পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বৰ্গীয় ব্যোমকেশ মুস্তফী : Pቖ; হৃদয় নামে একটা অবয়বের কথা শুনিয়াছেন। অভিধানে এই শব্দটি না থাকিলে আজকালকার বাঙ্গালা সাহিত্য বোধ করি অচল হইত। ব্যোমকেশের ভিতরে এই হৃদয়টা অত্যন্ত জীবন্ত অবস্থায় বৰ্ত্তমান ছিল। ব্যোমকেশের ক্ষয়রোগশীর্ণ বক্ষের ভিতরে একটা বৃহৎ হৃৎপিণ্ড ছিল—সেই হৃৎপিণ্ডের মধ্যে উষ্ণ, রক্ত বিদ্যমান ছিল ; মাঝে মাঝে তাহ টগবগ করিয়া ফুটিয়া উঠিত। বাহিরে তাহার কোন উপদ্রব কোন উৎপাত দেখা যাইত না ; কিন্তু র্যাহারা বোমকেশের সহিত অন্তরঙ্গভাবে মিশিয়াছেন, তাহারা জানেন, সেই উষ্ণ রক্তধারা সময়ে সময়ে কিরূপ বেগে প্রবাহিত হইত। - এই কারণে ব্যোমকেশকে যন্ত্রমধ্যে আটকাইতে পারা যাইত না । সাহিত্য-পরিষদের সভাপতি, সম্পাদক, সহকারী সম্পাদক, সকলেই ইহার সাক্ষী। সাহিত্য পরিষদের কমিটি, সব-কমিটি, আইনকাকুন, নিয়মাবলী, বিধিনিষেধ, কিছুতেই ব্যোমকেশকে শাসনে আনিতে পারে নাই । ব্যোমকেশের একট। গে| ছিল,—পরিষদের হিতার্থ নিজে যাহা ভাল বুঝিবে, ব্যোমকেশ তাহ করলেই—আইনকাহনে, বিধিনিষেধে ব্যোমকেশকে কিছুতেই বাধিয়া রাখিতে পরিবে না। ব্যোমকেশের কল্পনাশক্তি অসাধারণ ছিল –কিসে সাহিত্য-পরিষৎ বড হইবে, কিসে ইহার কাজের প্রসার হইবে, কিসে ইহার প্রতিপত্তি বাড়িবে, ব্যোমকেশের মগজের মধ্যে দিবানিশি তদ্বিষয়ে কল্পনার খেলা চলিত। অধিকাংশ কল্পনাই খেল মাত্র ; সেই খেলা কাজে পরিণত করিতে হইলে কত বিঘ্নবিপত্তি আছে, ব্যোমকেশ সে দিকে দৃষ্টিপাতই করিত না। কেজো লোকে সে বিষয়ে আপত্তি করিতে গেলে ব্যোমকেশকে আঘাত লাগিত,—ব্যোমকেশের হৃদয়ে বেদন লাগিত। বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ কোন কাজে কেন যে অক্ষম হইবে, ব্যোমকেশ তাহা মনে করিতেই পারিত না । এই জন্য ব্যোমকেশের সহিত পরিষদের যন্ত্রচালক অন্যান্য সহকারীদের সৰ্ব্বদা ঠোকাঠুকি ঘটিত, বাদ-বিসংবাদের অভাব থাকিত না । তাহারা পরিষদের যন্ত্র স্বর্ভূভাবে চালাইতে চাহিতেন, ব্যোমকেশের সহিত তাহদের সর্বদা বনিত না—আমার সহিতও সৰ্ব্বদা বনিত না । আকাশবিহারী পাখীর মত ব্যোমকেশের কল্পনা সৰ্ব্বদাই উধাও হইয়। উদ্ধে উড়িতে চাহিত ;—আমরা স্থলচর জীব, তাহীকে কখনও খাচার মধ্যে পুরিয়া রাখিতে পারি নাই। ব্যোমকেশকে খাচায় পুরিতে পারি নাই ; কিন্তু বুঝিয়াছি যে, ব্যোমকেশের মত হৃদয়বান পুরুষকে যন্ত্রাঙ্গরূপে গণ্য করিলে চলিবে না । বুঝিয়াছি এবং তাহার মহাপ্রাণতাব সম্মুখে প্রণত হইয়াছি। ব্যোমকেশ যন্ত্রমধ্যে আপনাকে ধরা দেয় নাই বটে, কিন্তু যন্ত্রে যেখানে কুলায় না, যেখানে প্রাণের আবশ্যকতা, সেখানে ব্যোমকেশ নহিলে পরিষদের চলিত না। যেখানে রাত্রি জাগিতে হইবে, সেখানে ব্যোমকেশ ; যেখানে দেশ ভ্রমণ করিতে হইবে, সেখানে ব্যোমকেশ ; যেখানে ধনীর দরজায় দ্বারবানকে অতিক্রম করিয়৷ ভিক্ষাব জন্য চীৎকার করিতে হইবে, সেখানে ব্যোমকেশ ; যেখানে আপিস কামষ্টি করিয়া আপিসের অধ্যক্ষের বিরক্তিভাজন হষ্টতে হইবে, সেখানে ব্যোমকেশ ; যেখানে অসাধ্য সাধন করিতে হইবে, সেখানে লোমকেশ । ব্যাধিক, অনশনক্লিষ্ট শীর্ণ