পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : বর্ণাশ্ৰমধৰ্ম্ম vర్సిర్సి আমাদের শাস্ত্রে যাহা লোকস্থিতি’র সহায়, তাহারই নাম ধৰ্ম্ম । আদর্শ বিভিন্ন সমাজে বিভিন্নরূপ ; কিন্তু এই বিভেদের জন্য কোন সমাজকে গালি দেওয়া সঙ্গত নহে। সমাজ অতি বৃহৎ পদার্থ—ইহা স্তুতি নিন্দার অতীত। নদ-নদীর গতির মত, জ্যোতিষ্কগণের গতির মত সমাজের গতিও কাহারও স্তুতি নিন্দার অপেক্ষা না করিয়া আপন পথে চলিয়া যায় । আমাদের ব্যবস্থার পক্ষে একটা কথা বলিবার আছে। সচরাচর বলা হয়, এদেশের লোকে Dignity of labour—পরিশ্রমের গৌরব বুঝে না। আমার বিশ্বাস ঠিক উণ্ট । আমাদের বিশ্বাস—“স্বধৰ্ম্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধৰ্ম্মে ভয়বিহ” । ইহার অর্থ—আমি যে কৰ্ম্মে প্রেরিত ও নিযুক্ত হইয়াছি, তাহা অপেক্ষা গোরক্লর কৰ্ম্ম আমার পক্ষে আর নাই। কৰ্ম্ম মাত্রই মহৎ—যদি তাহ যথাযথরূপে সম্পাদিত হয়। অন্যের চোখে আমার কৰ্ম্ম নিন্দিত হউক, তাহাতে বড় আসে যায় না ;—আমার নিকট আমার কৰ্ম্ম গৌরবের সামগ্ৰী—ইহাই যদি আমরা জীবনে সম্পাদন করিয়া যাইতে পারি, তাহা হইলেই আমার জীবন সার্থক হইবে। আমার বোধ হয়, এই ভাবটা আমাদের দেশে অতি ইতর লোকের মধ্যেও বিদ্যমান আছে । তাহাদের মনে উচ্চ আকাঙ্ক্ষা নাই ; কিন্তু আপন কৰ্ত্তব্য সম্পন্ন করিতে পারিলেই আপন জীবন সার্থক হইবে, এরূপ বোধই এদেশে সাধারণ নিয়ম। চাষার ছেলে চাষার কাজকে হীন কাজ মনে করে না ; তাতী তাতীর কাজকে ঘৃণা করে না— বস্তুত গৌরবেরই বিষয় ও শ্লাঘার বিষয়ই মনে করে। সেই কাজ না করিলেই তাহার ‘জাতি যায়—তাহার ‘স্বধৰ্ম্ম পালিত হয় না। একজন ব্রাহ্মণ তাহার ‘স্বধৰ্ম্মে’— তাহার ‘জাতিব্যবসায়ে’ যেরূপ গৌরব বোধ করেন, একজন চাষা তাহার ‘স্বধৰ্ম্মে’— তাহার ‘জাতিব্যবসায়ে তাহার অপেক্ষা কম গৌরব বোধ করে, তাহা মনে হয় না। যে ব্যক্তির ধারণা আছে, আমি রাজমন্ত্রিত্ব পাইবার অধিকারী, তবে দৈবগত্যা বা অন্যের ষড়যন্ত্রের ফলে আমাকে কারখানায় মজুরি করিতে হইতেছে, তাহার স্বধৰ্ম্ম পালনে—মজুরি কৰ্ম্মে অনুরাগ হইতেই পারে না। এই ভাবটাকে আমি অতি উন্নত ভাব মনে করি। সেদিন শ্ৰীযুক্ত বিপিনচন্দ্র পাল মহাশয় বলিয়াছিলেন, বিশ্বরূপ দর্শনের পূৰ্ব্বে মনুষ্য নিষ্কাম ধৰ্ম্ম পালনে সমর্থ হয় না। ঠিক কথা ! বিশ্বরূপ দৰ্শন সকলের সাধ্য নহে ; সেরূপ সৌভাগ্যশালীর সংখ্যা অঙ্গুলিমেয়। কিন্তু নিষ্কাম ধৰ্ম্মের আদর্শ সম্মুখে রাখিয়া তাহার নিকট পৌছিতে পারে - এবং এতদ্দেশের কৃষক ও শ্রমজীবী এই নিষ্কাম ধৰ্ম্মের আদর্শের প্রতি যতটা অগ্রসর হইতে পারিয়াছে, ততটা আর কোন দেশে হইয়াছে বোধ হয় না । বস্তুতই আমাদের দেশে প্রত্যেক শ্রমজীবীর জীবনে এই মহান আদর্শ প্রতিবিম্বিত দেখি। যখন দেখিতে পাই, গ্রীষ্মের পর বর্ষা, বর্ষার পর শীত যাইতেছে, প্রকৃতির যাবতীয় অত্যাচার অকুষ্ঠিত ভাবে সহ করিয়া দরিদ্র কৃষক বৎসরের পর বৎসর তাহার ক্ষেতের টুকরাটিতে পরিশ্রম করিতেছে—কোন বার ফল পায়, কোন বার পায় না ৮ কোন দিন উদর পূর্ণ হয়, কোন দিন হয় না-কোনরূপ রাজদরবারে বসিবার উচ্চ আকাঙ্ক্ষা উহাকে উত্তেজিত করিতেছে না, গ্লাড ষ্টোন হইবার সে কখনও স্বপ্ন দেখে না, তাহার অবসাদ দূর করিবার জন্য ও উত্তেজনা বিধানের জন্য চা নাই, মদ নাই,