পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত-কথা : রজনীকান্ত গুপ্ত ২৩১ সামাজিক ব্যবহারের অতুরাগী ছিলেন। কালভেদের সহকারে ব্যবস্থাভেদের প্রয়োজনীয়ত। তিনি অস্বীকার করিতেন না ; এবং শত বৎসর পূর্বে আচার বিষয়ে যে সকল শাস্ত্রীয় বিধিনিষেধ বৰ্ত্তমান ছিল, বৰ্ত্তমান কালে তাহার সবগুলির উপযোগিতা না থাকিতে পারে, ইহ স্বীকার করিতেও সম্ভবতঃ কুষ্ঠিত হইতেন না। ধৰ্ম্মশাস্ত্রনিদিষ্ট পথই যে সমাজভূক্ত ব্যক্তির অবলম্বনীয় পথ, এই স্থল সিদ্ধান্তের সহিত ঐকপ পরিবর্তনপ্রিয়তাব বস্তুতঃ কোন অসামঞ্জস্য নাই। ভগবান শাক্যমুনির সময় হইতে আজ পর্দ্যস্ত যে-সকল নূতন নূতন বেদবিরোধী সম্প্রদায় স্বল্প হইয়াছে, তৎপ্রতি কটাক্ষপাত করিতে বোধ করি এই জন্যই উমেশচন্দ্র দ্বিধ বোধ কবেন নাই । 轰 প্রেমাবতীর চৈতন্যদেবের চরিত সমালোচনকালে উমেশচন্দ্র যে ভাষাব ব্যবহার করিয়াছিলেন, তাহার আমি তাতুমোদন করিতে পারিব না। কিন্তু যে ভাবপবণ সমাজদ্রোহ ও কৰ্ম্মদ্রোহ প্লাম্বসম্মত নিদাম কৰ্ম্মপরত। হইতে আমাদের সমাজকে ভ্ৰষ্ট করিবার জন্য পুনঃ পুনঃ চেষ্টা করিয়৷ আসিতেছে, উমেশচন্দ্র তংপ্রতিকূলে দাড়াইতে সাহসী হইয়াছিলেন। রজনীকান্ত গুপ্ত % বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ সপ্তম বর্ষে পদার্পণ করিয়াছে। অদ্যকার সভাস্থলে উপস্থিত সভ্যগণের মধ্যে যাহারা এই সাত বৎসরের বৃত্তান্ত অবগত আছেন, তাহাদের অনেকেই জানেন, আমি পরিষদেব অধিবেশনে আহত হইয়া যদি কোন দিন একাকী সভাগৃহে প্রবেশ করিতাম, তাহ হইলে চারি দিকৃ হইতে আমার প্রতি প্রশ্ন হইত, “রজনীবাবু কোথায়, রজনীবাব কোথায় ?” আজিকার অধিবেশনেও আমি আহত হইয়া একাকী এই সভাগৃহে প্রবেশ করিয়াছি ; কিন্তু আজি কেহই জিজ্ঞাসা করেন নাই, রজনীবাবু কোথায় ? ছয় বৎসর পূৰ্ব্বে আমি তাহার সহিত বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদে প্রথম প্রবেশ করিয়াছিলাম। তদবধি পরিষদের সম্পৰ্কীয় সকল কাৰ্য্য সম্পাদনেই আমি তাহার সহচর ছিলাম ; যে দিন কোন কারণে র্তাহার সঙ্গ না পাইয়া আমাকে এক আসিতে হইত, সে দিন কোথায় যেন কিছু ফাক পড়িয়াছে বলিয়া বোধ হইত। ছয় বৎসর মাত্র অতীত না হইতে বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ সহসা তাহার জন্য শোক-প্রকাশীর্থ আমাকে আহবান করিবেন, তাহা কখনও স্বপ্নেও ভাবি নাই । Bengal Academy of Literatureযখন বিজাতীয় নাম ও বিজাতীয় বেশ ত্যাগ করিয়া আমাদের বঙ্গীয়সাহিত্য-পরিষৎ-রূপে প্রথম আবিভূত হয়, সেই দিন হইতেই রজনীবাবুর সহিত পরিষদের নিতান্ত নিকট-সম্বন্ধ স্থাপিত হইয়াছিল। রজনীবাবুর সহিত পরিষদের কত নিকট-সম্পর্ক ছিল, তাহা পরিষদের প্রাচীন সদস্য মাত্রই অবগত আছেন ; পরিষদের আকৃত্রিম বন্ধুস্বরূপে তিনি সদস্যমণ্ডলীর শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন ; বঙ্গসাহিত্যের অনুরক্ত ভৃত্যস্বরূপে তিনি বঙ্গের সাহিত্যিক সমাজের শ্রদ্ধা পাইয়া