পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e রামেন্দ্রম্বন্দর রচনাসমগ্র আমি যত দূর জানি, প্রথমে যখন উহার উৎপত্তি হয়, তখন উহার উদ্দেশ্য কি, তাহার সম্বন্ধে অতি অন্মুট ধারণা ছিল। পরিষৎ স্বয়ং ঠিক জানিতেন না, তিনি কি কাজের জন্য অকস্মাং ধরাধামে অবতীর্ণ হইলেন। “বঙ্গ ভাষার ও বঙ্গসাহিত্যের সর্বাঙ্গীন উন্নতি সাধন”—এইরূপ একটা দীর্ঘ ছন্দের কথা উহার নিয়মাবলীর প্রথম পৃষ্ঠে মুদ্রিত আছে ; কিন্তু ঐ মুদীর্ঘ পদসমষ্টির তাৎপৰ্য্য কতটুকু, তাহ ভাল করিয়া বুঝিবার উপায় ছিল না। কেহ আশা করিয়াছিলেন যে, অসদগ্রন্থকে সম্মার্জনী প্রহারে সাহিত্যরাজ্য হইতে নির্বাসিতু করিয়া সাহিত্য-পরিধৎ বঙ্গীয় সাহিত্য চন্দ্রকে নিষ্কলঙ্ক শশধরে পরিণত করিবে। ভাগ্যে পরিষৎ সেই সম্মার্জনী ধারণ করেন নাই। ইংবেজের রাজ্যে স্বাধীন মুদ্র যন্ত্রের দিনে আবর্জন পরিষ্কার মুষের অসাধ্য ; ইংরেজের আইনে অসংকে অসং বলিলে আইনের আমলে আসিতে হয়। ঐ ব্যাপারে প্রবৃত্ত হইলে এতদিন পরিষদের সভ্যগণের পরস্পর সম্মার্জনী প্রহারে প্রভাসযজ্ঞের পুনরভিনয় হইত মাত্র । কেহ আশা করিয়াছিলেন, বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষৎ একটা রমণীয় ভীমকান্ত স্বরূপ সৰ্ব্বদোষ-বিমুক্ত বিশুদ্ধ আদর্শ বাঙ্গালা ভাষা গঠন করিয়া ফেলিবে , তাহাতে গ্রাম্যতা দোষ থাকিবে না, তাহতে শ্রুতিকটু শব্দ প্রয়োগ থাকিবে না, তাহাতে বিদেশী গন্ধ থাকিবে না ; তাহ পরম পবিত্ৰ সৰ্ব্বজনসেব্য বাঙ্গালী ভাষা হইবে। সাহিত্য-পরিষৎ তাহাও করিলেন না বা করিবার চেষ্টা করিলেন না। কেন না, দুষ্ট সরস্বতী মানবের রসনায় অবিভূত হইয়া মানবকে দুর্ভাষা ব্যবহার করান, সে দেবতাকে সংযত করিবার কোন উপায়ই সাহিত্য-পরিষদের হস্তে নাই। আর র্যাহারা সাহিত্য-পরিষদের নৌকাখানির কর্ণধার তাহারাই বিজ্ঞ জনের মতে দুষ্ট সরস্বতীব প্রধান সেবক । স্বতরাং তাহাদিগের উপর শাসনদণ্ড সঞ্চালনের কোন উপায় নাই । কেহ মনে করিয়াছিলেন, সাহিত্য-পরিষৎ রাশি রাশি সদগ্রন্থের প্রকাশ করিয়া বাঙ্গাল সাহিত্যকে একবারে উন্নতির পরাকাষ্ঠায় উপনীত করিবে। কিন্তু সদ্‌গ্রন্থ প্রকাশের জন্য সদগ্রন্থ-প্রণেতার আবশ্যক এবং সদগ্রন্থ-প্রণেতার প্রসবের ভার সম্প্রতি বঙ্গমাতার উপর। সাহিত্য-পরিষৎ এ বিষয়ে বঙ্গমাতাকে অব্যাহতি দিতে সম্প্রতি অক্ষম। অতএব এই উদ্দেশ্যও চলিল না। কেহ প্রার্থনা করিয়াছিলেন, দুঃস্থ সাহিত্য-সেবীদের সাহায্য করিয়া তাহাদিগের সাহিত্যসেবার সফলত্ববিধান পরিষদের প্রধান কৰ্ত্তব্য হওয়া উচিত। কিন্তু বর্তমান কালে সাহিত্য-পরিষৎ স্বয়ং ভিক্ষাভাও হস্তে গৃহস্থের দ্বারদেশে দণ্ডায়মান ; সেই ভিক্ষাজীবীর অন্নে সাহিত্য-সেবীর পোষণ অসাধ্য। একবার একজন সভ্য নীতিগ্রন্থ রচনা করিয়া সন্নীতির প্রচারের জন্য সাহিত্যপরিষংকে উৎসাহিত করিয়াছিলেন। বুদ্ধদেব ও যীশুখ্ৰীষ্ট যাহাতে সম্যকৃ-কৃতকাৰ্য্য হন নাই, সাহিত্য-পরিষৎ তাহাতে হস্তক্ষেপে সাহস করেন নাই । এইরূপে নানা জনে সাহিত্য-পরিষদের উদ্দেশু ও অভিসন্ধি সম্বন্ধে নানা কথা ফুলিয়াছিলেন। ঐ সকল উদ্দেশ্য যে সাহিত্য-পরিষদের লক্ষ্যের বহির্ভূত, তাহ