মন্ত্রবদ্ধ শিক্ষাপ্রণালী >WS) শাখাপ্রশাখা হইতে অধোমুখে মূল বিলম্বিত হইয়া দেশের ভূমি হইতে রস আকর্ষণ করিতেছে—সেই পুরাতন উদ্যম অনুষ্ঠানগুলিকে অবজ্ঞা না করি । আর একটা দুষ্টান্ত দিলে আমার বক্তব্য স্পষ্ট হইবে। সম্প্রতি এ দেশে শিল্প শিক্ষা দিবার জন্য একটা সচেষ্ট আয়োজন আরব্ধ হইয়াছে। বিদেশের সহিত প্রতিযোগিতায় আমাদের প্রাচীন শিল্পগুলি ক্রমেই উৎসন্ন যাইতেছে, কাজেই এখন নূতন প্রণালীতে শিল্প-শিক্ষার ব্যবস্থা নিতান্ত আবশ্বক হইয়া পড়িয়াছে। বিদেশের সহিত প্রতিযোগিতা করিতে হইলে বিদেশের শিক্ষাপ্রণালীও অবলম্বন করিতে হইবে । বিদেশে,-অর্থাৎ বিলাতে, জৰ্ম্মনিতে, আমেরিকায় শিল্প-শিক্ষার জন্য চেষ্টা যন্ত্রবদ্ধ হইয়াছে। সে । আবার কি প্রকার যন্ত্র! আধুনিক কালের উপযোগী একটা শিল্প-বিদ্যালয় স্থাপন করিতে হইলে আরম্ভেই তু ক্রোর, দশ ক্রোর টাকা লইয়া বসিতে হয়। মার্কিন দেশের এক একজন কোটিপতি বা অযুতপতি এইরূপ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকল্পে জীবনে উপাজিত সৰ্ব্বস্ব দান করিয়া ফেলিতেছেন। প্রথমেই বড় বড় অট্টালিকা গাঁথিতে হয়—তার মধ্যে বৃহৎ শিল্পাগার, বৃহৎ পরীক্ষাগার, বৃহৎ যন্ত্রাগার,—লাইব্রেরি, লেবরেটরি কারখানা । বড় বড় ডাইনামো, বড় বড় মোটর—বড় বড় এঞ্জিন—উনান, চিমনি, ষ্টীম হামার -সর্বত্র বিশাল ও বিপুল সরঞ্জাম,—বড় বড় অধ্যাপক ও শিক্ষক, কেহ শিক্ষাগারে উপদেশ দেন, কেহ, পরীক্ষাগারে পরীক্ষাকৰ্ম্মে সাহায্য করেন, কেহ কারখানা-ঘরে হাতেকলমে কাজ শেখান। এখানে পর্য্যবেক্ষণ, ওখানে পরীক্ষা, ওখানে লেকচার—সর্বত্র একটা হৈ-হৈ ব্যাপার। অথচ সৰ্ব্বত্র শুঙ্খলার সহিত সকল কাজ সম্পন্ন হইয়। যাইতেছে এবং যাহারা শিক্ষাগার হইতে বাহির হইয়া আসিতেছে, তাহার। সেই উপাঞ্জিত অভিজ্ঞতার ফলে ধরাপুষ্ঠে দম্ভের সহিত পা ফেলিয়া বেড়াইতেছে । বিদেশের এই প্রকাণ্ড উদ্যমের সহিত প্রতিযোগিতা করিতে হইলে ঐরুপই প্রকাও উদ্যম আবশ্বক—ঐরূপ প্রকাণ্ড শিক্ষণযন্ত্র স্থাপন করা আবশ্যক। সচেষ্ট উদ্যমের সহিত লড়াই করিতে হইলে সচেষ্ট উদ্যমই আবশ্যক—এখানে ধীরভাবে বসিয়া, সমাজের ধীর গতির উপর নির্ভর করিয়া থাকিলে চলিবে না । দেশের যে সকল পুরাতন আয়োজন আছে তাহাতে কুলাইবে না। এই চিন্তা আমাদের মনে জাগিয়াছে, কিন্তু অর্থাভাবে, লোকাভাবে, সামর্থ্যাভাবে আমরা যে আয়োজন আরম্ভ করিয়াছি, তাহ সমুদ্রের তুলনায় গোপদ এখানে সেখানে छूझे চারিট শিল্প-বিদ্যালয় স্থাপিত হইতেছে বটে, কিন্তু স্থানাভাবে কারখানা হইতেছে না, অর্থাভাবে যন্ত্র আসিতেছে না, লোকাভাবে শিক্ষক জুটিতেছে না। পরস্তু কি উদ্দেশ্যে বিদ্যালয় স্থাপিত হইয়াছে, কোন বিদ্যা শিথাইতে হষ্টবে, কোন বিদ্যায় কি প্রয়োজন সাধিত হইবে, কোন বিদ্যা শিখিয়া কি কাজে লাগাইতে হইবে, এই সকল বিষয়ে শিক্ষাযন্ত্র-চালকগণের কোনরূপ স্পষ্ট ধারণা নাই। ফলে শিক্ষা-যন্ত্রগুলি যদি কিছুদিন ঘর্ঘর শব্দে চলিয়, শেষে তৈলাভাবে মরিচ ধরিয়া অচল হয়, এবং যাহার শিক্ষা পাইয়া বাহির হইতেছেন, তাহারা নিষ্কলা বিদ্যার বোঝা কাধে করিয়া অশ্রুজলে ধরাতল অভিষিক্ত করিতে থাকেন, তাহা হইলে বিস্ময়ের কারণ হইবে না। আমাদের যেরূপ সামর্থ্য, দেশের যেরূপ অবস্থা, তাহাতে এই সকল উদ্যমগুলি যদি ব্যর্থ হইয়া পড়ে, তাহাতে ব্যর্থ উদ্যমের নৈরাপ্ত আসিয়া দেশে আবার জড়তা আনিবে কি না, তাহ