পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শব্দকথা : বাঙ্গালা ব্যাকরণ 〉a" ইন্দ্রনাথ বাবু যাহা বলিয়াছিলেন, তাহার প্রকৃত মৰ্ম্ম এই যে, যথোচিত উপাদান-সংগ্ৰহ না হইলে ব্যাকরণ রচিত হইবে না। সেই উপাদান-সংগ্রহই পরিষৎ-পত্রিকার অন্যতম লক্ষ্য বলিয়া আমি গ্রহণ কৃরিয়াছি। যতদিন এই ক্ষুদ্র ব্যক্তি পরিষদের অনুগ্রহভার বহনে বাধ্য থাকিবে, ততদিন ইহাই পত্রিকার অন্যতম লক্ষ্য বলিয়া বিবেচিত হইবে। কিন্তু এই যে বাঙ্গলা ব্যাকরণ, যাহা এক্ষণে অস্তিত্বহীন, এবং যাহা ভবিষ্যতে রচিত হইবে, ইহ সংস্কৃত ব্যাকরণের আদশে রচিত হইবে কি না ?" এই প্রশ্ন লইয়াও অনেক বাদানুবাদ হইয়াছে। অথচ ইহার অধিকাংশই বাগ জালমাত্র। বাঙ্গালা ব্যাকরণ সংস্কৃতের আদশে রচিত হইবে কি না, এ প্রশ্নে এত গণ্ডগোল কেন হয়, বুঝিলাম না। এক অর্থে সংস্কৃত ব্যাকবণের আদর্শ কেবল বাঙ্গালায় কেন, সকল ভাষাতেই গ্রহণ করা চলিতে পারে। বস্তুতঃ ভাষাবিজ্ঞান সংস্কৃত ব্যাকরণকারগণের হাতে যেরূপ উন্নতি লাভ করিয়াছিল, সেরূপ আর কোথাও করে নাই। শত বৎসর পূর্বে ইউরোপে ভাষাবিজ্ঞানের অবস্থা উন্নত ছিল না। সংস্কৃত ভাষার ও সংস্কৃত ব্যাকরণের আবিষ্কারের পর পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা ভাষাবিজ্ঞান কিরূপে অনুশীলন করিতে হয়, তাহ শিখিয়াছেন। তৎপরে বিবিধ ভাষার তুলনায় আলোচনা দ্বারা ভাষাবিজ্ঞান তাহাদের হাতে প্রভূত উন্নতি লাভ করিয়াছে। অন্যান্য বিজাতীয় ভাষাতেই যখন সংস্কৃত ব্যাকরণের আদর্শ গৃহীত হইয়াছে, তখন বাঙ্গালা ব্যাকরণে হইবে, তাহাতে আর বিচিত্র কি ? কিন্তু এই আদর্শ হইবে প্রণালীগত অাদর্শ। বিজ্ঞানের পদ্ধতি সৰ্ব্বত্রই একরূপ । ভাষাবিজ্ঞানেও যে পদ্ধতি, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে ও জীববিজ্ঞানে, সৰ্ব্বত্রই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বিষয়ে সম্পূর্ণ ঐক্য আছে। কিন্তু তাই বলিয়া পদার্থবিজ্ঞান জীববিজ্ঞান নহে , জ্যোতিষও রসায়ন নহে। সেইরূপ নানা ভাষার আলোচনাতে একই আদর্শ গৃহীত হইলেও সেই নানা ভাষা এক হইয়া যায় না। বাঙ্গালা ব্যাকরণের রচনাতেও সংস্কৃত ব্যাকরণের আদর্শ অবলম্বিত হউক, ইহা প্রার্থনা করি । এমন উৎকৃষ্ট আদর্শ আর কোথাও পাওয়৷ যাইবে না । কিন্তু বাঙ্গালা ভাষা সংস্কৃত ভাষা নহে। উভয়ের মধ্যে প্রকৃতিগত সামান্য বা সাদৃপ্ত প্রচুর পরিমাণে আছে। উভয় ভাষা তুলনা করিয়া সেই সামান্তের আবিষ্কার করিতে হইবে। আবার উভয় ভাষায় প্রকৃতিগত বৈষম্যও প্রচুর আছে। রবীন্দ্রনাথ বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত প্রবন্ধে তাহার প্রচুর দৃষ্টান্ত দিয়াছেন। উভয় ভাষা তুলনা করিয়া সেই বৈষম্যের নিয়মগুলি আবিষ্কার করিতে হইবে। সম্পূর্ণ ব্যাকরণে এই সামান্য ও বৈষম্য উভয় পক্ষেরই যথাযথ আলোচনা থাকিবে। কেবল সংস্কৃত ব্যাকরণের সূত্রগুলি তর্জমা করিয়া দিলে উহা বাঙ্গালা ব্যাকরণ হইবে না । বর্তমান শিশুপাঠ্য বাঙ্গালা ব্যাকরণে এই সকল বৈষম্য দেখাইবার চেষ্টা যে একেবারে হয় না, এমন নহে। কিন্তু সে চেষ্টার বিশেষ কোন মূল্য নাই। ষে পরিমাণ পরিশ্রমের ও চিন্তার পর এই কাৰ্য্য সুসম্পন্ন হইতে পারে, তাহা কখনও কেহ করেন নাই | সাহিত্য-পরিষৎ সেই চেষ্টার জন্য স্বর্থীগণকে আহবান করিতেছেন। মুধীগণ কার্ষ্যে অগ্রণী হইয়া কাৰ্য্যের গৌরবায়ুসারে কর্শ্বে প্রবৃত্ত