পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>8 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র চিন্তিবার বিষয় । দেশের শিল্প-শিক্ষার যে পুরাতন প্রণালী ছিল, তাহা আধুনিক পাশ্চাত্ত্য প্রণালীর মত যন্ত্রবদ্ধ ছিল না, এবং তাহার সহিত প্রতিযোগিতাতেও সমর্থ ছিল না বটে ; কিন্তু তাহার কতকগুলি গুণ ছিল, তাহা সে কালের সমাজের পক্ষে উপযোগী ছিল। প্রাচীন কালে আমাদের দেশে লোকের যে যে অভাব ছিল, সে কালের শিক্ষাপ্রণালী সেই সেই অভাব মোচনের উপযোগী ছিল । এবং সেই শিক্ষা-প্রণালী এমন নিঃশব্দে কাজ করিত যে, উহার অস্তিত্ব পর্য্যন্ত হয় ত সকলে জানিতে পারিত না । হিন্দু সমাজে জাতিভেদ প্রথার অন্য যতই দোষ থাকুক, উহ। দেশ ব্যাপিয়া শিল্পশিক্ষার অতি সহজ উপায় উদ্ভাবন করিয়াছিল । এবং সেই উপায় এই দেশের অবস্থার উপযোগী। অন্যান্য দেশের বৃহদ্ব্যাপার ছাড়িয়া এ দেশে ক্ষুদ্রাকারে শিল্পবিদ্যার যে সকল ব্যবস্থা হইতেছে, তাহার সহিত তুলনা করিলেই বুঝা যাইবে। যে বিদ্যালয়ে আধুনিক প্রণালীতে শিল্প-শিক্ষা দেওয়া হয়, সেখানে নানারূপ শিক্ষাসরঞ্জাম আবশ্যক হয়,—ব্যয় করিয়া সেই সকল সরঞ্জামের সংগ্ৰহ করিতে হয়—মূল্য দিয়া বিদেশ হইতে যন্ত্রাদি কিনিতে হয়, আনিতে হয়, চালাইতে হয় ; ইহা ব্যয়সাধ্য ব্যাপার । তার পর বেতন দিয়া উপযুক্ত শিক্ষক নিযুক্ত করিতে হয়—উচ্চ বেতনে পরিচালক ও পরিদর্শক নিযুক্ত করিতে হয়। এই সকল কারণে এই শিক্ষাও ব্যয়সাধ্য হইয় পড়ে। যাহার কিছু সঙ্গতি আছে, সে-ই এই বিদ্যামন্দিরে প্রবেশ করিতে পারে ; দরিদ্রের পক্ষে অর্থাং আমাদের দেশের সাড়ে পোনের আনার পক্ষে ইহার দ্বার রুদ্ধ। যাহারা শিক্ষা পাইয়া বাহিরে আসিয়া জীবিক অর্জনে প্রবৃত্ত হইবেন, তাহাদের অবস্থাও সঙ্কটাপন্ন । স্বাধীন ভাবে শিল্পীর জীবন আরম্ভ করিতে হইলে যে সকল যন্ত্র সরঞ্জাম সংগ্ৰহ করিতে হইবে, যে কারখান। প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে, যে মুটে মজুর নিযুক্ত করিতে হইবে, তার জন্যও প্রচুর মূলধন আবশ্যক। বিশেষ সঙ্গতি না থাকিলে কোন ব্যক্তি শিক্ষালাভ করিয়াও, অজ্জিত বিদ্যা ফলাইতে পারিবেন না। কাজেই দরিদ্রের পক্ষে এই শিক্ষা নিস্ফল হইবার আশঙ্কা আছে। এ দেশের প্রাচীন প্রণালীতে জাতিভেদে ব্যবসায়ভেদের ব্যবস্থা থাকায় শিল্পশিক্ষার বন্দোবস্ত অতি সহজ হইয়া আছে। পিতা যে শিল্পে অভিজ্ঞ, পুত্রকেও সেই শিল্প শিখিতে হয়। তাহার নিজের ঘরই তাহার বিদ্যালয়, নিজের বাপ খুড়াই তাহার শিক্ষক। ঘরের ভাত খাইয়। সে বিদ্যালাভ করে—হোটেল ভাড়া দিতে হয় না, বোডিং খরচ দিতে হয় না। পয়সা খরচ করিয়া যন্ত্র কিনিতে হয় না, এক পয়সা বেতন পর্য্যন্ত দিতে হয় না। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে যখন তাহার সুবিধ, যখন বাপ খুড়ার সুবিধা, তখনই শিক্ষালাভ করিতে পায় এবং বাপ খুড়ার যতটুকু বিদ্যা আছে, তাহ যথাকালে দখল করিয়া লয়। শিক্ষা সমাপ্তির পর নিজে যখন স্বাধীন জীবনযাত্রা আরম্ভ করে, তখনও মূলধন সংগ্ৰহ করিতে হয় না ; হাতিয়ার সরঞ্জাম যাহা কিছু দরকারী, পিতার নিকট উত্তরাধিকারস্থত্রে এক কড়া মূল্য না দিয়া পাইয়া থাকে। সকলের উপর দ্রষ্টব্য এই, শিক্ষকের উপর পরিদর্শক রাখিতে হয় না—শিক্ষক এইখানে ছাত্রকে ফাকি দেয় না—শিক্ষকের যতটুকু বিষ্ঠা আছে, তাহার এক ক্রান্তি সে হাতে রাখে নী—ষোল আন ধত্বের ও শ্রদ্ধার সহিত তাহ শিক্ষার্থীকে অর্পণ করে ; কেন না, এখানে শিক্ষকের ও শিক্ষার্থীর