}}& রামেজমুলার রচনাসমগ্র অসভ্য জাতির ভাষারও ব্যাকরণ গঠিত হইতে পারে । যে ভাষার নিয়ম জাদেী নাই, সে ভাষা কেহ শিখিতে পারে না, কাহাকেও শিখান যায় না ; তাহা ভাষাই নহে। কোন নিয়ম থাকিলেই সেই নিয়মের আবিষ্কার যিনি করিবেন, তিনিই সেই ভাষার বৈয়াকরণিক। ব্যাকরণ শাস্ত্র প্রকৃত পক্ষে একটি বিজ্ঞান শাস্ত্র ; ব্যাপক অর্থে ইহাকে ভাষাবিজ্ঞান বলা যাইতে পারে। এই ভাষাবিজ্ঞানের যে অংশ বোধ করি সর্বপ্রধান অংশ, যাহা যাহা Etymology অর্থাৎ প্রকৃত ব্যাকরণ, তাহা আমাদের ভারতবর্ষে অতি প্রাচীন কালে পরা কাষ্ঠা পাইয়াছিল। মহর্ষি পাণিনির হস্তে ইহার চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়। তিনিই জগতের মধ্যে অদ্বিতীয় বৈয়াকরণিক ; তাহার তুল্য আর কেহ জন্মায় নাই। মেকলের ভাষায় বলা যাইতে পারে, একলিপস সকলের অগ্রণী , অন্যের স্থান বহু দূরে। পাণিনির বহু পূৰ্ব্ব হইতে আচার্য্যের ব্যাকরণ শাস্ত্রের আলোচনা করিয়া সংস্কৃত-ভাষাবিজ্ঞান গঠিত করিতেছিলেন ; পাণিনি সেই বিজ্ঞানকে প্রায় সৰ্ব্বাঙ্গীণ সম্পূর্ণতা দান করেন। তার পর যাহা কিছু হইয়াছে, তাহ তাহারই বাত্তিক ও ভান্য ও টাকা। আধুনিক বৈয়াকরণের যাহা কিছু লিখিয়াছেন, তাহা সেই প্রাচীন কালের ভাষাবিজ্ঞানের বালকপাঠ্য পুস্তক মাত্র। পাণিন প্রভৃতি আচায্যের ভাষা বিশ্লেষণ করিয়া যে সকল নিয়মের অস্তিত্ব আবিষ্কার করিয়া গিয়াছেন, তাহাহ সংস্কৃত ভাষার পক্ষে প্রকৃত ভাষাবিজ্ঞান , তাহাই প্রকৃত ব্যাকরণ। আমরা বালকগণকে ও অনভিজ্ঞকে ভাষা শিথাইবার জন্য যে সকল ব্যাকরণ-ঘটিত পুস্তক লিখি, তাহা বৈজ্ঞানিক পুস্তক বটে, কিন্তু তাহ বিজ্ঞান শাস্ত্র নহে। আর একটা কথা বলা আবখ্যক । অনেকের বিশ্বাস, ব্যাকরণকারেরা যে নিয়ম বাধেন, ভাষা সেই নিয়মে চলে। মিথ্যা কথা । কোনও ব্যাকরণকারের সাধ্য নহে যে কোন নিয়ম বাধেন, কোন আইন জারি করেন। ভাষার নিয়ম ব্যাকরণকারের বৃদ্ধপিতামহগণের জন্মের বহু পূৰ্ব্ব হইতে বৰ্ত্তমান থাকে ; তিনি সেইগুলি আবিষ্কার করিয়া অন্যকে দেখাইয়া দেন মাত্র। নিয়ম বাধার কথা উঠতেই পারে না। বৰ্ত্তমান কালে বাঙ্গালা ব্যাকরণ নামে যে কয়েকখানি শিশুবোধক পুস্তক প্রচলিত আছে, তাহার কোনখানও প্রকৃত বাঙ্গালা ব্যাকরণ নহে। নহে, কেন না বাঙ্গালা ব্যাকরণই এখন নিৰ্ম্মিত হয় নাই, কোন ভবিষ্যতে হইবে, তাহাও কেহ জানে না। উহা সংস্কৃতের অাদর্শে লিখিত, এ কথার এই অর্থ যে, উহা বাঙ্গালা ব্যাকরণ নহে ; উহা সংস্কৃত ব্যাকরণের কয়েকটা পরিচ্ছেদের সংক্ষিপ্ত বাঙ্গালা অনুবাদ । বৰ্ত্তমান ক্ষেত্রে র্যাহারা তর্ক উপস্থিত করিয়াছেন, তাহারা কেবল বালকপাঠ্য ব্যাকরণ লইয়াই যেন ব্যাকুল । যেন ব্যাকরণ শাস্ত্র বালক ভিন্ন বৃদ্ধের জন্য আবশ্যক নহে। প্রচলিত বাঙ্গালা ব্যাকরণ গ্রন্থগুলি বালকেরই পাঠ্য ; উহা বালকগণকে ভাষা শিখাইবার উদ্দেশ্যে লিখিত। কিন্তু আমি ব্যাকরণ নামে যে বিজ্ঞান-শাস্ত্রের উল্লেখ করিতেছি, তাহার উদ্দেশু ভাষা শেখান নহে। উহার উদ্দেশ্য নিজে শেখা ; ভাষার ভিতরে কোথায় কি নিয়ম প্রচ্ছন্ন ভাবে রহিয়াছে, তাহাই আলোচনা দ্বারা আবিষ্কার করা। আগে সেই নিয়ম আবিষ্কার করিতে হইবে, অর্থাৎ তাহার নিয়ম বাহির করিয়া তাহার সাহুত স্বয়ং পরিচিত হইতে হইবে ; তাহার পর উহা অন্তকে শেখান যাইতে পারিবে।