পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\రీeస్క్రి রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র বা অধোগতির লক্ষণ লক্ষিত হয় নাই। কিন্তু ইহারই মধ্যে আর এক তান উঠিয়াছে, ইংরাজী বিদ্যা এ দেশের ক্ষেত্রে ফলিল না ; বাঙ্গালার মাটিতে কি বিলাতী ওকৃ গাছের বৃদ্ধি হয় ? এ দেশের মাটিতে বরং দেশী প্রাচীন সংস্কৃত বিদ্যার চাষ আবাদ করিলে কিছু ফল পাওয়া যাইতে পারে। চেষ্টা করিলে মন্দ হয় না। বিজ্ঞের দল স্মিতমুখে বলিতেছেন—আমরা পূৰ্ব্বেই জানিতাম, বিলাতি মাল মাত্রই ভুয়া ; কেবল বাহিরের চাকৃচিক্য দেখিয়া তোমরা আহলাদে আটখানা হইয়া একটা প্রকাণ্ড গণ্ডগোল আরম্ভ করিয়াছিলে ; এখন ঠেকিয়া শেখ ও পথে এস । স্বতরাং নব্য প্রাচীন, শিক্ষিত অশিক্ষিত, স্বদেশী বিদেশী, সকল সম্প্রদায়ের মধ্যেই একটা অতৃপ্তি ও আকাঙ্ক্ষার চিহ্ন দেখা যাইতেছে ; একটা নূতন পন্থার আবিষ্কার ও অনুসরণ না করিলে ভারতবাসীর মানসিক উন্নতির আর উপায় নাই ; সর্বত্র এইরূপ একটা ভাব অন্তরে অন্তরে খেলিয়া বেড়াইতেছে। নানা জনে নানা কথা বলিতেছে। ত্রিশ বৎসরের বেশী হইল, ইংরাজী বিদ্যার বহুল প্রচারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে ; বড় বড় অধ্যাপক বড় বড় জটিল শাস্ত্রের শিক্ষা দিয়া বৎসর ধরিয়া ভারতবাসীর মরিচা-ধরা মস্তিষ্ক আলোড়িত করিয়৷ দিতেছেন ; তথাপি এ পর্য্যন্ত ভারতবর্ষে একটা নিউটন জন্মিল না, একটা ফ্যারাডে জন্মিল না। কি পরিতাপ ! ভারতবাসীর মস্তিষ্কটারই বোধ হয় দোষ আছে। ডারউইনের মতানুসারে বানর ও মঙ্গুষ্যের মধ্যবৰ্ত্তী পৰ্য্যায়ভুক্ত জীবের কিছু দিন হইতে অনুসন্ধান হইতেছে। বোধ হয়, ভারতবর্ষের লোক সেই জীব । যাহাই হউক, সরস্বতী এ দেশে পদার্পণ করিয়া বন্ধ্যা হইলেন, অথবা কেবল অকালপ্রস্থত দুৰ্বল জীবের সংখ্যা বাড়াইতে লাগিলেন, এ দেশের পক্ষে এ বড় দুর্ণাম ও কলঙ্কের বিষয়। সুতরাং, এই কলঙ্করটনার ভিত্তি সম্বন্ধে একটু আলোচনা আবশ্যক হইতেছে । ফলে, কথাটা কত দূর সত্য, দেখা যাউক। বিলাতের মাটিতে নিউটন ফ্যারাডের মত লোক দুই দশটা করিয়া প্রতি বৎসর জন্মায়, এমন নহে ; স্বতরাং সে কথা বলিয়া হা-হুতাশ করিবার কোনও প্রয়োজন নাই। জাতীয় জীবনের পক্ষে ত্রিশ বৎসর, কি ষাট বৎসর এত অধিক সময় নহে যে, তাহার মধ্যে একটা প্রচণ্ড উন্নতি পরিলক্ষিত হইল না বলিয়া হাল ছাড়িয়া বসিতে হইবে। র্যাহার এরূপ আশা করিয়া বসিয়াছিলেন, তাহারা অন্য নানা সদগুণে বিভূষিত হইতে পারেন ; কিন্তু বুদ্ধি নামক গুণের জন্য র্তাহাদিগের প্রশংসা করিতে পারি না। যাহারা পঞ্চাশ ষাট বৎসর পূৰ্ব্বে ইংরাজী শিক্ষার প্রথম আমদানির সময়ে একটা কুরুক্ষেত্র ব্যাপার ঘটাইয়া আঠার দিনের মধ্যে ধর্মের রাজ্য সংস্থাপন করিয়া দিব স্থির করিয়াছিলেন, তাহাদের আস্ফালনেও কোনরূপ অধীর বা বিচলিত হইবার কারণ ছিল না। ফলে ইংরাজী শিক্ষার প্রচারে আমাদের প্রভূত উন্নতি খর মাই বলিয়া শোক তাপের কোনও কারণ নাই।