পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V58 e রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র শৃঙ্খলমুক্ত বৰ্ব্বরতা ; তখন প্রাচীন রোম-সাম্রাজ্যের অট্টালিক ভাঙ্গিতেছে। ইউরোপের সেই তামস যুগ। পরে নূতন ইতিহাসের নূতন পরিচ্ছেদের আরম্ভ— নূতন নূতন খণ্ড রাজ্য তখন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ইউরোপের এই মধ্যযুগ । এই সময়ে সুবিখ্যাত ফিউডাল তন্ত্রের উৎপত্তি। ফিউডাল তন্ত্রের অর্থ কি ? নবাগত বিজেতা বৈদেশিক রাজা আসিয়া প্রজার সমস্ত ভূসম্পত্তি একেবারে আত্মসাৎ করিলেন। তার পর সেই ভূসম্পত্তি আপনার আশ্রিত ও অনুগতগণকে বণ্টন করিয়া দিলেন। রাজা দাতা ও প্রজা গ্রহীতা । দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে একটা চুক্তি নির্দিষ্ট হইল। দাতা প্রতিবেশীর সঙ্গে চিরদিন যুদ্ধ করিবেন। গ্রহীতা আপনার জীবন ও আপনার শোণিত দিয়া বিনা বাক্যব্যয়ে দাতার সাহায্য করিতে প্রতিশ্রত থাকিবেন । র্যাহারা জমির বড় বড় টুকরা ভাগে পাইলেন, তাহারা আবার সেইরূপ চুক্তিতে আবদ্ধ করিয়া আপন অধীন ভৃত্যবর্গকে জমি বঁটিয়া দিলেন। শেষ পর্য্যন্তু দাডাইল এই, যাহার এক টুকর জমি আছে, তাহার জীবনের প্রধান কাৰ্য্য যুদ্ধ। নিজের জন্য নহে, পরের - জন্য, শেষ পর্য্যন্ত রাজার স্বাৰ্থ সাধনের জন্য ইউরোপ একটা বিশাল সমর ক্ষেত্রে পরিণত হইল। রাজায় রাজায় যুদ্ধ—তাহাদের খেয়ালের মর্য্যাদা রাখিবার জন্য যুদ্ধ। প্রজাসাধারণ অস্ত্রধারী ভূতিভুকৃ সৈনিক ও ভৃত্য ; তাহাদের প্রধান কাৰ্য্য রাজাজ্ঞায় দেহপাত ও জীবন দান। ইউরোপের মধ্যযুগে মনুষ্যজীবনের প্রধান কাৰ্য্য যুদ্ধ। মহন্ত মাত্রেই তখন যোদ্ধা ও অস্ত্রধারী সৈনিক। যে যুদ্ধ করিতে জানে না, সে মানুষের মধ্যে গণ্য হইত না। কেবল যুদ্ধের সময়ে রাজার আদেশে দেহপাতে প্রতিশ্রত থাকিয়াই প্রজ মুক্তি পাইল না। রাজা তাহার পদদ্বয়ে শিকলের উপর শিকল পরাইয়া ক্ষান্ত থাকিলেন না। তাহার অন্তঃশরীরেও বন্ধনের উপর বন্ধন করিলেন। রাজা শাস্তা, রাজা বিচারক, রাজা ব্যবস্থাপক, রাজার আদেশের নাম আইন। কেবল তাহাই নহে—রাজা গুরু, রাজা শিক্ষক, রাজা উপদেষ্ট । রাজা জ্ঞানের পন্থা দেখাইয়। দিবেন, রাজা ধর্মের পন্থা দেখাইয়া দিবেন, রাজা মুক্তির পন্থা দেখাইয়া দিবেন। প্রজাকে সেই পথে চলিতে হইবে—নতুবা মঙ্গল নাই। ধৰ্ম্মযাজক রাজশক্তির সহকারী পোপ এবং কৈসার উভয়েই পরদেবতার মরদেহে অবতার। শাস্ত্রের ব্যাখ্যা রাজা করিবেন, ধৰ্ম্মের ব্যাখ্য' রাজা করিবেন। নীতির পথ রাজার আদেশে নিরূপিত হইবে। প্রজা যদি মানিয়া চলে, তাহার পক্ষে মঙ্গল, নতুবা তাহার নশ্বর জীবনের সার্থকতা নাই। তাহাকে পোড়াইয় ফেলাই যুক্তিসিদ্ধ। আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস এইরূপে আরম্ভ হইয়াছে। এবং ইহাকে যদি স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতা বলিতে -চাও, শব্দশাস্ত্রের পরিবর্তন করিতে হইবে। আরম্ভ এইরূপ, কিন্তু এই আরম্ভের পরিণতি কোথায়? রাজা মনুষের আত্মাকে লুপ্ত করিতে চাহেন, কিন্তু মানুষের আত্মা লুপ্ত হইবার পদার্থ নহে। মানুষের আত্মা এক অপরূপ জিনিস। মানুষের আত্মাকে স্বাভস্ত্র্যের মুক্ত বায়ুমার্গে বিচরণ করিতে দাও। সে মুক্ত বায়ু ত্যাগ করিয়া কারাগারে আরামে নিদ্র। যাইতে থাকিবে। তাহাকে জ্বলিত ও