পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত-কথা : রজনীকান্ত গুপ্ত ՀՎ)ձ তাহার পাচ পুত্রের মধ্যে রজনীকান্ত সৰ্ব্বকনিষ্ঠ । রজনীকাস্তের তিন ভ্রাতা অদ্যাপি বর্তমান আছন ; তন্মধ্যে শ্ৰীযুক্ত উমাকান্ত দাস মহাশয় ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটের কাৰ্য্য সুখ্যাতির সহিত সম্পাদন করিয়া সম্প্রতি পেনশন ভোগ করিতেছেন। সাত আট বৎসর বয়সে রজনীকান্তের কঠিন পীড়া হয় ও তাহার ফলে তাহার শ্রবণশক্তি চিরদিনের জন্য দুৰ্ব্বল হইয়া যায়। এই দৌৰ্ব্বল্যের জন্য র্তাহার বিদ্যালয়ে অধিক দূর পর্য্যন্ত অধ্যয়ন ও উপাধি লাভ ঘটয় উঠে নাই । বাল্যকালে তিনি কলিকাতায় আসিয়া সংস্কৃত কালেজে ভক্তি হয়েন। কিছু সংস্কৃত শিক্ষার পর আয়ুৰ্ব্বেদ অধ্যয়ন করিয়া ব্যবসায় চালাইবেন এইরূপ উদ্দেশ্য ছিল । সংস্কৃত কলেজে তিনি এনট্রান্স ক্লাস পয্যন্ত অধ্যয়ন করিয়াছিলেন মাত্র । বিদ্যালয় ত্যাগের পরবর্তী কালে তিনি কিছুদিন পরলোকগত কবিরাজ ব্রজেন্দ্রনাথ কণ্ঠভিরণের নিকট আয়ুৰ্ব্বেদ শিক্ষার্থ যাতায়াত কবিয়াছিলেন। তাহার ভ্রাতা গবর্ণমেণ্টের অধীন চাকর গ্রহণের জন্ত তাহাকে অনুরোধ করিয়াছিলেন । কিন্তু চিকিৎসা ব্যবসায় বা চাকরি কিছুই তাহার অভিপ্রায়াতুযায়ী না হওয়ায় তিনি ঐ পথে যান নাই । এই ময় ট্রতেই তাহার বাঙ্গল। রচনার প্রতি অত্যন্ত ঝোক ছিল ও বাঙ্গলা সাহিত্যের আলোচনা দ্বার। যশোলাভের বাঞ্ছ ছিল। র্তাহার রচিত প্রথম পুস্তক জয়দেব-চরিত’ বাঙ্গালা ১২৮০ সালে প্রকাশিত হয়। কিছু দিন পূৰ্ব্বে ঐ পুস্তক লিখিয়া তিনি রাজ। সার শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরের প্রদত্ত পুরস্কার পাইয়াছিলেন। তৎপরে ১২৮২ সালে প্রধানতঃ গোল্ডষ্ট্রকারের পাণিনি অবলম্বন করিয়া ‘পাণিনি’ পুস্তক প্রকাশ করেন। সাহিত্যচর্চায় জীবন অতিবাহিত করিবেন, রজনীকান্তের এইরূপ সঙ্কল্প ছিল। কিন্তু বঙ্গদেশে সাহিত্যচর্চায় জীবিকা চলিতে পারে কি না, তাহ তখনও প্রমাণসাপেক্ষ ছিল। সে সময়ে রজনীকান্তের আর্থিক অবস্থ ভাল ছিল না ; কলিকাতার খরচ অতি কষ্টে চালাইতেন । র্তাহার সমকালে যাহার। তাহার সহিত হিন্দু-হোষ্টেলে বাস করিতেন, তাহাদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধি গ্রহণ করিয়া পরবর্তী কালে সমাজে মান্যগণ্য হইয়াছেন । রজনীকাস্তের কোন উপাধি লাভ ঘাটয় উঠে নাই। শ্রবণশক্তির দৌৰ্ব্বল্য র্তাহার জীবিকার্জন বিষয়ে দারুণ অন্তরায় হইয়াছিল। এরূপ অবস্থায় ও এরূপ সময়ে সাহিত্যচর্চা দ্বার। জীবন অতিবাহনের সঙ্কল্প অসাধারণ সাহসের বা দুঃসাহসের পরিচায়ক । রজনীকাস্ত সেই সাহস বা দুঃসাহস লইয়া সাহিত্যচর্চা জীবনের ব্রতস্বরূপ অবলম্বন করিলেন। সাহিত্যের প্রতি আন্তরিক অনুরাগ না থাকিলে এরূপ ঘটিতে পারে না। মৌখিক অনুরাগ এইরূপ দুঃসাহস জন্মাইতে পারে না । বর্তমান যুগে আমাদের মধ্যে এইরূপ উদাহরণ বিরল। এই সময়ে তিনি স্বৰ্গীয় ভূদেব মুখোপাধ্যায়, ডাক্তার রাজেন্দ্রলাল মিত্র প্রভৃতির নিকট পরিচিত হন। ভূদেববাবুর অনুরোধে তিনি সামান্য পারিশ্রমিক লইয় ‘এডুকেশন গেজেটে প্রবন্ধ লিখিতে আরম্ভ করেন। রজনীকান্তের এই সময়ে প্রায় নিঃস্ব অবস্থা। তথাপি তাহার প্রবল সাহিত্যানুরাগ