পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

38 е রামেন্দ্রস্থলদর রচনাসমগ্র লইয়া তখনই সেই কার্য্যে প্রবৃত্ত হইয়াছে। র্তাহাজের ভাষায় যে বল আছে, ষে তীব্রতা আছে, যে বৈচিত্র্য ও বিভিন্ন-মুখত আছে, এবং প্রয়োজন মত ঐশ্বধ্য আছে, বলেন্দ্রের ভাষায় সে সকল না থাকিতে পারে, কিন্তু ইহার স্থিরতা ও দৃঢ়তা ও স্বচ্ছপ্রাঞ্জলতা ও সরস-কোমলতা তাহার রচনাকে কাব্যের সীমামধ্যে রাখিয়া দিয়াছে। লেখকের ভাবুকত ও লিপিকৌশল উভয়ের মূলস্থ শক্তি-সামঞ্জস্যবোধ ও সংষম। এই দুইটি না থাকিলে সুরুচি থাকে না । বলেন্দ্রের আলোচ্য বিষয় অনেক ছিল ; কাব্য ও কলাবিদ্যা, মানব-সমাজ ও মানব জীবন, এইরূপ নানাবিধ বিষয়ের তিনি আলোচনা করিয়াছেন। এই বিচিত্র বিষয়ের মধ্যে কোথায় কি দেখিবার, বুঝিবার আস্বাদনের ও উপভোগের আছে, তাহ। তাহাকে দেখিতে হইয়াছে ও দেখাইতে তিনি অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়া বিশ্লেষণ করিয়াছেন ও বহিরে দাড়াইয়া সমস্তটা দেখিয়াছেন ,—ফুলের ভিতর হইতে মধু আহরণ করিতে গিয়া বাহির হইতে ফুলের শোভাটা দেখিয়া লইতে ভুলেন নাই ; কোন একটা অবয়বের অস্বাভাবিক স্ফীতি বা হানতা বা অযথা-সন্নিবেশ যেখানে তাহার সামঞ্জস্য-বুদ্ধিকে আহত করিয়াছে, সেখানে মৃদু হাস্য ও শ্লেষের দ্বার। সেই ক্রটি দেখাইতে পরায়ুখ হন নাই। তৎকর্তৃক প্রাচীন বাঙ্গাল-সাহিত্যের সমালোচনায় ইহার ভুরি প্রমাণ আছে। কিন্তু কেবল বিশ্লেষণের দ্বারা দোষ দর্শন ও হীনতার আবিষ্কার তাহার উদ্দেশ্য ছিল না ; সৌন্দর্ঘ্যের আবিষ্কারই তাহার প্রধান কাৰ্য্য ছিল । যে সৌন্দৰ্য্য অন্যের চোখে প্রকাশ পাঠত না, তিনি তাহ বাহির করিয়া আনিয়া দেখাতীয় দিতেন। র্তাহার গ্রন্থাবলীর অধিকাংশ প্রসঙ্গ হইতে ইহাই প্রতিপন্ন হইবে । বৈজ্ঞানিকের সহিত সাহিত্যিকের একটি স্থানে মিল আছে। ইতর সাধারণ সকলেই সম্মুখে যাহ। পড়ে, তাহাই কুড়াইয়। লহয়৷ সেই কয়টা জিনিসকে জীবনের কাজে লাগাইয়া যেনতেন-প্রকারেণ তাড়াতাড়ি জীবন-যাত্রায় দৌড়িয়া চলিতেছে , আশে-পাশে যাহা যাহা আছে, তাহার প্রতি মনঃসংযোগের অবকাশ পাইতেছে না। কিন্তু কয়েক জন লোক এই আশে পাশে চাহিয়া, অন্যে যাহা দেখে না, তাহাই দেখেন এবং ইতর সাধারণকে যখন দেখান, তখন তাহারা নূতন কি দেখিলাম বলিয়া চমকিয়া উঠে। বৈজ্ঞানিক বলেন, দেখ, এত বাস্তবিক সত্যটা তুমি এত দিন দেখ নাই ; ইহা হইতে জীবনের কত প্রয়োজনসিদ্ধি, জীবনযুদ্ধে কত সাহায্য ঘটিতে পারে। সাহিত্যিক বলেন, দেখ, এত স্বন্দর দৃশ্যের প্রতি তুমি এতকাল তাকাও নাই ; ইহা হইতে কত আনন্দ মিলিতে পারে, জীবনযুদ্ধের আনুষঙ্গিক দুঃখ কত কমাইতে পারা যায়। একজন লোক যেখানে সত্যের, অন্যজন সেখানে সুন্দরের আবিষ্কার করেন। বিজ্ঞানের ও সাহিত্যের দৃষ্টি একই দিকে ; আবার উভয়েই যখন সেই সত্যকে ও সুন্দরকে শিবরূপে প্রতিপন্ন করেন, তখন বিজ্ঞান ও সাহিত্য উভয়েই তত্ত্ববিদ্যার পরম প্রকোষ্ঠে উপনীত হয়। এই আবিষ্কারের জন্য যে যোগ চাই, তাহা সকলের নাই ; কিন্তু একদেশদশিতl. দৃষ্টিবিভ্রম ও দৃষ্টিবিষ্কার এখানেও সাহিত্যিক ও বৈজ্ঞানিক উভয়ের কৰ্ত্তব্যসাধনের প্রধান অন্তরায়। এই অন্তরায় দূর করিতে সাধনা আবশুক ও সংযম আবগুক ; নহিলে উভয়েরই কৰ্ম্মে প্রমাদ ঘটে। সমালোচকের পথ যে বৈজ্ঞানিকের পথ হইতে