পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

象や8 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র গিয়া পিতৃক্লত্য সমাধান করিয়া আসিয়াছিলেন ; তাহার জীবনের সর্বপ্রধান কার্য সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাসখানি শেষ করিবার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করিতেছিলেন। তিনি কথায় কথায় হাসিতে হাসিতে প্রায়ই বলিতেন, পরিবারবর্গের জন্য একটা ব্যবস্থা করিয়া শীঘ্রই কাণীবাসী হইবেন । বিগত ২রা বৈশাখ তারিখে তিনি পরিষদের অপর চারিজন সদস্যের সহিত পরিষদের গৃহ নিৰ্ম্মণার্থ ভূমি প্রার্থনায় কাশীমবাজারে মহারাজ মণীন্দ্রচন্দ্র বাহাতুরের সমীপে যাত্র করেন। তৎপূর্বে র্তাহার হাতে সামান্য একটি ব্রণ হইয়াছিল। আমার সহিত প্রায় প্রত্যহই তাহার দেখা হইত। কিন্তু সেই ত্রণের বিয়য় আমি ও জানিতাম না। কাশীমবাজার হইতে ফিরিয়৷ ‘ আসিলে আরও কয়েকটা ব্ৰণ হয় ; তৎপরে পৃষ্ঠে একটা ত্রণ দেখ দেয়। ২১শে বৈশাখ ও ৩১শে বৈশাগ তিনি সেই পৃষ্ঠ-ব্রণের সংবাদ দিয়া আমার কনিষ্ঠ ভ্রাতাদিগকে পত্র লেখেন । ৩১শে বৈশাখের পর আর র্তাহার পত্র পাই নাই। ঐ পত্রের দুই চারি ছত্র উদ্ধত কুরিতেছি,—“উহা সাধাবণ ফোডা বলিয়া বোধ হয় না ; ডাক্তার বলেন, carbuncular boil ; কার্বঙ্কলের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়াতে আমার বড় চিন্তার কারণ হইয়াছে। ঘা ভাল হইলে একবার বাড়ী যাইব, কারণ সৰ্ব্বাগ্রজ মহাশয় বাড়ীতে বড পীড়িত অবস্থায় আছেন। ১০।১২ দিনের পর বাড়ী হইতে ফিরিব। তখন তোমাকে চিঠি লিখিব। শরীর ভাল থাকিলে তোমাদের ওখানে যাইবার বন্দোবস্ত করিব |" ইহার পর সিপাহী যুদ্ধের শেষ ভাগের শেষ ফৰ্ম্ম ছাপাখানায় দিয়া তিনি বাট গমন করেন এবং কার্বঙ্কলের পরিণত অবস্থা লইয়া ২৫শে জ্যৈষ্ঠ বৃহস্পতিবার কলিকাতা ফিরিয়া আসেন। তখন তাহার জীবনের আশা ছিল না । রজনীবাবু ফিরিয়া আসিয়া আমাদের বাড়ী আসিবেন, আমি ও আমার বন্ধুগণ যে সময়ে ব্যগ্র ভাবে এই প্রতাক্ষায় ছিলাম, সেই সময়ে সংবাদ আসিল, আমাদের সেই আশা আর পূর্ণ হইবার নহে। ৩০শে জ্যৈষ্ঠ মঙ্গলবার রাত্রি দেড়টার সময় রজনীবাবু ইহজগৎ হইতে বিদায় গ্রহণ করিয়াছেন। তাহার জীবনের কার্য্য সম্পূর্ণ হইয়াছে, কিন্তু আমাদের আশা অপূর্ণ রহিয়া গেল। সাহিত্যসমাজে রজনীবাবুর স্থান কোথায় তাহ নির্ণয়ের এ সময় নহে। বাঙ্গালা-সাহিত্যে র্তাহার সম্পাদিত কার্য্যের সমালোচনা আমার সাধ্য নহে। অন্যে সেই ভার গ্রহণ করিবেন । বঙ্গীয়সাহিত্য-পরিষৎ তাহার একান্ত অনুগত সুহৃদকে হারাইয়াছে। পরিষদের জন্য তিনি যেরূপ পরিশ্রম করিয়াছেন, সেরূপ বোধ হয় সে সময়ে অপর কেহ করেন নাই । তিনি যে কার্য্যে হস্তক্ষেপ করিতেন, শ্রদ্ধার সহিত ও অমুরাগের সহিত তাহাতে প্রবৃত্ত হইতেন। সেই আন্তরিক শ্রদ্ধা ও অকৃত্রিম অনুরাগ পৃথিবীতে অতি বিরল সামগ্রী । পরিষদের সদস্যগণের মধ্যে অনেকেই সেই শ্রদ্ধার ও অতুরাগের পরিচয় পাইয়াছেন। আমি অনর্থক বাগ বাহুল্য দ্বারা পরিচয় দিবার চেষ্টা করিব না। ২ ১২৫৬ সালে ভাত্র মাসে মাণিকগঞ্জ মহকুমার অধীন মতুগ্রামে মাতুলালয়ে রজনীকাস্তের জন্ম হয়। তাহার পিতা wকমলাকান্ত দাসগুপ্ত তেওতা গ্রামে বাস করিতেন ।