পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত-কথা ? ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর 62-סג মর্ত্যদেহ ধরিয়াও কোনরূপেই ততটা পারি না। এখন বঙ্কিমচন্দ্র অথবা রবীন্দ্রনাথের হাতে মানবজীবনের উৎকট সমস্তাগুলার আলোচনা কবিতাকারে দেখিতে চাই। দ্বিতীয় একটা লক্ষণ, অামাদের রাষ্ট্রক আকাজক্ষার উদ্দীপন এবং তৎসহকারে স্বায়ত্তশাসন লাভের প্রয়াস । কিন্তু এই সুস্পষ্ট লক্ষণগুলি বৰ্ত্তমান থাকিতেও আমরা উন্নতির সোপানে উঠিতেছি, এই বাক্য নির্বিববাদে গ্রহণ করিতে আমি প্রস্তুত নহি । এক শত বা দেড় শত বৎসরের মধ্যে কলির প্রকোপ সহসা এত দূর বৃদ্ধিলাভ করিয়াছে যে, বাঙ্গালীর পরমায়ুঃ একেবারে চানব্বই হইতে পয়ত্ৰিশে আসিয়া দাড়াইয়াছে, এবং ধৰ্ম্মের চারি পায়ের মধ্যে তিনটি একবারে চিরদিনের মৃত খঞ্জ হইয়া গিয়াছে, অবশ্য এরূপু বিশ্বাস করিতে আমি বাধ্য নহি । কিন্তু আবার আমাদের সামাজিক গগনের পূর্বকাশে তরুণ স্বর্যোর উদয় হইয়াছে, এবং অরুণ সারথি হস্তধৃত হরিদর্শ্বগণের রশ্মিগুচ্ছ আর ধে ঘুরাইয়া দিবেন না, ইহার স্বীকারেও আমার সাহস "হয় না। বঙ্গ-সাহিত্যের অভু্যদয় সম্বন্ধে কোন কথা এখানে বলিতে চাহি না । দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা বঙ্কিমের প্রতিভার উজ্জল আলোক হইতে বঞ্চিত হইয়াছি ; কিন্তু আশা করি, নবীনচন্দ্রের ৪ রবীন্দ্রনাথের তুলিক অক্ষয় হইয়া আমাদের চিত্তবিনোদনে ও সন্তাপহরণে নিযুক্ত থাকিবে। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্ৰীক অবস্থা সম্বন্ধে আমার কিছু বলিবার আছে। শ্রোতৃবর্গ অনুগ্রহ করিয়া মার্জনা করিবেন। বস্তুতই শতাধিক বর্ষব্যাপী সুশাসনে আমরা নিতান্ত আদুরে ছেলে হইয়া পড়িয়াছি। আমাদের পরিণামও বোধ করি, আদুরে ছেলের পরিণামের অপেক্ষা অধিকতর আশাপ্রদ নহে। পালঙ্কের উপর মুখশয্যাশায়ী শিশুকে যখন আরামের সহিত তুলিযোগে চুমুকে চুমুকে তঞ্চ পান কবিতে দেখা যায়, তখন বয়স্ক লোকের মূখ হইতে “আহা মরি শিশুকাল” ইতি কবিতাবাণী সনিঃশ্বাসে নির্গত হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়মে এই শিশুকেই আবার কিছুদিন মধ্যে সেই বয়স্কের স্থান গ্রহণ করিয়া জীবনদ্বন্দ্বে নিযুক্ত হইতে হয়। আমাদের স্নেহময়ী গভর্মেন্ট-জননীর অনুগ্রহের মাত্র ও আমাদেরও আবদারের মাত্রা এমন হইয়া দাড়াইয়াছে যে, আর আমরা সেই আরামের পালঙ্ক ও তুলির দুধ সহজে ছাড়িতে চাহিতেছি না এবং আমাদের স্বচ্ছন্দতার অণুমাত্র ক্রটি ঘটিলেই, শৈশবস্থলভ সামুনাসিক কণ্ঠধ্বনি বাহির করিয়া জননীর মনোযোগ আকর্ষণ করিতে প্রয়াসী হইতেছি। বাস্তবিকই আমাদের মত সৰ্ব্বতোভাবে পরমুখাপেক্ষী কোন জাতির উন্নতি ঘটিয়াছে, তাহ ইতিহাসে লেখে না । আমাদের মেরুদণ্ডের সনাতন কোমলতা হইতেই এই অবস্থার উৎপত্তি হইয়াছে ; আবার সেই অবস্থা হইতেই মেরুদণ্ডের কোমলতা বাড়িয়া যাক্টতেছে। আমরা কথায় কথায় আমাদের চরিত্রসংশোধনের প্রস্তাব করি ; এবং এই চরিত্রসংশোধন না হইলে জাতীয় উন্নতির সম্ভাবনা নাই, এই মৰ্ম্মে মহতী ঘটা করিয়া বক্তৃত৷ করি। চরিত্রসংশোধন না হইলে যে উন্নতি ঘটিবে না, ইহা সত্য কথা ; কিন্তু চরিত্র-সংশোধন ব্যাপারটাই কি এত সহজ জিনিষ? যেন ইচ্ছা করিলেই