পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত-কথা : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় సి হরিদাসও সুন্দর হইতে পারেন, কিন্তু মানবজীনের ও জগৎ-সংসারের গোড়ার কথাগুলি যিনি সুন্দর করিয়া দেখাইতে পারেন, তিনিই প্রথম শ্রেণীর কবি । গোড়ার কথা দেখাইলেই কবি হয় না ; সেটা দার্শনিকের ও বৈজ্ঞানিকের ও ধৰ্ম্মতত্ববিদের কাজ, কিন্তু তাহ সুন্দর করিয়। দেখাইতে পারিলেই কবি হয়। বঙ্কিমচন্দ্রের নবেলের মধ্যে সেই রকম গোড়ার কথ। দুইএকটা সুন্দর করিয়া দেখান হইয়াছে ; এই জন্য কবির আসনে তাহার স্থান অতি উচ্চ । মানবজীনের একটা গোডার কথা এই যে, উহ। আগাগোড়া একটা স্বামঞ্জস্ব স্থাপনের চেষ্টা মাত্র। শুধু মানব-জীবনের কথাই বা বলি কেন, বহিঃপ্রকৃতির সহিত অন্তঃপ্রকৃতির নিরস্তর সামঞ্জস্য স্থাপনের নামই জীবন ! “যাহার। হাবার্ট স্পেন্সার-প্রদত্ত জীবনের এই পারিভাষিক সংজ্ঞ জানেন, তাহার। আমার কথায় সায় দিবেন । জীবনের উহ। অপেক্ষা ব্যাপকতর সংজ্ঞা আমি দেখি নাই। যাহাব জীবন আছে, তাহাকে দুই দিকের টানাটানির মধ্যে বাস করিতে হয়। ধললগিরি পর্বত বহু কাল হইতে বরফের বোঝা মাথায় করিয়া ভারতবর্ষের পুরুষপরম্পর অবলোকন করিতেছেন, কিন্তু বিজ্ঞানশাস্ব র্তাহার সজীবতায় সন্দেহ করেন। ধবলগিরি এত মহান হইয়াও শীতাতপেব ও জল-বৃষ্টির ও তুষারবৃষ্টির উৎপাত অকাতরে সহিয়৷ আসিতেছেন, এবং শত স্রোতস্বিনীর সহস্র ধারা তাহাব কলেবরকে শীর্ণ ও বিদীর্ণ ও ক্ষীণ করিয়া তাহার অভ্ৰভেদী মস্তককে সমভূমি করিবার চেষ্ট কবিতেছে—সেই আপান্নিবারণের জন্য তাহার কোন চেষ্টাক্ট নাই । কিন্তু সীমান্য একটি পিপীলিকা ক্রমাগত আহাব সংগ্ৰহ করিয়! আপনার ক্ষয়শীল দেহের পূরণ করিয়া থাকে এবং যদি কেহ তাহাকে দলিত করে, সে দংশন করিয়! আত্মরক্ষণে সাধ্যমত ক্রাট করে না । এক দিকে বহিঃপ্রকৃতি তাহাকে ক্রমাগত ধ্বংসের মুখে টানিতেছে , অন্যদিকে সে ধ্বংস হইতে আত্মরক্ষাব জন্য কেবলই চেষ্টা করিতেছে। তাহার কীটজীবন এই চেষ্টার পরম্পরমাত্র। যে দিন সেই চেষ্টার বিরাম, সেই দিন তাহার মৃত্যু। মানুষও ঠিক পিপীডাব মতষ্ট জীবন ব্যাপিয় আপনাকে মৃত্যুর কবল হইতে রক্ষার জন্য ব্যাপৃত। মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী, কিন্তু অন্তঃপ্রকৃতিকে বহিঃপ্রকৃতির আক্রমণ নিবারণে সমর্থ করিয়া মৃত্যুনিবারণের ধারাবাহিক চেষ্টাই তাহার জীবন। সর্বনাশ সমুৎপন্ন হইলে পণ্ডিত লোকে অৰ্দ্ধ ত্যাগে বাধ্য হন ; তাই মৃত্যু অনিবাৰ্য্য জানিয়া পণ্ডিত-জীব আপনার অৰ্দ্ধেককে অপত্যকপে রাখিয়। অপরাদ্ধকে ত্যাগ করিয়া থাকেন। সর্বনাশ সমূৎপন্ন হইলে জীবনের কিয়দংশ রক্ষার জন্য এই অপত্যোৎপাদন। আহার, নিদ্র। প্রভৃতি প্রবৃত্তির এক মাত্র উদ্দেশ্য যেন তেন প্রকারেণ জীবনরক্ষা। জীবনরক্ষার দুই উপায়, আত্মরক্ষণ ও বংশরক্ষা। পশুর সহিত নরের এই স্থলে সামান্য প্রভেদ ; কাজেই ঐ প্রবৃত্তিগুলিকে আমরা পাশব প্রবৃত্তি বলিয়া থাকি । কিন্তু মাহুষের একটু বৈশিষ্ট্য আছে। মানুষ অতি দুর্বল পশু, সবল শত্রুর নিকট আত্মরক্ষার জন্য সে আর একটা কৌশল আশ্রয় করিয়াছে । মানুষ দল বাধিয়া বাস করে ; সেই দলের নাম সমাজ । দল বাধিয়া থাকিতে হইলে স্বাধীনতাকে ও স্বাতন্ত্র্যকে