পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত-কথা : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর >br。 পারিতেন না। লোকটার কুল-শীলের পরিচয় লওয়ার অবসর ঘটিত না । তাহার অভাবের উৎপত্তি কোথায়, তাতার অভাব পূরণ করিলে প্রকৃতপক্ষে তাহার উপকার হইবে, কি অপকার হইবে ও গৌণ সম্বন্ধে সমাজের ইষ্ট হইবে, কি অনিষ্ট হইবে, নীতিতত্ত্বঘটিত ও সমাজতত্ত্ব-ঘাটত এই সকল প্রশ্নের মীমাংস তিনি করিতেন না। অপিচ, দুঃখের সম্মুখে আসিবা মাত্র তাহার ব্যক্তিত্ব একবারে অভিভূত হইয়া যাইত। তিনি আপনাকে একেবারে ভুলিয়া যাইতেন ; পরের মধ্যে তাহার নিজত্ব একবারে মগ্ন ও লীন হইয়া যাইত। এই লক্ষণের দ্বারা তাহার মানবপ্রীতি অন্য দেশের মানবপ্রীতি হইতে স্বতন্ত্র ছিল । 豪 ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কোন ব্যক্তির কি উপকার করিয়াছেন, তাহার সম্পূর্ণ তালিকা তৈয়ার করা একরকম অসম্ভব । তাহার জীবনচরিত-লেখকের যেগুলা ংগ্ৰহ করিয়াছেন, তাহাই পড়িতে পড়িতে শ্বাসরোধের উপত্রম হয় । শ্রোতৃবগ ভয় পাইবেন না , আমি সেই ফর্দ এক্ষণে র্তাহাধের সম্মুখে উপস্থিত কারতে প্রস্তুত নহি । কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই সুদীর্ঘ ফদের মধ্যে প্রায় শতকরা নব্বইট কার্য্য অর্থনীতির অনুমোদিত নহে। কিন্তু প্রচলিত অর্থনীতির উপবে একটা নীতি আছে, তাহা উচ্চতর মানবনীতির অঙ্গীভূত । ইউটিলিটির হিসাবে ভাল-মন্দ নির্ণয় করিতে হইবে, সন্দেহ নাই , কিন্তু এই ইউটিলিটির হিসাবট নিতান্ত সহজ ব্যাপার নহে। সমাজের স্থিতির ও গতির নিয়মগুলা এতই জটিল যে, সেই নিয়মগুলাকে যতই আয়ত্ত করিতে যাওয়া যায়, তাহার। ততই যেন হাত হইতে পিছলিয়া পড়ে । সমাজতত্ত্ব সম্বন্ধে আজকাল আলোচনা যতই অধিক হইতেছে, সমাজের আভ্যন্তরিক প্রকৃতি সম্বন্ধে আমাদের অনভিজ্ঞতা ততই যেন বৃদ্ধি পাইতেছে! একটা অকৰ্ম্মণ্য, অলস, কুচরিত্র ব্যক্তির আহার দিয়া প্রাণ বাচাইলে আমাদের পরিমিত খাদ্যসমষ্টির পরিমাণ অকারণে হ্রাস করা হয়, এবং মৎস্যজাতির জীবন-সংগ্রামকে কিয়ৎপরিমাণে আরও তীব্র করিয়| তোলা হয়, এই হিসাবে এইরূপ দয়াপ্রকাশ গহিত কৰ্ম্ম বলিয়া আজিকালকার অনেক সমাজতাত্ত্বিক নির্দেশ করেন। কিন্তু এই ক্ষুদ্র দয়াপ্রকাশ ব্যাপার কত দিকে কত উপায়ে গৌণভাবে ও পরোক্ষভাবে শুভ ফলের আনয়ন ও উৎপাদন করে, তাহ আমাদের স্থল হিসাবে ধরা পড়ে না , কাজেই ইউটিলিটির জমাখরচের খাতায় জমার অঙ্কে শূন্ত পড়িয়া যায়। রাজশাসন ও সমাজশাসন ও ধৰ্ম্মের শাসন, লোকাচার ও দেশাচার, নীতিশাস্ত্র ও অর্থশাস্ত্র, বিদ্যার বিস্তার ও জ্ঞানের বিস্তার, সহস্র উপায় অবলম্বন করিয়া সহস্র গির্জাঘর ও সহস্ৰ কারাগার ও সহস্ৰ বিদ্যালয় ও সহস্ৰ ধৰ্ম্মাধিকরণ মনুষের জীবন-সমরের উৎকটতার লাঘব সাধনে ব্যাপৃত রহিয়াছে। বর্তমান সমাজতত্ত্ব দুঃখের সহিত বলিতেছে, এই যুগযুগান্তরব্যাপী মহন্ধের সমবেত চেষ্টার এক মাত্র ফল নিফলতা। মহন্ত-চরিত্রে স্বার্থপরতার মাত্রা কোনরূপে কমাইতে না পারিলে, বোধ করি, এই দ্বন্দ্বের ভীষণতার কোনরূপ লাঘব হইবে না। সস্তানকে দেখিলে জননীর স্নেহের উৎস আপনা হইতে উথলিয়া উঠে ; কোনরূপ ক্ষতি-লাভ গণনার বা কৰ্ত্তব্য নির্ণয়ে সংশয়ের অবকাশমাত্র উপস্থিত হয় না। ময়ূন্যের চরিং যদি কখনও এইরূপ অবস্থা প্রাপ্ত হয় যে, সেই স্বেহারুই জননীর মত দুঃখক্লেশাতুর মহন্যের দুঃখ দূর করিবার জন্য সে মাপন হইতেই