পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রত্নাকরের রাম নাম উচ্চারণে অধিকার ছিল না। অগত্য মরা মরা বলিয়া তাহাকে উদ্ধার লাভ করিতে হইয়াছিল। এই পুরাতন পৌরাণিক নজীরের দোহাই দিয়া আমাদিগকেও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামকীৰ্ত্তনে প্রবৃত্ত হইতে হইবে। নতুবা ঐ নাম গ্রহণ করিতে আমাদের কোনরূপ অধিকার আছে কি না, এ বিষয়ে ঘোর সংশয় আরম্ভেই উপস্থিত হইবার সম্ভাবনা। বস্তুতই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এত বড ও আমরা এত ছোট, তিনি এত সোজা ও আমরা এত বাকা যে, তাহার নামগ্রহণ আমাদের পক্ষে বিষম আস্পদ্ধার কথা বলিয়া বিবেচিত হইতে পারে। বাঙ্গালী জাতির প্রাচীন ইতিহাস কেমন ছিল, ঠিক স্পষ্ট জানিবার উপায় নাই। লক্ষ্মণসেনঘটিত প্রাচীন কিংবদন্তীটা অনৈতিহাসিক বলিয়া উড়াইয়া দেওয়া যাইতে পারে। কিন্তু পলাশির লড়াইয়ের কিছু দিন পূৰ্ব্ব হইতে আজ পর্য্যন্ত বাঙ্গালীর চরিত্র ইতিহাসে ষে স্থান লাভ করিয়া আসিয়াছে, বিদ্যাসাগরের চরিত্র তাহ অপেক্ষায় এত উচ্চে অবস্থিত যে, তাহাকে বাঙ্গালী বলিয়া পরিচয় দিতেই অনেক সময়ে কুষ্ঠিত হইতে হয়। বাগ যত কৰ্ম্মনিষ্ঠ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও আমাদের মত বাকৃসৰ্ব্বস্ব সাধারণ বাঙ্গালী, উভয়য়ের মধ্যে এত ব্যবধান যে, স্বজাতীয় পরিচয়ে তাহার গুণকীৰ্ত্তন দ্বারা প্রকারান্তরে আত্মগৌরব খ্যাপন করিতে গেলে, বোধ হয়, আমাদের পাপের মাত্রা আরও বাড়িয়া যাইতে পারে। আমাদের প্রত্যেক অনুষ্ঠানে সহৃদয়তার এত অভাব ও মৌখিকতার এত প্রভাব যে, অদ্য যে আমরা তাহার স্মৃতির উপাসনার জন্য একত্র হইয়াছি, এই উপাসনা ব্যাপারটাই একটা ভণ্ডামি নহে, তাহা প্রমাণ করা দুষ্কর। আমরা তাহার তর্পণোদেশে যে বক্তৃতাময় বারির অঞ্জলি প্রদান করিতে উপস্থিত হইয়াছি, তাহার প্রেতপুরুষ যদি অবজ্ঞার সহিত তাহা গ্রহণ করিতে পরামুখ হয়েন, তাহা হইলে আমাদের পক্ষসমর্থনে বলিবার কথা কি আছে, সহজে খুজিয়া পাই না। বিদ্যাসাগরের উপাসনায় এই অধিকার অনধিকারের কথা আসে বলিয়া প্রথমেই আমাকে রত্নাকরের নজীর আশ্রয় করিতে হইয়াছে। বিদ্যাসাগরের উপাসনায় আমাদের অধিকার না থাকিতে পারে , এবং বিদ্যাসাগরের জীবনের ও বিদ্যাসাগরের চরিত্রের সম্পূর্ণ তাৎপৰ্য্য আমাদের সম্পূর্ণ হৃদয়ঙ্গম হওয়াও হয়ত অসম্ভব। তথাপি এই সাংবৎসরিক উপাসনা বষে বর্ষে অনুষ্ঠিত হইয়া আমাদের জাতীয় চরিত্রের কলঙ্ক ক্রমশ: ধৌত করিবে, এই আমাদের এক মাত্র ভরসা। পূজিতের প্রীতি-উৎপাদন, বোধ হয়, আমাদের শাস্ত্রবিহিত শ্ৰাদ্ধ-তৰ্পণাদি ব্যাপারের উদ্বেগু নহে, পূজক আত্মোন্নতি বিধানের জন্য ঐ সকল অনুষ্ঠান সাধনে বাধ্য। বিদ্যাসাগরের প্রেতপুরুষের প্রীতিজনন আমাদেব অসাধ্য হইলেও আমরা স্বার্থের অনুরোধে ঐ কাৰ্য্যে প্রবৃত্ত হইতে পারি। কিন্তু প্রথমেই বিদ্যাসাগরকে আমাদের বলিয়) পরিচয় দিব কি না, সেই ঘোর সমস্ত আসিয়া দাড়ায়। সেই প্রকাগু মানবতাকে সঙ্কীর্ণ বাঙ্গালীত্বের সীমার মধ্যে আবদ্ধ রাখিতে যাওয়া নিতান্ত ধৃষ্টত বলিয়া মনে হয়। ঈশ্বরচন্দ্র