পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$br রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দুরাকাঙ্খা থাকে না এবং টোল খুলিয়া সময়ে সময়ে শ্রাদ্ধের বিদায় ও বড়লোকের বাড়ী কিঞ্চিৎ বৃত্তি ভিন্ন লাভের আশা নাই ; তার জন্য আবার সারা বৎসর কতকগুলি ছাত্র পুষিতে হয়। কাজেই টোলের যে ছাত্র অমরকোষ মুখস্থ করিতেছে, সে সেই অমরকোষেরই খাতিরে ; যে স্মৃতির ব্যবস্থা কণ্ঠস্থ করিতেছে, ব্যবস্থাপত্ৰ দিয়া কিঞ্চিৎ অর্থাগমের সম্ভাবনা থাকিলেও মোটের উপর সে স্মাৰ্ত্ত বলিয়া নাম জাহির করিতে চাহে, সেই প্রলোভনে। যে, যে শাস্ত্র শিখিতে আসিয়াছে, সে সেই শাস্ত্রে কিঞ্চিৎ বুৎপত্তি লাভ করিয়া কিঞ্চিং খ্যাতি লাভ করিবে, সেই প্রত্যাশায়। জন্মস্থান হইতে পচিশ ক্রোশ দূরে অধ্যাপক আবিষ্কার করিয়া যে ছাত্র তাহার নিকট ন্যায়ের ফাকি শিখিতে যায়, সে নিতান্ত স্বেচ্ছাক্রমেই যায়—কেহ তাহাকে জোর করিয়া পাঠায় না, কেহ তাহাকে স্কলারশিপের প্রলোভন দিয়া ডাকেও না । সে নিতান্তই ন্যায়ের ফাকি শিখিতেই যায়—অন্য কোন ফাকি দিতে , বা শিখিতে যায় না। এখানে উভয় পক্ষে পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য রহিয়াছে। তাহার যতটুকু ক্ষমতা আছে, তাহার সাহায্যে যতটুকু পারে তাহ শিথিবীর জন্য যায় এবং অধ্যাপক যখন তাহাকে গ্রহণ করেন, তখন র্তাহার যতটুকু বিদ্যা আছে, তাহ দানের জন্যই গ্রহণ করেন। উভয়ের সম্পর্ক এইরূপে স্থাপিত হয়, কিন্তু সেই সম্পর্কে উভয় পক্ষে পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য থাকে, কোনরূপ আইনকামুনের ৰাধ্যবাধকতা থাকে না ; প্রতিনিধি দ্বার। হাজিরা বহিতে হাজিরা লিখাইবার দরকারই হয় না । ছাত্র যাহা পড়িতে চায়, তাহাই পড়ে ; শিক্ষক যাহা পড়াইতে পারেন, তাহাই পড়ান। কোথাও কোন দারোয়ান থাকে না, কেরানী থাকে না, রেজিষ্টারির খাত থাকে না, জরিমান থাকে না, লেক চারের ঘণ্টা পৰ্য্যন্ত নিন্দেশ থাকে না । অথচ শিক্ষকের সহিত ছাত্রের যে প্রীতিবন্ধন না থাকিলে শিক্ষা মাত্রই অপশিক্ষায় পরিণত হয়, তাহ বৰ্ত্তমান থাকে। ছাত্রকে বেতন দিতে হয় না, হোষ্টেল ভাড়া ও বোডিং খরচাও দিতে হয় না ; উপরন্তু শিক্ষকের গৃহে বাস করিয়া, শিক্ষকের অন্নে পালিত হইয়া, শিক্ষকের পরিবারভুক্ত হইয়া থাকিতে পারে। তৎপরিবর্তে ছাত্র শিক্ষকের কাঠ চেলায়, ভাত রাধে, তলপী বহে, এবং–এবং — বহুষ্করে! তুমি বিদীর্ণ হও—সময়ে অসময়ে অধ্যাপকের ফাট পায়ে তেল মালিস করে । আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, এই সকল গহিত ভদ্রাঙ্কুচিত কৰ্ম্মে ঘৃণা বোধ না করিয়৷ শ্লাঘা বোধ করাই সেখানে রীতি । এই যে বিনা বেতনে বিদ্যাদান—যাহা ভারতবর্ষের চিরদিনের অভ্যস্ত—বৈদেশিকের এই ব্যাপারের পূর্ণ মাহাত্ম্য কিছুতেই বুঝিতে পারেন না। তাহাদের ধাতুর সহিত ইহা মিলিবে না। আধুনিক পাশ্চাত্ত্য নিয়ম হইতেছে—লেন-দেনার ব্যাপার ; তুমি যখন আমার নিকট উপকার পাইতেছ, তখন তাহার মূল্য আমাকে দিবে না কেন ? এক পক্ষে দান, অন্য পক্ষে প্রতিদান, এ কালের হিসাবে এই ব্যবস্থাই স্বাভাবিক। ইহার বিপরীত ব্যবস্থা—অর্থাৎ এক পক্ষে দান, অন্য পক্ষে গ্রহণমাত্ৰ—ইহা অস্বাভাবিক— এই ব্যবস্থার ভিত্তির উপর কোনরূপ সামাজিক অনুষ্ঠান স্থায়িভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করিতে পারে মা। এই ব্যবস্থার পক্ষে বলিবার আছে। যাহা গ্রহণ করিব, তাহা মূল্য দিয়া লইধ, কাহারও অনুগ্রহের উপর লইব না, সৰ্ব্ববিধ স্বাতন্ত্র্যের এই মূল ভিত্তি। এইরূপ প্রমুখাপেক্ষিতা, পরাহুগ্রহে নির্ভর ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্যের অনুকূল হইতে পারে না এবং