চরিত-কথা ? ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর Ytr^ দলিয়া চলিয়া যাইতে অল্প লোককেই দেখা যায়। বাঙ্গালীর মধ্যে এমন দৃষ্টাস্ত প্রকৃতই বিরল। - অথচ আশ্চৰ্য্য এই, এত প্রভেদ সত্ত্বেও বিদ্যাসাগর খাটি বাঙ্গালী ছিলেন । তিনি খাটি বাঙ্গালীর ঘরে জন্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন ; তাহার বাল্যজীবনে ইউরোপীয় প্রভাব তিনি কিছুই অনুভব করেন নাই। তিনি যে স্থানে যাহাদের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন, সে স্থানে তাহাদের মধ্যে পাশ্চাত্য ভাবের প্রভাব তখন পৰ্য্যন্ত একবারেই প্রবেশলাভ করে নাই। পরজীবনে তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা ও পাশ্চাত্য দীক্ষা অনেকটা পাইয়াছিলেন, অনেক পাশ্চাত্যের স্পর্শে আসিযাছিলেন, পাশ্চাত্য চরিত্রে অনুকরণের যোগ্য অনেক পদার্থের সমাবেশ দেখাইয়াছিলেন, কিন্তু তাহাতে যে তাহার চরিত্রকে কোনরূপ পরিবত্তিত করিয়াছিল, তাহ বোধ হয় না। র্তাহার চরিত্র তাহার পূর্বেই সম্যগ ভাবে সম্পূর্ণরূপে গঠিত হইয়াছিল , আর নূতন মশলা-সংগ্রহের প্রয়োজন হয় নাই। যে বৃদ্ধ বিদ্যাসাগরের চরিত্রের সহিত আমরা এত পরিচিত, যে বালক ঈশ্বরচন্দ্র পরের ক্ষেতে যবের শীষ খাইতে গিয়া গলায় কাটা ফুটাইয়। মুতপ্রায় হইয়াছিলেন, অথবা আহারকালে পাশ্ববর্তীদের ঘৃণার উদ্রেকভয়ে নিজের পাকস্থলীতে আরশুলার ন্যায় বিকট জন্তু প্রেরণ করিয়া ফেলিয়াছিলেন, সেই বালক বিদ্যাসাগরেই সেই চরিত্রের প্রায় সম্পূর্ণ বিকাশ দেখা যায়। বিদ্যাসাগর যদি ইংরেজী একেবারে না শিখিতেন বা ইংরেজের স্পর্শে না আসিতেন , চিরকালই যদি তিনি সেই নিতৃত বীরসিংহ গ্রামের টোলখানিতে ব্যাকরণের তাৎপর্য্য আলোচনায় ব্যাপুত থাকিতেন, তাহা হইলে ১৩০৩ সালের ১৩ই শ্রাবণ তারিখে কলিকাত। শহরের অবস্থাটা ঠিক এমনই না হইতে পারিত ; কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্র আপন প্রকাণ্ড পুরুষসিংহত্ব লইয়া আপনার পল্লীগ্রামখানিকে বিক্ষোভিত রাখিতেন, সন্দেহ নাই। তিনি ঠিক যেমন বাঙ্গালীটি হইয়৷ ভূমিষ্ঠ হইয়াছিলেন, শেষ দিন পর্য্যন্ত তেমনই ঠিক বাঙ্গালীটিই ছিলেন। তাহার নিজত্ব এত প্রবল ছিল যে, অনুকরণ দ্বারা প্রত্ব গ্রহণের তাহার কখন প্রয়োজন হয় নাই ; এমন কি, তাহার এই নিজত্ব সময়ে সময়ে এমন উগ্র মূৰ্ত্তি ধারণ করিত যে, তিনি বলপূৰ্ব্বক এই পরত্বকে সম্মুখ হইতে দূরে ফেলিতেন। পাশ্চাত্য চরিত্রের সহিত র্তাহার চরিত্রের যে কিছু সাদৃশ্ব দেখা যায়, সে সমস্তই তাহার নিজস্ব সম্পত্তি, অথবা তাহার পুরুষানুক্রমে আগত পৈতৃক সম্পত্তি। ইহার জন্য র্তাহাকে কখন ঋণস্বীকার করিতে হয় নাই । সম্প্রতি আমাদের পরমশ্রদ্ধাভাজন মাননীয় কোন মহাশয় এইরূপ একটা কথা তুলিয়াছিলেন যে, পাশ্চাত্যগণের সহিত আমাদের সামাজিক কুটুম্বিত-স্থাপন না ঘটিলে, আমাদের জাতীয় চরিত্রের উন্নতির সম্ভাবনা নাই। কথাটা লইয়া আমাদের সমাজমধ্যে অনেকটা আন্দোলন চলিয়াছিল। আমাদের মধ্যে র্যাহার। পাশ্চাত্য বেশভূষার ও পাশ্চাত্য আচারের পক্ষপাতী, তাহার এই আন্দোলনে কিছু চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছিলেন। বৈদেশিকের সহিত কুটুম্বিতা স্থাপন ও বিদেশের আচার-গ্রহণ সম্বন্ধে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মত গ্রহণ করিতে গেলে কি ফল ঘটিত, বোধ হয়, উল্লেখ অনাবগুক। র্তাহার.