পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শৰাকথা : বাঙ্গালা ব্যাকরণ > * * বাঙ্গালা ভাষার সেই ব্যাকরণ এখনও রচিত হয় নাই, কেন না, বাঙ্গালা ভাষার মধ্যে কি নিয়ম আছে না-আছে, তাহার কেহই আলোচনা করেন নাই । সে সকল নিয়মের যখন আবিষ্কারই হয় নাই, সে সম্বন্ধে কোন আলোচনাই এ পর্য্যন্ত হয় নাই, তখন বাঙ্গালার ব্যাকরণ এখন বর্তমানই নাই। বাঙ্গালার ব্যাকরণ কি পদার্থ, তাহ কেহই জানেন না ; রবীন্দ্রনাথও জানেন না, পণ্ডিত শরচ্চন্দ্রও জানেন না। কেহই যখন জানেন না, তখন অন্যকে শিখাইবেন কি ? কাজেই পরকে শিখাইবার জন্য ব্যাকরণ রচনার প্রসঙ্গ এখন উঠতেই পারে না। এখন যাহাকে বাঙ্গালা ব্যাকরণ বলা হয়, উহা বাঙ্গাল ব্যাকরণ নহে। বাঙ্গালা ভাষা সংস্কৃতের নিকট যাহা পাইয়াছে, সংস্কৃতের নিকট যাহা ঋণস্বরূপ গ্রহণ করিয়াছে, উহা সেই অংশের ব্যাকরণ । সেই ব্যাকরণ রচনার জন্য আমাদিগকে কষ্ট করিতে হইবে না ; সে-কালের আচার্য্যের তাহ সম্পূর্ণ করিয়া গিয়াছেন। আমরা যদি শিখিতে চাই, তাহাদের পুথি পড়িলেই হইবে ; অন্যে যদি শিখিতে চায়, সেইখানে বরাত দিলেই হইবে । বালকেরা যদি শিখিতে চায়, তাহাদিগকে মূল সংস্কৃত হইতে অথবা তাহার বাঙ্গাল অনুবাদ হইতে শিখাইলেই চলিবে। বালকদিগকে উহা পড়াইও না, এ কথা কেহ বলে না। কিছু পড়াইতেই হইবে ; কেন না, বাঙ্গালা যখন সংস্কৃতের সম্পত্তির কিয়দংশ আত্মসাৎ করিয়াছে, তখন সেই অংশটুকু বুঝাইবার জন্য পড়াইতে হইবে। কিন্তু সাহিত্য-পরিষদের সেই সংস্কৃত ব্যাকরণ আলোচনার পরিশ্রমে প্রয়োজন নাই । কিন্তু খাটি বাঙ্গালার ব্যাকরণ এখনও অস্তিত্বহীন। বাঙ্গালার যে অংশ সংস্কৃত হইতে ধার করা নহে, যে অংশ খাটি বাঙ্গাল, সে অংশের ব্যাকরণ নাই। সেই অংশের ব্যাকরণ এখন গড়িতে হইবে ; থাটি বাঙ্গালার আলোচনা করিয়া তাহাকে গড়িয়া তুলিতে হইবে। ইহাই সাহিত্য-পরিষদের কার্য্য ; পরিষৎ যদি তাহার কিঞ্চিৎ সম্পাদন করিয়া যাইতে পারেন, পরিষদের জীবন সার্থক হইবে। এই কথাটা অত্যন্ত সহজ ; অথচ কি কারণে ইহা পণ্ডিতগণের মাথায় আসিতেছে না, তাহা বলা কঠিন। বাঙ্গালা ভাষায় সংস্কৃত শব্দ প্রচুর পরিমাণে থাকুক, তাহাতে কোন ক্ষতি নাই। অন্যের তাহাতে রুচিগত আপত্তি থাকিতে পারে ; আমার সে আপত্তি নাই। অন্যের মতে সীতার বনবাসের ভাষা উৎকৃষ্ট ভাষা না হইতে পারে ; আমার মতে উহা উৎকৃষ্ট ভাষা। এই উৎকৃষ্ট ভাষা সংস্কৃতবহুল ; ইহা বুঝিতে হইলে ও বুঝাইতে হইলে সংস্কৃত ব্যাকরণে কিছু জ্ঞান থাকা আবগুক, তাহাও স্বীকার করি। র্যাহারা এই ভাষা পছন্দ করেন না, র্যাহার এইরূপ প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন যে ঐরুপ ভাষা কখনও ব্যবহার করিবেন না, তাহারা সংস্কৃত ব্যাকরণের ধার ধারিতে না চাহিতে পারেন। কিন্তু ধাহাদের সেরূপ প্রতিজ্ঞ নাই, তাহাদিগকে সংস্কৃত ব্যাকরণের সন্ধির নিয়ম ও সমাসের নিয়ম ও পদ সাধিবার নিয়ম শিখিতেই হইবে। তাহারা শিখুন, তাহাতে কে আপত্তি করিবে ? তাহারা সংস্কৃত ব্যাকরণসমূদ্র সাতার দিয়া পার হউন, কাহারও আপত্তি গ্রাহ হইবে না। তাহারা গ্ৰীক লাটিনের ব্যাকরণ শিখিতে গেলে ত কেহ আপত্তি করে না ; তৰে সংস্কৃত ব্যাকরণ শিখিতে গেলেই বা কে বাদী হইনে ? বিষ্ঠালয়ের বালকদের অবস্থার প্রতি দুটি রাখিয়া তাহাদিগকে যতটা শেখাৰু