পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

З е е রামেন্দ্রম্বন্দর রচনাসমগ্র সংযত করিতে হয়—নতুবা দল ভাঙিয়া যায়। যে পাশব প্রবৃত্তি সমাজকে তুচ্ছ করিয়া মানুষকে কেবল আত্মরক্ষাব দিকে প্রেরিত করে, দলের কল্যাণার্থ মানুষ সেই পাশব প্রবৃত্তির সংযমে বাধ্য হয়। সহজাত সংস্কারের অভাবে অতীতের অভিজ্ঞতায় ভর দিয়া, ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি রাখিয়া, বুদ্ধিপূর্বক পাশব প্রবৃত্তিকে ংযত করিতে হয়। এই জন্য যে বুদ্ধি আবশ্বক, তাহার নাম ধৰ্ম্মবুদ্ধি ; ইহা বিশিষ্টরূপে মানবধৰ্ম্ম । ইহা সমাজবক্ষার অমুকুল, ইহা লোকস্থিতির সহায়। মানুষের পশুজীবনই ত দুই টানাটানির ব্যাপার , উহার উপর এই সামাজিক জীবন আর একটা নুতন টানাটানির স্বষ্টি করে। আত্মরক্ষার ও বংশরক্ষার অভিমুখে যে সকল প্রবৃত্তি, তাহ মানুষকে এক পথে প্রেরণ করে, আর মানুষের ধৰ্ম্মবুদ্ধি, যাহা মুখ্যতঃ সমাজরক্ষাব অর্থাৎ লোকস্থিতির অনুকূল, গৌণতঃ আত্মরক্ষার অনুকূল মাত্র, তাহ মানুষকে অন্য দিকে প্রেরণ করে। সামাজিক মাম্লষকে এই দুই টানাটনির মধ্যে পডিয়া সামঞ্জস্য বিধানের জন্য কেবলই চেষ্টা করিতে হয়। এই সামঞ্জস্য স্থাপনের নিবস্তর চেষ্টাই মানুষের নৈতিক জীবন । প্রবৃত্তি তাহাকে উদাম স্বাতন্ত্র্যের দিকে ঠেলে, আর ধৰ্ম্মবুদ্ধি তাহার অস্তরের অন্তর হইতে তাহাকে নিবৃত্তিমাগে চালাইতে চেষ্টা করে। এই দুই টানাটানির মধ্যে পডিয়া মনুষ্য রুপার পাত্র। এইখানেই মন্তষ্যের গোড়ায় গলদ ; Original sin , এইখানেই অমঙ্গলের মূল , সংসাব-বিষবৃক্ষের বীজ । Origin of evil ; মানব-জীবনের উৎকট বহস্যে ইহাই গোডার কথা । খোদার সঙ্গে শয়তানের চিরন্তন বিবাদের মূল এইখানে। মন্তয্যেব হৃদয় সেই জীবনব্যাপী মহাহবের কুরুক্ষেত্র –ধৰ্ম্মের সহিত অধৰ্ম্মের মহাযুদ্ধ সেখানে নিরস্তর চলিতেছে। বঙ্কিমচন্দ্র চারিখানি উপন্যাসে এই গোডার কথাটার আলোচনা করিয়াছেন। সেই মহাযুদ্ধের ক্ষেত্র হইয়া মানব-হৃদয় কিরূপ ক্ষত-বিক্ষত ও রক্তাক্ত হইয়া থাকে, তাহা তিনি সুন্দর করিয়া দেখাইয়াছেন, তাহাতেই তিনি উচ্চশ্রেণীর কবি । বিষবৃক্ষ, চন্দ্রশেখর, রজনী, আর কৃষ্ণকান্তের উইল, এই চারিখানি উপন্যাসের কথা আমি বলিতেছি। এই চারিখানি গ্রন্থের প্রতিপাদ্য বিষয় এক। প্রতাপ ও নগেন্দ্র, অমরনাথ ও গোবিন্দলাল, সকলেই কুসুম-সায়কের লক্ষ্য হইয়াছিলেন ; ধৰ্ম্মবুদ্ধির দৃঢ়তা ও প্রবৃত্তির তীব্রতার তারতম্যাকুসারে কেহ বা জয় লাভ করিয়াছিলেন, কেহ বা পারেন নাই। বীৰ্য্যবস্ত প্রতাপ সার-জীবন প্রবৃত্তির সহিত যুদ্ধ করিয়া সম্পূর্ণ জয় লাভ করিয়াছিলেন, তাহার মৃত্যুর পূৰ্ব্বে র্তাহার জীবনব্যাপী কঠোর ও নীরব সাধনার বিষয় জগতের লোকে জানিতে পারিয়াছিল। মোহমুগ্ধ অমরনাথ আপনার পিঠের উপর আকস্মিক পদস্খলনের স্থায়ী চিহ্ন ধারণ করিয়া তাহার স্বাভাবিক দম্ভের বলে পরবর্তী জীবনে সন্ন্যাসী সাজিয়া বেড়াইয়াছিলেন ; পত্নীবৎসল নগেন্দ্রনাথ আপনার আত্মাকে ছিন্ন-ভিন্নবিদীর্ণ করিয়া অনাথ পিতৃহীনা বালিকার প্রতি দয়াপ্রকাশের ফল ভোগ করিয়াছিলেন ; আর সূৰ্ব্বাপেক্ষা কৃপাপাত্র গোবিন্দলাল সৰ্ব্বতোভাবে আপনার অনধীন ঘটনাচক্রের নিষ্ঠুর পেষণে নিস্পিষ্ট হইয়া আপনাকে কলঙ্ক-হ্রদে নিমগ্ন