পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : বর্ণাশ্ৰমধৰ্ম্ম లిఛె রটনা, আর ভ্রমরের অভিমান, আর কৃষ্ণকাস্তের শেষ উইল। সাগরবক্ষশায়ী জাহাজখানি টলিতে টলিতে এত দূর টলিয়াছে যে, আর উদ্ধারের আশা নাই। উদ্ধারের আশা নাই ; ম্যাকবেথের জীবনে এমন সময় উপস্থিত হইয়াছিল, তখন আর তাহার উদ্ধারের আশা ছিল না ; এবং গোবিন্দলালের জীবনে এমন সময় আসিয়াছিল, যখন তাহার উদ্ধারের আশা ছিল না। বাধের ক্ষয় হষ্টতে হইতে এমন সময় আসে, যখন আর স্রোতের গতি রোধ করিবার আশা রহে না । কথাটা সত্য, কিন্তু মনুষ্য মাত্রের পক্ষে অতি ভয়ঙ্কর লোমহর্ষণ সত্য। এই সত্যের সম্মুখে মানুষের হাসিবার বা উল্লাসিত হইবার কোন কারণ নাই। এই ভীষণ সত্য যে মানুষের চোখের উপর অহরহ উপস্থিত রহিয়াছে অথচ সুন্ধৰ্ব ইচ্ছ। করিয়া তাহা দেখে না, অথবা দেখিয়াও স্বীকার করে না, নিজে প্রবঞ্চিত হয় ও অন্যকে প্রবঞ্চনা করে, এই একটা পরম আশ্চর্য্যের বিষয়। যদিও বকরূপী ধৰ্ম্ম কর্তৃক পৃষ্ঠ হইয়া যুধিষ্ঠির তাহার আশ্চৰ্য্য ঘটনার যে তালিকা দিয়াছিলেন, সেই তালিকায় ইহার উল্লেখs ਜੋ । ইংরাজদের ম্যাকৃবেথে ও আমাদের কৃষ্ণকাস্তের উইলে এই সত্য তত্ত্ব-কথাটা খুব পরিস্ফুট করিয়া ধরা হইয়াছে। উভয়ে এই বিষয়ে সাদৃশ্ব। এই সাদৃত হয়ত পাঠকের নিকট উপস্থিত করিবার জন্য এত বাক্যব্যয়ের প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু নহিলে, প্রবন্ধের কলেবর বাড়ে না। ( ‘ভারতী, অগ্রহায়ণ ১৩০২ )। বর্ণাশ্রমধর্ম শ্ৰযুক্ত ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় মহাশয় কর্তৃক আলোচনা-সমিতিতে পঠিত বর্ণাশ্ৰমধৰ্ম্মবিষয়ক অতি উৎকৃষ্ট প্রবন্ধ শুনিয়া যে দুই চারিটি কথা মনে হইয়াছে, তাহা “বঙ্গদর্শনে’ প্রকাশযোগ্য বিবেচিত হইলে অনুগৃহীত হইব। প্রবন্ধের সমালোচনাকালে একটা কথা উঠিয়াছিল, এ কালে বর্ণাশ্রমধর্শ্বের ব্যবস্থা পূর্বের মত অক্ষুণ্ণ রাখা যাইতে পারে কি না। কথাটা সে সময়ে অপ্রাসঙ্গিক হইয়াছিল ; কিন্তু ইহার উত্তর বোধ করি দুপ্রাপ্য নহে। কোন সামাজিক ব্যবস্থাই চিরকাল সমান ভাবে চলিতে পারে না ও চলেও না । সমাজ যখন পরিবর্তনশীল, তখন সমাজস্থিতির ব্যবস্থাও পরিবর্তনশীল হইবে, ইহা স্বীকাৰ্য্য। বস্তুতই মন্ত্রর সময়ের ব্যবস্থা এ সময়ে সৰ্ব্বেতোভাবে প্রচলিত নাই। ইংরাজীর প্রভাব সমাজে প্রবেশের পূর্বেই সমাজ আপন হইতে শাস্ত্রকারদের সম্মতিক্রমে বা নিয়োগক্রমে আপনার ব্যবস্থা আপনিই পরিবর্তিত করিয়া লইয়াছে। মনুর সময়ে চারিটি মুখ্য বর্ণ ও বোধ করি বৃহুতর সঙ্কর বর্ণ বিদ্যমান ছিল। সেই চারিটি মুখ্যবর্ণের মধ্যে এখন কেবল ব্রাহ্মণই বিদ্যমান, ক্ষত্রিয়-বৈশ্বের লোপ হইয়াছে। শৃত্রের নাম আছে, কিন্তু সামাজিক অবস্থা উন্নত হইয়াছে। বলা বাহুল্য, শূত্রের এই সামাজিক উন্নতি ইংরাজী শিক্ষার বহু পূৰ্ব্বেই ঘটিয়াছিল। চারিটি আশ্রমের মধ্যে কেবল গৃহস্থাশ্রমটাই বৰ্ত্তমান আছে। ব্রহ্মচৰ্য্য ও বানপ্রস্থের বিলোপ হইয়াছে। ভিক্ষু আছে, কিন্তু সে মন্থর ভিক্ষু নহে। সে বোধ