পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ-ভবন মহারাজ মণীন্দ্রচন্দ্রের সাদর আহবানে আমরা দুই বৎসর পূর্বে [১৩১৪ ] যখন কাশিমবাজারে সমবেত হইয়াছিলাম, তখন বঙ্গীয়-সাহিত্য-সম্মিলনের তৃতীয় অধিবেশন আমাদের আশার ও আকাঙ্ক্ষার বস্তুমাত্র ছিল ; সেই আশা পূর্ণ ও আকাঙ্ক্ষা তৃপ্ত হইবে কি না, তাহ আমরা কেহই জনিতাম না । আজ বাঙ্গালা দেশের পশ্চিম প্রান্ত হইতে যখন অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, স্বহ্ম, পুণ্ড, ও কামরূপকে ডাক পড়িয়াছে, আমরা সেই আহবান শুনিয়া এখানে সম্মিলিত হইয়াছি ; এবং এই সাংবৎসরিক সম্মিলনের স্থায়িত্ব বিষয়ে আমাদের সংশয় কতকট অপনোদিত দেখিয়া আনন্দ পাইতেছি। বাঙ্গালার সাহিত্য-সেবকগণ র্যাহার। আজ এখানে উপস্থিত হইয়াছেন, র্তাহারা পরস্পর পরিচিত হইবেন, ভাব-বিনিময়ের ও চিন্তা-বিনিময়ের অবসর পাইবেন, এবং র্যাহার এক পথের পথিকু, তাহারা পরস্পরের দৃঢ়তর বন্ধনে আবদ্ধ হইয়া গন্তব্য পথে অগ্রসর হইবার পরামর্শ করিবেন, এই আমাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু এই উদ্দেশ্যের অন্তরালে আরও একটা গুরুতর ও গভীরতর অভিসন্ধি রহিয়াছে, সে কথাটা আর একটু স্পষ্ট করিয়া বলা উচিত। আমরা যে কেবল পরস্পর পরিচয় লাভ করিতে চাহি, এমন নহে ; আমর। আমাদের বঙ্গভূমির সহিত পরিচিত হইতে চাহি। র্যাহার অঙ্কে আমাদের স্থতিকাগৃহ ও যাহার ক্রোড়ে আমাদের শ্মশান, র্যাহাকে জননী বলিয়া ডাকিয়া আমরা প্রাণের তিয়াষ মিটাইতেছি, তাহীর সহিত অন্তরঙ্গভাবে পরিচিত হইতে চাহি । দুঃখের কথা সন্দেহ নাই, কিন্তু বস্তুতই কি বঙ্গভূমির সহিত আমাদের সম্যকৃ পরিচয় আছে ? আমরা উৎকট শিক্ষাভিমানের গৰ্ব্ব করিয়া থাকি, কিন্তু বাঙ্গালার জলের ভিতর কোন রত্ব নিহিত আছে, বাঙ্গালার মাটিব অভ্যন্তরে কোন নিধি সঞ্চিত আছে, তাহ জানিবার জন্য পদে পদে আমাদিগকে রাজার জাতির মুখের দিকে তাকাইতে হয়। বঙ্গালার হাটে কি বেচা কেন হয় ও বাঙ্গালার ঘাটে লসিয়া কে কি তপ্তশ্বাস ফেলে, অমর কয় জনে তাহার তত্ত্ব লই ? আমর। যে স্বজাতি আজ সমস্ত ভারতবর্মকে উদ্ধমুখে আকৰ্ষণ করিয়া চলিবার চেষ্টা করিতেছে, সেই স্বজাতির মধ্যে কতটুকু বল আছে কতটুকু দৌৰ্ব্বল্য আছে, সে বিষয়ে আমরা কতটুকু সংবাদ লইয়া থাকি ? যে স্বজাতির সহিত অন্তরঙ্গভাবে, একাত্মভাবে পরিচয় ব্যতীত আমাদের জাতীয়তা বুদ্ধ-দের ন্যায় অলীক পদার্থে পরিণত হইবে, সেই স্বজাতির সম্বন্ধে, সেই স্বজাতির ঘরের কথা ও বাহিরের কথা সম্বন্ধে আমরা কতটুকু সন্ধান রাখি ? সন্ধান রাখি না, কিন্তু এখন হইতে সেই সন্ধান রাখিতে হইবে। আমার বিবেচনায় সেই সন্ধানের জন্যই আমরা দল বাধিয়া এখানে উপস্থিত হইয়াছি। ভাগীরথীর উৎস-সন্ধানের জন্য ভগীরথকে যেমন তপস্যা করিতে হইয়াছিল, আমাদের জাতীয়তার উৎস সন্ধানের জন্য তেমনি কঠোর তপস্যার সময় আসিয়াছে; যুগান্তরের সঞ্চিত আবর্জনা ও পাপপঙ্ক যদি ধুইয়া ফেলিতে চাহি, তাহা হইলে আমাদিগকে এই তপস্যায় প্রবৃত্ত হইতে হইবে ; বঙ্গদেশের শ্মশানক্ষেত্রে যে ভগ্নাস্থি ও দগ্ধ কঙ্কালের ভস্মরাশি স্থূপীকৃত হইয়া রহিয়াছে, তাহাতে যদি পুনর্জীবন সঞ্চার করিতে