যন্ত্রবদ্ধ শিক্ষাপ্রণালী Y } হয় না, আবার দিন অতিক্রান্ত হইলে যে যাহার আপন দেশে চলিয়া যায়। মেলা কেহ ডাকে নাই, মেলা ভাঙ্গিতেও কাহারও আদেশ দিতে হয় না। আর কয়েক দিনের মধ্যে বিনা উদ্যোগে, বিনা আয়োজনে, বিনা বিজ্ঞাপনে একটা প্রকাগু ব্যাপার ঘটিয়া যায়। এইরূপ বৎসরের পর বৎসর চলিয়া আসিতেছে,—কত কাল হইতে চলিতেছে, তাহা কেহ বলিতে পারে না । এ হইল এ দেশের পুরাতন নিয়ম। হালের নিয়মে সেবার কলিকাতায় শিল্পমেলা হইয়া গেল, এবার এলাহাবাদে মেলা হইবে । এই মেলার ব্যবস্থা অন্যরূপ । মেলার ছয় মাস আগে হইতে খববের কাগজে লেখালেখি–জেনারল-কমিটি, অধ্যক্ষ কমিটি,— সব কমিটি, চাদ তোলা—দেশ বিদেশের ব্যবসায়ীদিগকে নিমন্ত্রণ—স্থান নিরূপণ—ক্টাচা পাকা ঘর নিৰ্ম্মাণ—স্থানের বিভাগ—কে আধ কাঠা জায়গা পাইবে, কে পৌনে দুই কাঠা জায়গা পাইবে, কে চল্লিশ বর্গফুটে সন্তুষ্ট হইবে, তাহা লইয়া তর্ক বিতর্ক—আলো জল হাওয়ার বন্দোবস্ত-ৰ আগুন নিবাইবার বন্দোবস্ত—অফিসার, কেরাণী, ভলণ্টিয়ার— চেয়ার টেবিল বেঞ্চি–রীম রীম কাগজ—বস্ত দরুনে লাল ফিতা—হাজার টাকার ডাক টিকিট–পাচ হাজার টাকার ছাপাখানার বিল—তদুপরি নাচ, গান, বাজি, কৌতুক, তামাশা—চায়ের সরঞ্জাম—তকমাপরা পিয়ন— খবরের কাগজে বহারম্ভ বিবরণ ও বিজ্ঞাপন—শেষ পর্য্যস্ত উদ্যোগীরা ক্লাস্ত হইয় পড়েন—আয়ের চেয়ে ব্যয়ের মাত্রা অধিক হইয়া যায়—রিপোর্ট ছাপিবার খরচ কুলায় না ও আয় বায়ের হিসাব বাহির হয় না ! ফলে, একটা মেলার মত বৃহৎ আয়োজন সফল করিতে হইলে একটা বৃহৎ যন্ত্রের স্বষ্টি করিতে হয়। সেই বৃহৎ যন্ত্রের ভিতর বিস্তর ছোট বড় চাকা থাকে, যন্ত্র চালাইতে বিস্তর ইন্ধন ব্যয় করিতে হয় । চাকায় চাকায় আটকাইয়া যাইবার আশঙ্কায় প্রচুর তেল খরচ করিতে হয় ; এবং যন্ত্র যখন সবেগে চলিতে থাকে, তাহার ঘর্ষণে সমস্ত দেশে একটা চাঞ্চল্য উপস্থিত হয়, তাহার শব্দে দেশের লোকের নিদ্রাভঙ্গ হয়। বুঝিয়া লইতে হইবে, শব্দের যত বাহুল্য, আয়োজনের তত সাফল্য। দেশের পুরাতন মেলাগুলিতে এত শব্দ নাই, এত ঘর্ষণ নাই, এ রকম একটা প্রকাও যন্ত্ৰ নিৰ্ম্মাণ করিতেও হয় না। নিঃশব্দে ধীরে ধীরে সমুদয় দেশ হইতে উপকরণ সংগ্ৰহ করিয়া উহা যথাকলে আপন হইতে জমাট বাধিয়া উঠে, আবার যথাসময়ে আপনা হইতে লীন হইয়া যায়। অথচ ইহা বলা চলে না, মেলার বা প্রদর্শনীর যে সফলতা, তাহা এইরূপ যন্ত্রবদ্ধ চেষ্টায় অধিক পরিমাণে পাওয়া যাইতেছে, আর যে চেষ্টা যন্ত্রবদ্ধ নহে, তদ্বারা সেরূপ সফলতা পাওয়া যাইতেছে না। এ কালের যন্ত্রচালিত প্রদর্শনীতে চাকচিক্য, সূক্ষ্ম কারুকার্য্য অধিক থাকে, লোক ডাকিয়া আনিবার জন্য নানা প্রলোভন সংগ্ৰহ করিতে হয়, যে যেখানে যত চিকণ জিনিষ তৈয়ার করে, সে তাহ লইয়া উপস্থিত হয় এবং চিকণ জিনিষে যাহাদের চোখ ঝলসায়, তাহারা বহুপরিমাণে প্রদর্শনীক্ষেত্রে আকৃষ্ট হয়। আর সে কালের প্রদর্শনীতে মোটা মোটা হাতী আসে, বড় বড় বলদ আসে, মোটা কম্বল আর সতরঞ্চ আর গালিচার স্তৃপ উঠে—স্থঙ্ক কারুকার্ঘ্যের প্রলোভন বিশেষ একটা থাকে না—বড়লোকে
পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৫
অবয়ব