পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত-কথা ; উমেশচন্দ্র বটব্যাল રર. ૧ দৃঢ়তার অভাব প্রকাশ করে মাত্র। এই অবস্থায় যিনি অন্য কার্ধে লিপ্ত হইয়াণ দেশের অতীত স্মৃতি জাগরিত করিবার জন্য কিঞ্চিম্মাত্র উদ্যম দেখাইয়াছেন, তিনি সার্থকজন্ম । উমেশচন্দ্র এই চেষ্টা করিয়াছিলেন। র্তাহার বৈদিক প্রবন্ধাবলীর সমালোচনা আমার সাধ্য নহে। তিনি কালস্রোতে নীয়মান যে দুই একটি চিহ্ন মাত্র অবলম্বন করিয়া অতিদূরস্থ বিস্মৃতপ্রায় অতীত দেশের চিত্রাঙ্কনে প্রয়াস পাইয়াছিলেন, তাহাতে কতদূর কৃতকাৰ্য্য হইয়াছেন, তাহার নির্ণয়ে আমি সমর্থ নহি । তাহার বৈদিক প্রবন্ধাবলী জনসমাজে তেমন সমাদর লাভ করিয়াছে, তাহাও বোধ হয় না। তাহার আবিষ্কৃত তথ্যে সকলেই আস্থা স্থাপন করিবেন, তাহাও মনে করি না। অল্প প্রমাণ আশ্রয়ে অধিকাংশ স্থলে কল্পনার সাহায্যে যে ইতিহাস আবিষ্কৃত হয়, তাহার যাথার্থ্যে সন্দেহ চিরকালই থাকিবে । অন্যের পক্ষে যাহাই হউক, উমেশচন্দ্রের বৈদিক প্রবন্ধসমূহ আমার নিকট অয়স্কাস্তের কাজ করিত। একটা অনিবাৰ্য্য মোহের আবেগে আমি সেই রচনাবলীর প্রতি আক্লষ্ট হইতাম । তিনি পাশ্চাত্য পদ্ধতি অবলম্বন করিয়া দেশের প্রাচীন অবস্থার আলোচনা করিতেন ; কিন্তু কেবল বৈদেশিক মতের অনুসরণ করিয়া যাইতেন না, স্বাধীনভাবে নৃতন পথে চলিতে চাহিতেন। স্বাধীন চিন্তা তাহাকে যে পথে চালাইত, তিনি সেই পথে চলিতেন । র্তাহাব এক-একটি প্রবন্ধ বৈদিক কালের আর্য্যসমাজের এক-একটি পট মানস-চক্ষুর নিকট উজ্জ্বল আলোকে ধরিয়া দিত। সেই পট যে সৰ্ব্বত্র প্রকৃত তথ্যের অঙ্কনে সমর্থ হইয়াছে, তাহা আমিও বিশ্বাস করিতাম না ; কিন্তু সেই পটের অভিনবত্ব, তাহার স্পষ্টতা, তাহার ঔজ্জ্বল্য দেখিয়া চমৎকৃত হইতাম । কল্পনার তুলিক যে স্থানে অস্থানে বিবিধ বর্ণের বিন্যাস করিয়৷ তাহাকে মৃত্তি প্রদান করিত, তাহ বুঝিতাম। অতিরঞ্জনই হয়ত তেমন ঔজ্জল্যের হেতু, ইহাও সম্ভবপর হইতে পারে। তথাপি সেই পট এক একখানা যখন দৃষ্টপথ হইতে সরিয়া যাইত, তখন মুখস্বপ্নের স্মৃতির মত মনের মধ্যে স্থায়ী রেখা অঙ্কিত করিয়া যাইত । ইহা ভারতবর্ষের অতীত সমাজের অন্যান্য ইউরোপীয় চিত্রকরগণের অঙ্কিত চিত্র হইতে কত বিভিন্ন । হয়ত ইহা কল্পনাকৃত অতিরঞ্জনে বিকৃত ও অসত্য, হয়ত আত্যন্তিক স্বজাতিপ্রিয়তা হইতে উদ্ভূত হওয়ায় ও আত্যস্তিক স্বজাতিপ্রিয়তার উৎপাদক বলিয়া বৈজ্ঞানিকের নিকট সম্পূর্ণ শ্রদ্ধার অনধিকারী। কিন্তু ইহার মূল্যনিৰ্দ্ধারণ অন্যরূপে করিতে হইবে। ইহা যে অস্পষ্ট স্মৃতি জাগাইয়া দিত, যে আকাঙ্ক্ষার, যে অতৃপ্তির উদ্দীপনা করিত, তন্দ্বারা ইহাব মূল্যের পরিমাণ করিতে হইবে। এই আকাঙ্ক্ষার ও অতৃপ্তির উদ্বোধনই এখন আমাদের প্রয়োজন। আমাদের অলস, জড় ও সুপ্ত চিত্তবৃত্তিসমূহকে প্রবোধিত করিতে এই আকাঙ্ক্ষার ও অতৃপ্তিরই এখন প্রয়োজন । কৰ্ম্মসম্পাদনে আমাদের এখন শক্তি নাই, সত্যাবিষ্কারে আমাদের ক্ষমতা নাই। এখন কৰ্ম্মের প্রতি ও সত্যের প্রতি আমাদের আকাজক্ষার উদ্বোধন আবশ্যক । এই আকাজক্ষ হইতে উদ্যম জন্মিবে, এই উদ্যম কালে ফলপ্রসবে সমর্থ হইবে ।