পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত-কথা : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় S o\రి প্রচার করেন, বাঙ্গলায় বেদান্তশাস্ত্র প্রকাশ করেন , দেশের লোকের মতি-গতি ফিরাইবার জন্য দেশের লোকের অবোধ্য ভাষায় দেশের লোককে সম্বোধনের অস্তুত প্রণালী তাহার স্থিরবুদ্ধি সঙ্গত বলিয়া গ্রহণ করে নাই। এমন কি তিনিই বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে বাঙ্গালী ভাষায় প্রথম ও শেষ ব্যাকরণ লিখিয়৷ গিয়াছেন। রামমোহন রায় যাহা বুঝিয়াছিলেন, তাহার পরবর্তী বাঙ্গালীরা তাহ বুঝিতে পারেন নাই। হিন্দুকালেজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিপন্ন হইয়া গেল যে, হিন্দুস্থানে হিন্দুসস্তানের আশ্রয় বা অবলম্বন হিন্দুসন্তানের জ্ঞাতব্য বা রক্ষিতব্য কিছুষ্ট নাই। বর্বর জাতির প্রাচীন সাহিত্যে ক্ষীরসমুদ্র ও দধিসমুদ্রের কথা ভিন্ন আর কোন কথা নাই সিদ্ধান্ত কবিয়া লর্ড মেকলে এদেশে পাশ্চাত্যশিক্ষা আনয়ন করিলেন। বিদেশের এই নুতন আমদানি শিক্ষাকে এদেশের লোকে সমাদরে গ্রহণ করিল ও তাহার সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত করিয়া বসিল যে, এই বর্ববরের ভাষায় সাহিত্য স্বষ্টির চেষ্টা সম্পূর্ণ বৃথা হইবে। ইংবেঙ্গী শিক্ষার প্রথম ধাক্কায় আমাদিগকে ঘর হইতে বাহিরে লইয়া পরের দ্বারে ভিক্ষাধিবেশে স্থাপিত কবিয়া ছিল, বঙ্কিমচন্দ্র আমাদিগকে আপন ঘরে ডাকিয় আনেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় বাঙ্গল। ভাষাকে সংস্কৃত করিয়া উহাকে সাহিত্য-সৃষ্টির উপযোগী করিয়াছিলেন, বঙ্কিমচন্দ্র উহাকে পুনঃসংস্কৃত করিয়া বাঙ্গলা-সাহিত্যের স্বষ্টি করিয়া গিয়াছেন। ইংবেজী লিখিয়া যশস্বী হইবার অস্বাভাবিক দুরভিলাষের বন্ধন হইতে বঙ্কিমচন্দ্রই আমাদিগকে মুক্তি দিয়া গিয়াছেন। বঙ্কিমচন্দ্র যাহার মূলে নাই, সে জিনিষ বাঙ্গাল দেশে চলে না। রামমোহন রায় বাঙ্গল ভাষার সাহায্যে বাঙ্গলা-সাহিত্যের সৃষ্টির প্রয়াস পাইয়াছিলেন, কিন্তু তাহার চেষ্টা চলে নাই , তাহাব পববৰ্ত্তী শিক্ষিত বাঙ্গালী সেচ গতির রোধ করিযাছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংস্কৃত ভাষার ও সংস্কৃত সাহিত্যের পুণ্য তোয়ে বাঙ্গল। ভাষাকে স্নান করাইয় তাহার দীপ্ত কলেবর শিক্ষিত-সমাজের সম্মুখে উপস্থিত করিয়াছিলেন , কিন্তু শিক্ষিত-সমাজ তাহার প্রতি শ্রদ্ধাপ্রকাশ কৰ্ত্তব্য বোধ করে নাই। রামমোহন রায়েব ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দেব-দেহের জ্যোতিৰ্ম্মণ্ডিত শিরোভূষণ হইতে একখানি মাণিক্য অপসারণ না করিয়াও আমরা স্বীকার করিতে পাবি যে, তাহারা যে কার্ঘ্যে অসমর্থ হইয়াছিলেন, বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতিভা অবলীলাক্রমে সেই কার্য সম্পাদনে সমর্থ হইয়াছিল। আমার প্রিয়স্নহৎ শ্ৰীযুক্ত হীরেন্দ্রনাথ দত্ত মহোদয় সে দিন রাগের মাথায় তাহার বহু পরিশ্রমে উপাজিত ইংরেজী বিশ্ববিদ্যালয়-দত্ত ডিপ্লোমাথানিকে চোত কাগজ বলিয়া ফেলিয়াছেন। উপস্থিত প্রবন্ধলেখকেরও ঐরূপ একখানি কাগজ আছে ; কিন্তু যখন উহার উপর নির্ভর করিয়াই জীবিক অর্জন করিতেছি এবং উহার বলেই আজি আপনাদের সম্মুখে দাড়াইতে সাহস করিতেছি, তখন ঐ কাগজখানির প্রতি ওরূপ অপভাষা প্রয়োগ করিতে চাহি না । এ বৎসর অনেকে বিলাতী লবণ খাইব না, এই জেদ করিয়াছেন, কিন্তু আমাদের রক্তবিন্দুর রাসায়নিক বিশ্লেষণে এখনও ঐ দ্রব্যের অস্তিত্ব ধরা পড়িবে। এত দিন ধরিয়া বিলাতী লবণ হজম করিয়া তাহার গুণ গাহিব না, পণ ধরিয়া বসিলে নিমকহারামি হইবে। পাশ্চাত্য শিক্ষা