পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বৰ্গীয় ব্যোমকেশ মুস্তফী 象金鸟 ইষ্টমন্ত্র স্মরণ করে। বাস্তবিকই এই ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে—সৰ্ব্বতোভাবে-ইষ্টদেবতায় আত্মসমর্পণ করিয়াছে—ইহার তুলনা নাই। - আত্মসমর্পণের বড় বড় দৃষ্টান্ত পুথিতে পড়িয়াছিলাম, ইতিহাসে পড়িয়াছিলাম— জীবনে অধিক দেখি নাই। ব্যোমকেশ মুস্তফী সামান্য ব্যক্তি, নগণ্য ব্যক্তি, অতি দরিদ্র গৃহস্থ ; ব্যোমকেশে যে দৃষ্টান্ত দেখিলাম, তাহা জীবনে অধিক দেখি নাই । পরিষংকে আপনার ভালবাসেন, আমিও ভালবাসি । আমরা অধিকাংশই "অবসরমত ভালবাসি । জীবনে অন্যান্য কাজ সমাপন করিয়া অবসরমত ভালবাসি । তাহাতে আমাদের দোষ নাই। আমাদের অনেককেই সংসারচিন্ত৷ করিতে হয়, অন্নচিন্তা করিতে হয় সংসারের সহিত লড়াই করিতে হয় । সেগুলাও আমাদের কৰ্ত্তব্যমধ্যে । সেই কৰ্ত্তব্য সমাপন করিয়া যগন অবসর পাই, তখন পরিষৎকে আমরা ভালবাসি । ব্যোমকেশের ভালবাসার বিশিষ্টত। এই যে, ব্যোমকেশ পরিষৎকে অবসরমত ভালবাসিত না । ব্যোমকেশকেও সংসারের সহিত লড়াই করিতে হইত ; সে বড় নিদারুণ লড়াই—একতরফ লড়াই। সংসার তাহাকে আক্রমণ করিয়াছিল—তাহাকে ক্ষতবিক্ষত করিয়াছিল, কিন্তু সে আত্মরক্ষায় অবসর পায় নাই । তাহর সমস্ত জীবনট পরিষদের কৰ্ম্মে নিযুক্ত ছিল ; পরিষদের কাজ করিতেই,—পরিষৎকে ভালবাসিতেই তাহার সমস্ত জীবনটা কাটিয়া গেল ; অন্য চিস্তার সে অবসর পাইল না – জীবনসংগ্রামে আত্মরক্ষার তাহার অবসর ঘটিল না। কত বার তাহাকে বলিয়াছ,—নিজের জন্য একটু চিস্ত কর, আপনার পোষাবগের জন্য একটু চিন্তা কর ; বলিয়াছি—এমন কি, সাধ্যসাধন করিয়াছি। জোর করিয়া প্রতিশ্রুতি লইয়াছি—এইবার নিজের জন্য কিছু করিব—অবসর পাইলেই করিব । কিন্তু সেই অবসর ঘটিল না। অামার অভিজ্ঞতা সঙ্কীর্ণ , কিন্তু সেই অভিজ্ঞতার সীমানামধ্যে এমন আর আমি দেখি নাই। অথচ জীবনযুদ্ধে ব্যোমকেশের ক্ষমতার অভাব ছিল না। দরিদ্র্য ছিল, কিন্তু অন্য দিকে বিশেষ অভাব ছিল না ; সামাজিক প্রতিপত্তির অভাব ছিল না, – আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবের অভাব ছিল না। সে বিষয়ে অভাব হইবার উপায়ই ছিল না – সেই সদাপ্রফুল্ল মুখ, সেই অকপট হৃদয় লইয়া বোমকেশ একবার র্যাহার নিকট গিয়াছে, তিনিই তাহার প্রীতির বন্ধনে পড়িয়াছেন। ব্যোমকেশ মুস্তফী"—কলিকাতার শিক্ষিতসমাজে ও ভদ্রসমাজে সৰ্ব্বত্রচারী, সৰ্ব্বত্রবিহারী, সৰ্ব্বত্র অবারিতদ্বার —ব্যোমকেশ মুস্তফীকে শ্রদ্ধা, প্রীতি, সম্মান না করিলে কাহারও উপায় ছিল না। তাহার উপরে ব্যোমকেশের সাহিত্যসাধন ছিল ; ব্যোমকেশ সাহিত্যরসে রসজ্ঞ ছিলেন। নিজে রস অঙ্কুভব করিতেন—সরস রচনাদ্বারা অন্যকে সে রসের আস্বাদন দিতে পারিতেন। এমন কি, “রোগাতুর শর্মা’র প্রলাপবাক্যেও সেই রসজ্ঞতার পরিচয় পাওয়া গিয়াছে। পরিচয় কেবল রসজ্ঞতায় কেন, ব্যোমকেশের চিন্তাশীলতা ছিল, গভারত ছিল, তীক্ষ দৃষ্টি ছিল। সকলের উপরে বৈজ্ঞানিকতা ছিল-পরিষৎ-পত্রিকায় বাঙ্গালী ব্যাকরণের আলোচুন্নয়, ভুট্যুর প্রচুর প্রমাণ த রা—১