পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামেন্দ্রমুন্দর রচনাসমগ্র وجميbج চরিত্রটা আপনা-আপনি শোধিত হইয়া বাইবে । কিঞ্চিলিক যেন ইচ্ছা মাত্রেই আপনাকে কুম্ভীরে পরিণত করিবে! ডারুইন-বাদীরা বলেন, কুম্ভীরেরও পূৰ্ব্বপুরুষ এককালে কেঁচোর মত ছিল। কিন্তু সেই কুম্ভীরত্বে পরিণতির পূর্ব পর্য্যন্ত তাহাকে কত যুগব্যাপী জীবনদ্বন্দ্বে নিযুক্ত থাকিতে হইয়াছে! ইচ্ছা মাত্রেই চরিত্রশোধন ঘটে না , এবং প্রস্তাব দ্বারাও জাতীয় উন্নতির সম্ভাবনা নাই । বিদ্যাসাগরের মহত্ত্বের সম্মুখীন হইলে, আমাদের ক্ষুদ্রত্বের উপলব্ধি জন্মিয় যে আত্মগ্লানি উপস্থিত হয়, এইরূপে সেই আত্মগ্লানির কতকট ওজর মিলিতে পারে । আমরা যে বিষ্কৃাসাগরের সন্মুখে দাড়াইতে সঙ্কচিত হই, এইরূপে তাহার কতকটা সাম্বন মিলিতে পারে বটে, কিন্তু এই দেশে এই জাতিরু মধ্যে সহসা বিস্তাসাগরের মত একটা কঠোর কঙ্কালবিশিষ্ট মনুষের কিরূপে উৎপত্তি হইল, তাহ বিষম সমস্যা হইয়া দাড়ায় । সেই দুৰ্দ্দম প্রকৃতি, যাঁহা ভাঙ্গিতে পারিত, কখন নোয়াইতে পাবে নাই , সেই উগ্র পুরুষকার, যাহা সহস্র বিন্ন ঠেলিয়া ফেলিয়া আপনাকে অব্যাহত করিয়াছে , পেষ্ট উন্নত মস্তক, যাহা কখন ক্ষমতার নিকট ও ঐশ্বৰ্য্যেব নিকট অবনত হয় নাই , সেই উৎকট বেগবতী ইচ্ছ, যাহা সৰ্ব্ববিধ কপটাচার হইতে আপনাকে মুক্ত বাথিয়াছিল, তাহার বঙ্গদেশে আবির্ভাব একটা অদ্ভুত ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যে গণ্য হইবে, সন্দেহ নাই। এই উগ্রতা, এই কঠোরতা, এই তুৰ্দ্দমতা ও অনম্যতা, এই দুৰ্দ্ধৰ্ষ বেগবত্তার উদাহরণ, যাহার। কঠোর জীবনদ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকিয়া দুই ঘ দিতে জানে ও দুই ঘা থাইতে জানে, তাহদের মধ্যেই পাওয়া যায় , আমাদের মত যাহারা তুলির দুধ চুমুক দিয়া পান করে ও সেই দুধে মাখন তুলিয়া জল মিশাইয়া লয়, তাহাদের মধ্যে এই উদাহরণ কিরূপে মিলিল, তাহা গভীর আলোচনার বিষয় । সেই জন্যই বিদ্যাসাগরকে আমাদের বলিয়া পবিচয় দিতে দ্বিধা হয়। অনেকে বিদ্যাসাগরের চরিত্রে পাশ্চাত্য জাতিস্থলভ বিবিধ গুণেব বিকাশ দেখেন । ইউরোপীয়দের আমরা যতই নিন্দা করি না, অনেক বিষয়ে তাহারা খাটি মানুষ , আমাদের মনুষ্যত্ব র্তাহীদের নিকট নিম্প্রভ ও মলিন। যে পুরুষকারে পুরুষের পৌরুষ, সাধারণ ইউরোপীয়ের চরিত্রে যাহা বৰ্ত্তমান, সাধারণ বাঙ্গালীর চরিত্রে যাহার অভাব, বিদ্যাসাগরের চরিত্রে তাহ প্রচুর পরিমাণে বৰ্ত্তমান ছিল। বিদ্যাসাগরের বাল্যজীবনটা দুঃখের সহিত সংগ্রাম করিতে অতিবাহিত হইয়াছিল। শুধু বাল্যজীবন কেন, তাহার সমগ্র জীবনকেই নিজের জন্য না হউক, পরের জন্য সংগ্রাম বলিয়া নির্দেশ করা যাইতে পারে। এই সংগ্রাম তাহার চরিত্রগঠনে অনেকটা আনুকূল্য করিয়াছিল, সন্দেহ নাই , কিন্তু পিতৃপিতামহ হইতে র্তাহার ধাতুতে ও মজ্জাতে ও শোণিতে এমন একটা পদার্থ তিনি পাইয়াছিলেন স্বাহাতে সমুদয় বিপত্তি ভিন্ন করিয়া তিনি বীরের মত সেই রণক্ষেত্রে দাড়াইতে সমর্থ হইয়াছিলেন। দুঃখ অনেকেরই ভাগ্যে ঘটে ; জীবনের বন্ধুর পথ অনেকের পক্ষেই কণ্টকসমাবেশে আরও দুর্গম। কিন্তু এইরূপে সেই কাটাগুলাকে ছাটিয়t