্গালা ভাষায় বৰ্ত্তমান, এইগুলিকে খাটি বাঙ্গালা শব্দ বলা যাইতে পাবে । এই সকল শব্দ বাঙ্গালা ভাষার শরীবে অস্থিমজ্জায় সৰ্ব্বত্র বর্তমান। ইহাদিগকে বর্জনের উপায় নাই । বাঙ্গালা লিখিতেই হউক আর বলিতেই হউক, ইহাদিগকে ত্যাগ করিবার উপায় নাই। বরং যে সকল শব্দ বিশেষ্য বা বিশেষণ পদবীপে ব্যবহৃত হয়, তাহাদিগের অনেকটা বর্জন চলিতে পারে ; তাহাদিগের স্থলে সংস্কৃত শব্দ বসতিতে পারা যায়। কিন্তু সৰ্ব্বনামও ক্রিয়াপদের স্থলে কোনই উপায় নাই। এখানে তাহদের আশ্রয় লইতেই হইবে , নতুবা বাঙ্গালা, এমন কি, ‘বিশুদ্ধ' বাঙ্গালাও রচিত হইবে না। “আমি মাছ খাইতেছি”, এ স্থলে মাছ কে মংস্তে ও খাইতেছি’কে ভোজন করিতেছি তে রূপান্ত রত করিয়া ভাযাকে “বিশুদ্ধতর কবা যাইতে না পারে, এমন নহে। কিন্তু এক্ট 'আমি এবং ‘করিতেছি? এই দুয়েব হাত হইতে অব্যহতি লাভের উপায় কোন পণ্ডিতই নির্দেশ করিতে পারিবেন না। কেবল কথাবাৰ্ত্তার সময়েই নহে, বিশুদ্ধ সাহিত্য রচনার সময়েও অব্যাহতির আশা নাই । অতএব বাঙ্গালা ভাষাতে কতকগুলি শব্দ থাকিবেই, যথা, ‘আমি’ ও ‘করিতেছি’ যাহা সংস্কৃতমূলক বটে, কিন্তু সংস্কৃত নহে, যাহ থাটি বাঙ্গাল । এইরূপ থাটি বাঙ্গালা ও খাটি সংস্কৃত শব্দের সমবায়ে আমাদের আধুনিক ভাষা গঠিত হইয়াছে। বাঙ্গালা শবরাশিকে এই দুই প্রধান ভাগে সজাইতে পারা যায়। প্রশ্ন এই যে, এই দুই শ্রেণীর মধ্যে কোন শ্রেণী বিশুদ্ধ’ বাঙ্গালা ? কেহ হয়ত বলিবেন, সংস্কৃত শব্দগুলি বিশুদ্ধ, আর খাটি বাঙ্গাল শব্দগুলি অবিশুদ্ধ। এক শ্রেণীর শব্দ গুলিকে সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসারে সাধিতে পারা যায় , এই হিসাবে উহাবা বিশুদ্ধ বটে। অন্য শ্রেণীর শব্দ সংস্কৃত ব্যাকরণেব নিয়মে সাধিতে পারা যায় না ; এ বিষরে কোন মতদ্বৈধ নাই । কিন্তু এই হিসাবে কি উহার আবশুদ্ধ ? কখনই না । ‘আম’ ও ‘করিতেছি সংস্কৃত শব্দ নহে, কিন্তু বাঙ্গালা ভাষায় উহাদের বিশুদ্ধিপক্ষে কেহ এ পর্য্যন্ত সন্দেহ উপস্থিত করেন নাই ; কেন না, উহাদিগকে বর্জন করিয়৷ কেহই এ পর্য্যন্ত বিশুদ্ধ বাঙ্গালা লিখিতে সমর্থ হন নাই । কাজেই অস’স্কৃত শব্দও বিশুদ্ধ বাঙ্গালায় স্থান পাইতে পারে। সংস্কৃত না হইলেই যে বিশুদ্ধ হয় না, এমন নহে । আবার অন্য পক্ষ বলিবেন, “আমি’ ও ‘করিতেছি? এই দুইটি শব্দই বিশুদ্ধ বাঙ্গালা শব্দ ; ‘মাছ’ ও ‘খাইতেছি? এই দুইটাও বিশুদ্ধ বাঙ্গাল শব্দ। কিন্তু ‘মংস্য’ ও ‘ভোজন' এই দুইটি বিশুদ্ধ বাঙ্গালা নহে। এমন কি, ‘মৎস্য’ ও ‘ভোজন' এই দুই শব বাঙ্গালাই মহে ; উহা বিশুদ্ধ সংস্কৃত শব্দ ; বাঙ্গালা ভাষা সংস্কৃত হইতে
পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১১০
অবয়ব