পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৌরীমঙ্গল :8ፄ দেখিয়া কলির রীত আশুতোষ হর । দয়া করি গোবিন্দ করিবে অবতার ॥ দ্রাবিড়ে হইবে জন্ম আচাৰ্য্য শঙ্কর ॥ গঙ্গাতীরে নবদ্বীপে মিশ্র পুবন্দর। তুর্দশ মত ভিন্ন করিয়া সন্ন্যাস । শচীগর্ভে জন্ম নিবে দেব গদাধর । মুক্তির সরণি প্রভু করিবে প্রকাশ । চৈতন্যকরণে নাম ধরিয়া চৈতন্য। রামাতুজ গোস্বামিন হইবে আচার্য্য। হরিনাম দিয়া আচণ্ডালে কৈবে ধন্য । সাত মত বিষ্ণুপথ কৰিবেন ধাৰ্য্য ॥ ধরিয়া চৈতন্যবেশ ভ্ৰমি দেশে দেশ। ইহাতে পাইবে মুক্তি বহু সাধু নর। সৰ্ব্বনরে ভক্তির দিবেন উপদেশ ॥ তাহে কলি কামলোভী করিবে বিস্তর ॥ সেই জন ধন্য যে লইবে হরিনাম । কলিকালে পাপী নরে করিতে নিস্তার। ভবফাস কাটিয়া যাইবে বিষ্ণুধাম ॥ মত্রদেনের সহিত শালিবাহন বা শালবান রাজার বিরোধ কোন পৌরাণিক উপাখ্যান বা প্রাদেশিক জনশ্রুতি অবলম্বনে লিখিত হইয়াছে কি না, জানি না। মহাভারতের কর্ণ পর্বে কর্ণের সহিত শল্যের বিসংবাদ প্রসঙ্গে মুদ্রকগণের যেরূপ নিন্দাবাদ পডিয়াছিলাম, তাহতে মদ্রকগণ পঞ্জাবের উত্তরবর্তী কোন প্রদেশের অt1্যাচারবহিভূত অধিবাসী ছিল বলিয়া আমার ধারণ আছে। ডাক্তার ভাণ্ডারকরের প্রণীত দক্ষিণাপথের ইতিহাসে শালিবাহনোপাধিক অন্ধ্র ভূত্য রাজগণের সহিত বৌদ্ধ অনাৰ্য্য শক ভূপতিগণেব মালবদেশ ও তৎসন্নিহিত প্রদেশের আধিপত্য লইয়। যে বিবাদের ইতিবৃত্ত বর্ণিত হইয়াছে তাহা মনে রাখিলে গৌরীমঙ্গলোক্ত উপাখ্যান সেই ঐতিহাসিক ঘটনারই দূরশ্রত প্রতিধ্বনি বলিয়া বোধ হয়। “শক্তিতত্ত্বনিরূপণ” ও “ব্রহ্মলীলা বিরচন” যে গ্রন্থের উদ্দেশ্য, তাহাতে সৰ্ববত্র কাব্যরসের উচ্ছাসের আশা করা যায় না। কিন্তু যত দূর দেখিলাম, গৌবীমঙ্গল কাn্যাংশে নিতান্ত নিকষ্ট স্থান পাইবার যোগ্য নহে। রচনা প্রায় সৰ্ব্বত্রই সরস বোধ হইল। এমন কি, তীর্থ মাহাত্ম্য ও পূজাপ্রকরণাদিও পাঠকের সম্পূর্ণ বিরক্তি উৎপাদন করে না। স্থানে স্থানে পূর্ববর্তী কবিগণের অনুকরণচেষ্টা দেখা যায়। এক স্থলে ভারতচন্দ্রের অনুকরণে একটি তোটকের অবতারণ। দেখিলাম। পুথির প্রথমাৰ্দ্ধ প্রায় সমগ্ৰ ভাগই কৃষ্ণলীলাবর্ণনে গিয়াছে। এই স্থানে রচয়িত সরস ও কবিতাময় বৰ্ণনার যথেষ্ট অবসর পাইয়াছেন। আশা করি, সাহিত্য-পরিষং এই গ্রন্থের এক খণ্ড সংগ্রহ এবং উহার মুদ্রাঙ্কন ও প্রচার বিষয়ে কৰ্ত্তব্য নির্ণয় করিবেন । আমার বিবেচনায় প্রাচীন কালের লিখিত গ্রন্থ মাত্রই পরিষৎ কর্তৃক প্রচারিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। যে সকল গ্রন্থ কাব্যাংশে ও সাহিত্য হিসাবে নিকৃষ্ট, তাহাদেরও ঐতিহাসক ও ভাষাতত্ত্ববিৎ ও সমাজতত্ত্ববিদের নিকট যথেষ্ট মূল্য থাকিতে পারে। গৌরীমঙ্গলের কবিতার নমুনাস্বরূপ কতিপয় স্থল যদৃচ্ছাক্রমে নিয়ে উদ্ধৃত করিয়া দিলাম। ১। শ্ৰীকৃষ্ণ বন্দনা বন্দিব নাগর হরি মদনমোহনে। তুলনা দিবার যার নাই ত্রিভুবনে ॥ চরণের তলে অরুণের ছটা জিনি। পক্ক বিম্বাধর কিংবা রক্তপদ্মশ্রেণী ॥ দশ নখে শশী শোভা শারদ জিনিয়া। কনকপুর তাহে বুজুক মিলাইয়া । উরুর উপমা রম্ভ কদাচিত নয়। কটি অঁাটি পরিপাটি পীতবাস রয় ॥