পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ ২৬৯ প্রাচীনের ইতিহাস আলোচনা করেন নাই ; তাহার। এই ঋণদায়ে বদ্ধ হইয়। গিয়াছেন–র্তাহারা কি ধৰ্ম্মে পতিত হইয়া গিয়াছেন ? সে কথা তুলিয়া কাজ নাই। পিতৃপুরুষের কর্মের সমালোচনায় ফল নাই, সে অনেক কথা—তাহাতে পুথি বাড়িবে। তাহারা যদি ধৰ্ম্মে পতিত হইয়া থাকেন, তবে জ্ঞাতসারে হন নাই। আমরা জ্ঞানকৃত পাপে পাপী হইতেছি। বিজ্ঞান—বিজ্ঞান—আমরা বিজ্ঞান চর্চা করিব। যেন পদার্থবিদ্যা, আর, রসায়নশাস্ত্র আর দেহতত্ত্ব লইয়াই বিজ্ঞান ! যেন কলের গাড়ীতে, আর টিনের কানিস্তারেই বিজ্ঞান সীমাবদ্ধ ! মানবতত্ত্ব যেন বিজ্ঞানের পরিধির বাহিরে— ইতিহাসালোচনা যেন বিজ্ঞানের সীমার বহির্গত । বিজ্ঞান—বিশেষ জ্ঞান। যাহা কিছু জ্ঞানের বিষয়, তাহা বিজ্ঞানের বিষয়— আব্রহ্ম স্তম্ব পর্য্যন্ত । আমাদের ইতিহাস আমাদিগকেই লিখিতে হইবে। পরের উপর নির্ভর করিয়। থাকিলে চলিবে না। তাহাব জন্য যে পরিশ্রম আবশ্বক, তার জন্য প্রস্তুত হইতে হইবে। নতুবা আমরা আমাদিগকে চিনিব না , আমাদের ধাতুতে, মজ্জায় কি বল আছে, তাহ জানিব না ; আমরা নিজের পায়ে ভর দিয়৷ দাড়াইতে সাহসী হইব না। আমাদের স্নাযু্যন্ত্র শিথিল থাকিবে, আমরা ভূপৃষ্ঠে দাডাইয়া শবদেহ লইয়া পূতিগন্ধ উৎপাদন করিব। নতুবা আমরা আমাদের জননী মাতৃভূমিকে চিনিব না—আমাদের মাতৃভক্তি জন্মিবে না—সেই ভক্তি মহাভাবে পরিণত হইবে না—যে মহাভাব আমাদিগকে মহৎ কাৰ্য্যে প্রেরিত করিবে, যাহার বলে আমরা জয়শীল হইব—যাহার বলে আমরা লজ্জা হইতে ও অপমান হইতে নিষ্কৃতি লাভ করিব । একমাত্র পন্থা , —অনেক ভাবিয়া দেখিয়াছি, অন্য পন্থ। আমাদের নাই ;– আর সকল পথ বিপথ ও কুপথ। ইহাই এখন আমাদের কৰ্ম্ম-ইহাই আমাদের যুগধৰ্ম্ম । এতগুলা লম্বাচোঁড়া কথায় অসংযত লেখনীর চালনা করিয়া ফেলিলাম, বর্তমান প্রবন্ধের শীর্ষভাগে লিখিত ‘বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ’ নামক ক্ষুদ্র সমাজটির সহিত তাহার সম্বন্ধ কি, একটুকু বুঝাইয়া বলা আবশ্বক। ঐ ক্ষুদ্র সমাজের ক্ষুদ্র জীবনের ক্ষুদ্র কার্য্য স্বদেশের তত্ত্বের আলোচনা, উহার ক্ষুদ্র চেষ্টার ফল নিরতিশয় ক্ষুদ্র। উহা কাঠবিড়ালীর সাগরবন্ধন চেষ্টার মত ক্ষুদ্র ফল উৎপাদন করিয়াছে ও সম্ভবতঃ করিবে ; কিন্তু উহা কৰ্ত্তব্যের পথে চলিয়াছে, অথবা চলিবে আশা করি বলিয়াই আজ এই ক্ষুদ্র লেখনীর চালনা করিতে বসিয়াছি। একটা কথা বলিয়া রাখি। ঐ সমাজের সহিত উপস্থিত লেখকের বর্তমান বৎসরে একটু বিশেষ সম্পর্ক আছে ; উহা অস্থায়ী সম্পর্ক। ঐ সমাজের কুত বা কৰ্ত্তব্য কৰ্ম্মের সম্বন্ধে যাহা কিছু বলিব, তাহ আমার সম্পাদকীয় উক্তি বলিয়া যেন গণ্য না হয়। উহা আমার ব্যক্তিগত কথা ; উহার ফলাফলের জন্য ঐ সমাজ বা সমাজের সংস্কষ্ট অন্য কোন ব্যক্তি দায়ী নহেন। সাহিত্য-পরিষদের জীবনের এগার বৎসর পূর্ণ হইতে চলিল। উহা এই এগার বৎসরে কি করিয়াছে, একবার দেখা আবগুক ।