পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শবাকখা ঃ বাঙ্গাল ব্যাকরণ >、 > উন্নতির প্রতিরোধ কিরূপে করিবে, ইহা বুঝিলাম না। ভাষা স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত ও পরিবর্তিত হইবে ; ব্যাকরণও নূতন নূতন রূপ গ্রহণ করিবে ; তাহাতে ভয় কি ? প্রাকৃতিক বিজ্ঞানেও ত তাহাই দেখি। আমাদের এই অতি প্রাচীন বস্কন্ধরার মূত্তি যুগ ব্যাপিয়া বিকৃত হইতেছে। এই বিকৃতির নিয়ম আবিষ্কার যে বিজ্ঞানের কার্য্য, সেই বিজ্ঞানের নাম ভূবিদ্যা। কোটা বর্ষ পূৰ্ব্বে পৃথিবীর অবস্থা স্বেরূপ ছিল, এখন ঠিক সেরূপ নাই। সে সময়ে পার্থিব ঘটনা যে যে নিয়মে সঙ্ঘটিত হইত, এখন সে সে নিয়মে হয় না ; আবার বহু বৎসর পরে, যখন সূর্য্যের তাপ মন্দ হইবে, যখন দিবাভাগের পরিমাণ বাড়িয়া যাইবে, যখন চন্দ্রের আকর্ষণ মন্দ হইবে, তখন আর ঠিক বর্তমান নিয়মে পার্থিব ব্যাপার ঘটিবে না। কিন্তু ভূতাত্ত্বিকের বর্তমান কালের নিয়ম আবিষ্কার করেন বলিয়া ভূপৃষ্ঠেব পরিণতির রোধ হয় না। ভাষার পক্ষেও সেই কথা । পাণিনি ব্যাকরণ রচনা করিয়া সংস্কৃত ভাষার বিকৃতি রোধ করিতে পারেন নাই। সংস্কৃত ভাষা স্বাভাবিক নিয়মেই অপ্রচলিত হইয়া গিয়াছে ; অথবা বিকৃত ও রূপান্তরিত হইয়৷ অন্য ভাষায় পরিণত হইয়াছে। কোন বৈয়াকরণ এই স্বাভাবিক বিকারের রোধ করিতে পারেন নাই । নিয়ম বাধা যখন ব্যাকরণকারের উদ্দেশু নহে, নিয়ম আবিষ্কারই তাহার যখন উদ্দেশু তখন এ আপত্তি টিকিতেই পারে না। বাঙ্গালা ভাষাতে যদি নিয়ম থাকে, সেই নিয়মগুলি জানা আবশ্যক। কেবল সাহিত্যের ভাষা কেন, লৌকিক ভাষা এবং প্রাদেশিক ভাষাও অনিয়ত নহে। ঐ সকল ভাষারও ব্যাকরণ আলোচনা চলিতে পারে। সাহিত্যের ভাষা যত সুশৃঙ্খল ও যত স্থনিয়ত, লৌকিক ভাষা ও প্রাদেশিক ভাষা ততটা স্বশৃঙ্খল ও স্বনিয়ত নহে ; উহার ব্যাকরণও তদনুরূপ হইবে । হউক, তাহাতে ক্ষতি কি ? ভাষাবিজ্ঞান যদি আলোচ্য হয়, তবে ভাষার কোন অবস্থাকে অবহেলা করিলে চলিবে না । ভাষাবিজ্ঞানের Etymology অংশ লইয়া এত কথা বলা গেল । Syntax অংশ সম্বন্ধেও ঠিক সেই সেই কথা প্রযোজ্য । বাঙ্গালী ভাষার বাক্যরচন-রীতি সংস্কৃত বাক্যরচনা-রীতির সহিত সর্বাংশে সমান নহে। কাজেই বাঙ্গাল ব্যাকরণের এই অংশেও সংস্কৃত ব্যাকরণের সহিত পার্থক্য থাকিবেই। সাদৃশ্যও থাকিবে, পার্থক্যও থাকিবে। বাঙ্গালা ব্যাকরণে সেই সাদৃশু ও সেই পার্থক্য উভয়েরই বিচার করিতে হইবে। নতুবা ব্যাকরণ সম্পূর্ণ হইবে না। বাঙ্গালা ভাষ! একটা স্বতন্ত্র ভাষা। সংস্কৃতের সহিত ইহার সম্পর্ক আছে ; কিন্তু ইহা তৎসত্ত্বেও সংস্কৃত ভাষা নহে। বহু কোটী ময়ূন্যে বাঙ্গালা ভাষায় কথা কহে ; বহু শত লোকে বাঙ্গালা ভাষায় গ্রন্থ রচনা করে। কিন্তু ইহাদের সকলে সংস্কৃত বুঝে না। সংস্কৃত ভাষা ইহাদিগকে চেষ্টা করিয়া শিখিতে হয়। কিন্তু বাঙ্গালা ভাষা ইহার মাতৃস্তন্য পানের সহকারে শিক্ষক্ষের সাহায্য ব্যতীত শিখিয়া থাকে। অন্য ভাষাতে যেমন নিয়ম আছে, বাঙ্গালা ভাষাতেও সেইরূপ নিয়ম আছে। নিয়ম না থাকিলে ইহা মন্থম্ভের ভাষা হইত না ; মহন্ত্যের প্রয়োজনে লাগিত না । কিন্তু সেই সকল নিয়মের এখনও কেহ আলোচনা করেন নাই। বাঙ্গালা ভাষাকে বিশ্লেষণ করিলে যে সকল্প নিয়ম বাহির হইতে পারে, তাহ আজ পর্য্যস্ত অনাবিকৃত্ব ।