পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শবকথা : বাঙ্গালা ব্যাকরণ eఫో এখনও নিয়শ্রেণীর লোকের ভাষা ও আরণ্য ও পার্বত্য লোকদিগের ভাষা আলোচনা করিলে অনেক খাটি বাঙ্গাল শব্দের ব্যুৎপত্তি নির্ণীত হইতে পারে। কিন্তু সে চেঃ। এ পৰ্য্যস্ত কেহই করেন নাই । কোন শ্রেণীর শব্দ সংখ্যায় অধিক, তাহাও নিঃসংশয়ে বলা যায় না। দেশজ শব্দের ব্যবহার কেবল লোকমুথেই চলিত, এমন নহে ; সাহিত্যের ভাষাতেও উহার প্রচুর পরিমাণে স্থান পাইয়াছে, পাইতেছে ও পাইবে । সাহিত্যে উহাদের প্রশ্রয় দেওয়া উচিত কি না, সে স্বতন্ত্র কথা ; কিন্তু বুছ দেশজ শব্দ যে সাহিত্যে স্থান পাইয়াছে, তাহা সত্য কথা, এবং তাহদের প্রবেশ নিষেধেরও উপায় দেখি না। ফলে আমাদের সাহত্যের ভাষা ও কথোপকথনের ভাষা উভয়েই থাটি সংস্কৃত ও থাটি বাঙ্গাল শব্দ বিদ্যমান। কোথাও অধিক, কোথাও অল্প । আবার খাটি বাঙ্গাল শবের মাধ্য কতক সংস্কৃতমূলক, এবং কতক দেশজ ; এবং এই উভয় শ্রেণীর বাঙ্গাল শব্দই সাহিত্যের ভাষায় ও চলিত ভাষায় ব্যবহৃত হয় ; কোথাও অধিক, কোথাও অল্প। তদ্ব্যতীত প্রাদেশিক বাঙ্গালা শব্দের প্রাধান্য চলিত ভাষায় অধিক ; সাহিত্যের ভাষায় উহাদের প্রাধান্য নাই, থাকা উচিতও নহে। আধুনিক কালের যে সকল গ্রন্থকার সাবধান, তাহারা সাধ্যমত প্রাদেশিকত্ব বর্জনেবই চেষ্টা করেন। কেন না, এ-কালে সকলেই সমস্ত দেশের জন্য লিখিয়া থাকেন, প্রদেশ-বিশেষের জন্য কেহ লেখেন না । সাহিত্যের ভাষায় ও লৌকিক ভাষায় আর একটা পার্থক্য আছে, উহা উচ্চারণ লইয়া । যেমন কৰি তেছি’, ‘খাইতেছি, এই দুইটি খাটি বাঙ্গালা ক্রিয়াপদ ; ইহারা সাহিত্যে ঐ আকারে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু কথা কহিবার সময় আমরা সুবিধামত উচ্চারণের জন্য ‘করছে ‘খাচ্ছি প্রভৃতি বলিয়া থাকি । এই উচ্চারণ আবার প্রদেশভেদে বিভিন্ন ; অতএব সাহিত্যের ভাষায় এই প্রাদেশিকত্বের বর্জনই প্রার্থনায়। দ্বিাবধ বাঙ্গালার আলোচনা করিতেছি,—সাহিত্যের বাঙ্গাল ও লৌকিক বাঙ্গালা। লৌকিক বাঙ্গালা অর্থে লোকমুখে প্রচলিত কথাবাৰ্ত্তার বাঙ্গালা। দেখা গেল, উভয় ভাষাতেই যথেঃ মিল আছে, আবার কতক পার্থক্যও আছে। সাহিত্যের ভাষায় খাটি সংস্কৃত শব্দ যত ব্যবহৃত হয়, লৌকিক ভাষায় তত হয় না। সংস্কৃতমূলক ও দেশজ, উভয়বিধ খাট বাঙ্গাল শব্দেরই লৌকিক ভাষায় প্রাধান্য আছে। তদ্ব্যতীত প্রাদেশিক শব্দের ও প্রাদেশিক উচ্চারণের ভেদ লৌকিক ভাষায় যতটা বর্তমান, সাহিত্যের ভাষায় ততটা নাই, এবং থাকা উচিতও নহে । উভয় শ্রেণীর শব্দ ভাষায় সমানভাবে ব্যবহৃত হয় না। খাটি সংস্কৃত শব্দ আধুনিক বাঙ্গালায় সাহিত্যের ভাষায় ও সম্ভবতঃ কথাবাৰ্ত্তাব ভাষাতেও পূর্বাপেক্ষ বহুতর পরিমাণে ব্যবহৃত হইতেছে, সন্দেহ নাই। কেহ কেহ বলিবেন, ইহা দুঃখের বিষয়। অনেকে আবার বলিবেন, ইহা সুখের বিষয়। আমিও বলি, ইহা সুখের বিষয়। যাহাই হউক, সে মুখ-দুঃখের কথা তুলিবার প্রয়োজন নাই। আ নিক বাঙ্গালায় থাটি সংস্কৃতের ব্যবহার বাড়িয়াছে, ইহা প্রকৃত কথা ; ইহাতে ও কাহারও সদেহ নাই। প্রাচীন বঙ্গাল সাহিত্যে খাটি সংস্কৃত শব্দের এত প্রচলন ছিল না, ইহ। সত্য, কখ ।