পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*○○8 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র মাত্র স্কন্ধে করিয়া সাহেবের নিকট উপস্থিত হইলে বেন্ত্রাঘাতের আশঙ্কা থাকিয়া যায়। জলের গেলাস মুখে তুলিবার সময় ফিল্টার-করা না থাকিলে ব্যাসিলাসের অবস্থিতির শঙ্কা জন্মে, এবং দেহে ব্যাধি ঘটিলে কবিরাজ মহাশয়ের প্রাচীন কফপিত্তঘটিত প্যাথলজির আশ্রয় লইতে সাহস হয় না। সুতরাং জ্ঞানস্পৃহা অত্যন্ত বলবতী থাকিলেও কিঞ্চিৎ অর্থাগমের উপায় না দেখিলে চলে না ; এবং ভিক্ষী ও চাকরি ভিন্ন অর্থাগমের তৃতীয় পন্থা এদেশে বর্তমান নাই । একটা কথা উঠিয়াছে, ভাল ছেলেদের জন্য বড়লোকে যদি বৃত্তি সংস্থাপন করিয়া দেন, তাহা হইলে ভাল ভাল মাথা হাইকোর্টের গ্রানিট দেওয়ালের আশ্রয় লইতে না যাইতে পারে। উত্তম প্রস্তাব সন্দেহ নাই, কিন্তু যে পৰ্য্যন্ত লাটবাহাদুরগণের শুভ বিদায় উপলক্ষ্যে প্রস্তরমূৰ্ত্তি স্থাপন দ্বাব পুণ্য সঞ্চয়ের সম্ভাবনা থাকিবে, তত দিন এ প্রস্তাব অরণ্যে রোদন মাত্র। গবর্ণমেণ্ট শিক্ষাবিভাগে দেশীয়দিগকে মোট বেতনে চাকরি দেন না, এই একটা আক্ষেপ আছে। কথাটা ঠিক আমাদের মত ভিক্ষোপজীবীর উপযুক্ত, সুতরাং প্রথমে উপস্থিত করিতে লজ্জা হয়। কিন্তু অদৃষ্টবশে যখন ভিক্ষাবৃত্তি আমাদের উপজীব্য এবং ইংরাজী বিদ্যাটাই আমরা পরের কাছে ভিক্ষাস্বরূপ গ্রহণ করিতেছি, তখন আর লজ্জা করিয়া কোন লাভ নাই। গবর্ণমেণ্টের উপর কতকট দাবীও আছে। গবর্ণমেণ্ট শিক্ষাবিভাগে নিয়োগার্থ বিলাত হইতে যে সকল মূৰ্ত্তি আমদানি করেন, অনেক স্থলে তাহাদের দ্বিপদত্বে সন্দেহ জন্মে। কৃষিকার্য্যের জন্য এদেশে গরু ও বিলাতে ঘোড়া ব্যবহৃত হয় । বিলাত হইতে ঘোড়া আমদানি করিয়া চাষে লাগাইলে হয়ত এখানে লাভ ঘটিতে পারে ; কিন্তু তাই বলিয়। বিলাতী গাধ। কি হিসাবে দেশী গরুকে পদচ্যুত করিবে, বুঝিতে পারি না। আমাদের বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়-প্রদত্ত শিক্ষাপ্রণালীর মূলে দোষ বর্তমান আছে। এই মূলষ্ঠ দোষের সংস্কার সাধন না হইলে কোনরূপ ফললাভের সম্ভাবনা নাই। বিশ্ববিদ্যালয়-প্রদত্ত শিক্ষায় আশানুরূপ ফল লাভ না দেখিয়া প্রাচীনের দল পুনরায় টোলে প্রবেশ করিয়া অমরকোষ মুখস্থ করিতে উপদেশ দিতেছেন ; এবং আমাদের ইংরাজ মনিবেরা আমাদের জাতিগত হীনতাকেই কারণ স্থির করিয়া আমাদের মনুষ্যজাতীয়ত্বে কিছু সন্দিহান হইয়াছেন। আমাদের বিবেচনায় আমাদের জাতির মনুষ্যধৰ্ম্মে সংশয় স্থাপনের সম্যকৃ কারণ এখনও উপস্থিত হয় নাই ; এবং দেশী পুথিগুলির বহুল প্রচারের জন্য ইংরাজী গ্রন্থগুলির উপর আমদানি মাশুল বসাইবার প্রস্তাবনা করিলেও ভবিষ্যতের আশা আছে । দোষ ইংরাজী বিদ্যার ত কখনই নহে ; এবং আমাদের জাতীয় চরিত্রেরও সম্পূর্ণ পরিমাণে নহে ; বিশ্ববিদ্যালয় যে প্রণালীতে শিক্ষা দিয়া থাকেন, তাহাতে বিদ্যার প্রতি বিশেষ অনুরাগ ঘটিবার সম্ভাবনা নাই, সুতরাং সেই প্রণালীর সংস্কারের একবার চেষ্টা করা উচিত। কোন দিকে সংস্কার চলিতে পারে, এ প্রবন্ধে উত্থাপন করিতে সাহসী হইলাম না। যদি কোন পাঠক নিতান্ত করুণাপরবশ হইয়। বর্তমান প্রবন্ধের এত দূর পর্য্যস্ত পাঠ করিয়া থাকেন, তাহার সহিষ্ণুতাকে ধন্যবাদ দিয়া এই প্রবন্ধের এই স্থলে উপসংহার করিলাম। ( সাহিত্য, শ্রাবণ ১৩r২ )।