পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা ; আনি বেসান্ট \סe < জীবন। নিরপেক্ষ স্থখ অসম্ভব ; দুঃখনিবৃত্তিই মুখ ; দুঃখনিবৃত্তিই পরম পুরুষাৰ্থ } দুঃখনিবৃত্তির উপায় শুদ্ধ জ্ঞানে। তত্ত্বজ্ঞানে মোক্ষ ও সত্যজ্ঞানে মোক্ষ । সত্যজ্ঞান কি ? না জগৎ কল্পনা ; আমি মাত্র অাছি ; জগৎ আমার কল্পনা, আমার স্বষ্টি, আমার অংশ। এই জ্ঞান লাভ হইলে বুঝিতে পারিবে, দুঃখ জীবনের সহচারী হইলেও আমারই কল্পিত পদার্থ। স্বতরাং দুঃখ আর দুঃখ থাকিবে না। ফল হইল সংসারে বিরক্তি—বৈরাগ্য। সকলেই যে বিরাগী হইয়া অরণ্য আশ্রয় করিয়াছিল, তাহা নহে ; তবে সেই অবধি হিন্দুর অস্থি মজ্জা শোণিতের সহিত একটা সংসারে বিরক্তি, কৰ্ম্মে অনাসক্তির রস মিশিয়া গিয়াছে, তাহ আজ পৰ্য্যস্ত বর্তমান । 酸 তাহার পর বুদ্ধদেব । বুদ্ধদেব জগতে দুঃখ ভিন্ন স্বখ দেখিতে পাইলেন না। কৰ্ম্মবশে জীব কেবল দুঃখের চক্রে ভ্রমণ করিতেছে, ইহাই দেখিলেন। বুদ্ধদেব আদেশ দিলেন, এই দুঃখ নিবৃত্তির আর কোন উপায় নাই। স্বার্থ বিসর্জন কর, পরের জন্য জীবন উৎসর্গ কর। ভোগবিলাস, সুখ ঐশ্বৰ্য্যের আকাঙ্ক্ষা পরিহার করিয়া সৰ্ব্বজীবে প্রীতি বিতরণ কর । ইহাই মনুষের কর্তব্য, ইহাই মনুষ্কের ধৰ্ম্ম, ইহাই মনুষের কৰ্ম্ম। এমন মহতী বাণী ইতিপূৰ্ব্বে নরকষ্ঠ হইতে কখনও নির্গত হয় নাই ; পরেও হইয়াছে কিনা সন্দেহ। বৈরাগ্য হহতে কৰ্ম্ম প্রস্থত হইল ; কৰ্ম্ম ‘ধৰ্ম্ম' আখ্যা প্রাপ্ত হইল ; শত্রু মিত্র হইল, পর আপনার হইল। আৰ্য্য অনাৰ্য্যের সহিত মিশিয়া গেল। ব্রাহ্মণ-শূদ্রের বৈষম্য দূরে গেল। বৌদ্ধ প্রচারক এই অপূৰ্ব্ব উপদেশ লইয়া দেশে বিদেশে বাহির হইল। হিমাচল লঙ্ঘন করিয়া ভারতসাগর পার হইয়া বুদ্ধপ্রচারিত প্রতিধর্মের বিজয়বৈজয়ন্তী উডউীন হইতে চলিল। ভারতবাসী ঐশ্বৰ্য্যপিপাসায় বা শোণিততুষ্ণায় কখনও স্বদেশের সীমা পার হয় নাই, ধৰ্ম্ম প্রচারের নামে জীবরক্তে ধরাতল অভিষিক্ত করে নাই । ধৰ্ম্মপ্রচার ভান করিয়া পরস্বাপহরণ দস্থ্যবৃত্তি অবলম্বন করে নাই। ভারতবর্ষের চতুসীমার ভিতরেই তাহার অধ্যবসায় চিরকাল আবদ্ধ আছে। একবার মাত্র সেই চতুসীমা পার হইয়াছিল ; কটিতে তরবারি ও করপুটে ধৰ্ম্মপুস্তক তাহার সঙ্গে যায় নাই। সঙ্গে ছিল কেবল মহন্যত্ব—ললাটে জ্ঞানের প্রতিভা ও কণ্ঠে প্রীতির অমৃতময়ী বাণী । প্রাচীন আৰ্য্যাবৰ্ত্তে জীবন-সংগ্রামের কঠোরতা ছিল না ; তথাপি জীবন দুঃখদুর্ভর হইয়া পড়িয়াছিল। কেন, ঠিক বলা যায় না। বোধ করি, ইহাই প্রাকৃত নিয়ম। অন্য দেশে এমন নয়। ইউরোপে জীবন-সমরের কঠোরতার মাত্রা পূর্ণ। অথচ জীবনে সেখানে আসক্তি প্রবল। যে কারণেই হউক, আৰ্য্যাবৰ্ত্তে জীবন দুঃখদুর্ভর হইয় পড়ে। দুঃখমুক্তি পরমপুরুষাৰ্থ বলিয়া গণ্য হয়। ফলে দাড়ায় বৈরাগ্য। বৈরাগ্য দুই মূৰ্ত্তি গ্রহণ করে ; দুই পথে চালিত হয়। কেহ বলেন—মুক্তি জ্ঞানে ; কেহ বলেন মুক্তি কৰ্ম্মে । জ্ঞানের অর্থ তত্ত্বজ্ঞান ও সত্যজ্ঞান, কর্থের অর্থ গ্ৰীতি ও মৈত্রী। বৈরাগ্যের স্রোত দুই মুখে প্রবাহিত হইয়াছিল। এখনও বোধ করি, দুই মুখেই দুই প্রবাহ চলিতেছে। দুই শ্ৰোত মিলিবে কি না, জানি না। যে দিন মিলিবে, মানবজাতির ইতিহাসে সেই দিন পুণ্য দিন। যে স্থানে মিলিবে ধরাতলে