পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত-কথা : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ᎼᎽ Ꮰ আজিকার আয়োজনের অনুষ্ঠাতাদিগের অনুগ্রহজন্য অকপট কৃতজ্ঞতাস্বীকারে আমি বাধ্য আছি ; কিন্তু আমি আশা করি যে, আপনারা তাহাদের পাত্রনিৰ্ব্বাচনে বিষয়বুদ্ধির প্রশংসা করিবেন না। বাঙ্গালীর জীবনের উপর বঙ্কিমচন্দ্র কত দিকে কত উপায়ে প্রভূত্ব বিস্তার করিয়াছেন, তাহা আমরা জানি ; কিন্তু বাঙ্গালার বাহিরে সম্ভবতঃ তিনি বাঙ্গালার সার ওয়াল্টার স্কট, মাত্র। ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্রের সহিত পরিচয় অতি অল্প বয়সেই ঘটিয়াছিল, সে বয়সে উপন্যাসগ্রন্থের সহিত আমার পরিচয় বড়-একটা স্পৃহনীয় বলিয়া বিবেচিত হয় না। আমার যখন আট বৎসর বয়স, তুখন বঙ্গদর্শনে বিষবৃক্ষ বাহির হইতেছিল এবং আমি বঙ্গদর্শনের কয়েক সংখ্যা হইতে বিষবৃক্ষের দুই-চারিট পরিচ্ছেদ আত্মসাৎ করিয়াছিলাম। সেই বয়সে বিষবৃক্ষের সাহিত্য-রসের কিরূপ আস্বাদ অন্তভব করিয়াছিলাম, তাহা ঠিক মনে নাই , তবে এ কথা বেশ মনে আছে যে, পাঠশালায় গিয়া তারিণীচরণ চট্টোপাধ্যায়-প্রণীত ভূগোলবিবরণের ভারতবর্ষের অধ্যায়ে গঞ্জাম গঞ্জাম চত্বরপুর, মসলিপটম মসলিপটম, আর্কট আর্কট, মদুব মজুর,টিনিভেলি টিনিভেলি প্রভৃতি অপরূপ স্বপ্রাব্য নামাবলী আবৃত্তির ক্রটি ঘটিলে পণ্ডিত মহাশয়ের নিকট বেত্ৰাঘাত উপহার পাইয়। বাঙ্গাল সাহিত্যের প্রতি যে অকুরাগ দাড়াইছিল, নগেন্দ্রনাথের নৌকাযাত্রা ও কুন্দনন্দিনীর স্বপ্নদর্শন নিতান্তই তাহার সমর্থন ও পোষণ করে নাই। আমার বেশ মনে আছে যে, 'পদ্মপলাশলোচনে তুমি কে এই পরিচ্ছেদের সহিতই আমার তাৎকালিক বিষবৃক্ষ-পাঠ সমাপ্ত হয় এবং ঐ পরিচ্ছেদের শীর্ষস্থিত সংক্ষিপ্ত প্রশ্নটি মনের মধ্যে বিস্ময় ও কৌতুহলের উদ্রেক করিয়া কিছু দিনের জন্য একটা অতৃপ্ত আকাঙ্খার স্বষ্টি করে। কিছু দিনের জন্য মাত্র, কেন না, পর-বৎসর আমি পাঠশালার পৰীক্ষায় যে পুরস্কার পাইয়াছিলাম, বাড়ী ফিরিয়া দেখিলাম, তাহার রাঙা ফিতার বন্ধনের মধ্যে শ্রবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-প্রণীত দুর্গেশনন্দিনী ও বিষবৃক্ষ নামক দুইখানি পুস্তক রহিয়াছে। এই সভাস্থলে র্যাহারা পিতার বা পিতৃস্থানীয় অভিভাবকের গৌরবযুক্ত পদবী গ্রহণ করেন, তাহারা শুনিয়া আতঙ্কিত হইবেন ষে, ঐ পুরস্কার বিতরণে গ্রন্থ নির্বাচনের ভার আমার পিতৃদেবের উপর অপিত ছিল এবং তিনিই আমার গঞ্জাম গঞ্জাম চত্বরপুর প্রভৃতি সূক্ষ্ম ভৌগোলিক তত্তে, পারদর্শিতার পুরস্কার স্বরূপ ঐ দুইখানি গ্রন্থ নিৰ্বাচন করিয়া তাহার নবম বর্ষের পুত্রের হস্তে অর্পণ করিয়াছিলেন । পুরস্কারহস্তে বাড়ী আসিয়৷ রাত্রিটা একরকমে কাটাইয়াছিলাম, পরদিনে বিষবৃক্ষ ও তার পরদিনে দুর্গেশনন্দিনী টাইটেলপেজের হেডিং মায় মূল্য পাচ সিকা হইতে শেষ পৰ্য্যন্ত একরকমে উদরস্থ করি। ঐ দুই গ্রন্থের কোন অংশ সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট বোধ হইয়াছিল, তাহা যদি এখন অকপটে বলিয়। ফেলি, তাহা হইলে নিশ্চয়ই আপনার আমার কাব্যরসগ্রাহিতার প্রশংসা করিবেন না। বিষবৃক্ষের মধ্যে যেখানে ছেলের পাল “হীরার অয়ি বুড়ী হাটে গুড়িগুড়ি" বলিয়া সেই বৃদ্ধার পশ্চাদ্ধাবন করিয়াছিল ও বৃদ্ধার ইষ্টিরস নামক ব্যাধির প্রতিকার বিষয়ে কেষ্টরস নামক ঔষধের উপযোগিতা সম্বন্ধে প্রতিবেশিনীর সহিত আলাপ করিতেছিল, সেই স্থানটাই গ্রন্থের মধ্যে সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট বলিয়া সাব্যস্ত করিয়াছিলাম। গজপতি বিস্তাদিগগজকেই দুর্গেশনন্দিনীর মধ্যে