পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শঙ্কাকথা : বাঙ্গালী ব্যাকরণ }} & আলোচনা করিব কি না, ইহা প্রাসঙ্গিক বটে। এত ক্ষণ পরে যে একটি প্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণার অবসর পাইলাম, ইহাও সৌভাগ্য বলিয়া মনে করি । পণ্ডিত শরচ্চন্দ্র শাস্ত্রী মহাশয় ‘ভারতী’ পত্রে বলিয়াছেন, এই সকল শব্দগুলির অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের আলোচিত শব্দগুলিব অধিকাংশই অতি অকিঞ্চিৎকর ; কেন মা, সাধু ভাষায় ও সাধু সাহিত্যে উহাদের ব্যবহার দোষাবহ ; কাজেই উহাদের আলোচনা নিম্প্রয়োজন। পরবর্তী সংখ্যার ‘ভারতী’তে শ্ৰীযুক্ত সতীশচন্দ্র বিদ্যাভূষণের ন্যায় নানাভাষাবিং পণ্ডিতও বলিয়াছেন, চলিত ভাষার ব্যাকরণ রচনা নিম্প্রয়োজন ; কেন না, ব্যাকরণ রচনা দ্বারা চলিত ভাষাব স্বাধীন গতি ও উন্নতি রুদ্ধ হইতে পারে। ফলে দুই জন স্থবিজ্ঞ পণ্ডিত দুই বিভিন্ন হেতুবাদ দর্শাইয়া বলিতেছেন, চলিত বাঙ্গালার অর্থাৎ লৌকিক বাঙ্গালার ব্যাকরণ আলোচনা আবশ্বক নহে। রবি বাবু যে দিন পরিষৎ-সভায় কৃৎ ও তদ্ধিত বিষয়ক প্রবন্ধ পাঠ করেন, সে দিন শ্ৰীযুক্ত ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় কতকটা আভাসে বলিয়াছিলেন যে, এইরূপ ব্যাকবণ আলোচনার এখনও সময় আসে নাই। ইহাকে একটা তৃতীয় হেতুবাদ বলিয়া গ্রহণ করা যাইতে পাবে। এই ত্ৰিবিধ হেতুবাদের আলোচনা আবশ্যক । কিন্তু তৎপূৰ্ব্বে ব্যাকবণ শব্দের অর্থ কি, তাহ স্পষ্টভাবে বুঝা আবশ্বক বোধ করিতেছি। কেন না, ব্যাকরণ শাস্থেব উদ্দেশ্য কি, সেইটা নিৰ্দ্ধারিত হক্টলে বিচারের পথ অনেকটা সোজা হইতে পারে। ব্যাকরণ শব্দেব অর্থেও একটু গোল আছে । মহামহোপাধ্যায় শাস্ত্রী মহাশয় দেখাইয়াছেন, ব্যাকরণ শব্দের প্রকৃত অর্থ পদের বিশ্লেষণ ; ব্যাকরণ শাস্ত্র প্রত্যেক পদকে ব্যবচ্ছেদ দ্বারা দেখাইতে চাহেন, কিরূপে কোন মূল ধাতু হইতে পদটি উৎপন্ন হইয়াছে। অর্থাং উহার উপাদানগুলি কি প্রণালীতে বিন্যস্ত হইয়া উহার শরীরটি গঠিত হইয়াছে, তাহ দেখানই ব্যাকরণের উদ্দেশ্য । ইংরেজীতে যাহাকে Etymology বলে, ব্যাকরণ শব্দের প্রকৃত অর্থ তাহাই । কিন্তু আজকাল ব্যাকরণ শব্দ আবও ব্যাপক অর্থে বাঙ্গালায় ব্যবহৃত হয় ; উহ! ইংরেজী গ্রামার শব্যের প্রতিশব্দস্বরূপে ব্যবহৃত হইতেছে ; তন্মধ্যে Etymology ব্যতীত Syntax বা বাক্য-নিৰ্ম্মাণ-প্রকরণ, ছন্দঃপ্রকরণ, এমন কি, অলঙ্কারপ্রকরণ পৰ্য্যন্ত স্থান পাইয়া থাকে। আমরা ব্যাকরণ শব্দ এই ব্যাপক অর্থেই গ্রহণ করিলাম । তাহাতে বক্তব্যের কোন ক্ষতি হইবে না । মতুষ্যের ভাষা বিশ্লেষণ করিলেই দেখা যাইবে, ভাষার গঠনপ্রণালীতে কতকগুলি নিয়ম আছে। শব্দের গঠনে, পদের গঠনে ও বাক্যের গঠনে এইরূপ নিয়মের আবিষ্কারই ব্যাকরণের (অর্থাৎ গ্রামারের ) উদ্দেশ্য । এইরূপ নিয়ম যে ভাষা মাত্রেই বর্তমান, তাহ কেহ অস্বীকার করিবেন না ; কোন নিয়ম না থাকার নাম সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলা ; এবং যে ভাষা সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল, কোন নিয়মই বাহ মানে না, তাহা মঙ্গুষ্যের ব্যবহার্য্য নহে। অতি অসভ্য জাতির ভাষাকেও বিশ্লেষণ করিলে সেই ভাষার অবস্থানুরূপ নিয়মের আবিষ্কার করা যাইতে পারে ।